ঢাকাই বস্ত্র
ঢাকা প্রদেশে যে সকল স্থানে বস্ত্র
প্রস্তুত হয় তন্মধ্যে মলমলখাস, সরকার আলি, ঝুনা, রঙ্গ, আব-রওয়াঁ, খাসা, শবনম,
আলাবলী, তাঞ্জেব, তরন্দম, সরবন্দ, সরবতি কমিয, ডোরিয়া, চারখানা এবং জামদানী, এই
কএক প্রকার বস্ত্র সর্ব্বপ্রসিদ্ধ।
মলমল খাস মুসলমান রাজাদিগের আধিপত্য
সময়ে রাজপরিবারেরা ব্যবহার করিত, তত্প্রযুক্ত ইহা খাস উপাধি প্রাপ্ত হইয়াছে। ইহার টানায়
১৮০০ সূত্র থাকে, এবং এক অর্দ্ধ(আধি) থানের পরিমান ৮ তোলা – আনা মাত্র!!! ঐ থান আনায়াসে এক অঙ্গুরীর মধ্যদিয়া চালিত
হইতে পারে। ইহা বপনে ছয় মাস কাল ব্যয় হয়, এবং ইহার মূল্য ১৫০ টাকা।
সরকার আলি পূর্ব্বাপেক্ষা মধ্যম।
রাজপ্রতিনিধিরা উহা ব্যবহার করিত, এবং ইহা টানায় ১৯০০ সূত্র থাকে।
ঝুনা বস্ত্র এমত অত্যন্ত সূক্ষ্ম যে
ইহা পরিধান করিলে শরীরোপি বস্ত্র আছে এমত বোধ হয় না। ইহার তুলনায়
গাজ নামে প্রসিদ্ধ বস্ত্রও অতি স্থূল জ্ঞান হয়। ইহার দুই হস্ত
প্রশস্ত বস্ত্রে ২০০০ টানার সূত্র থাকে। মুসলমান রাজমহিষীরা ও নর্ত্তকীরা এই
বস্ত্র ব্যবহার করেন, অন্যত্র ইহার ব্যবহার নাই। প্রাচীন
বৌদ্ধ-গ্রন্থে এই বস্ত্রের ব্যবহার স্ত্রীলোক-পক্ষে নিষেধ আছে। তাবার্ণিয়ার
সাহেব লেখেন যে মুসলমান রাজাদিগের আজ্ঞাক্রমে কোন বণিক এই বস্ত্র ক্রয় করিয়া
স্থানান্তর করিতে পারিত না।
রঙ্গ বস্ত্র পূর্ব্ববত্, কেবল বপনের
প্রথায় স্বতন্ত্র, ও ইহার টানায় ১২০০সূত্র থাকে।
আব রওয়াঁ অতি প্রসিদ্ধ বস্ত্র। ইহার তুল্য
স্বচ্ছ বস্ত্র আর কুত্রাপি নাই। ইহার টানায় ৭০০ সূত্রমাত্র থাকে। যবনেরা ইহার
স্বচ্ছতা স্রোতো-জলের তুল্যজ্ঞান করিয়া ইহাকে আব(বারি) রওয়াঁ(গতি বিশিষ্ট) উপাধি
দিয়াছেন। এই বস্ত্রেদ্দেশ্য কথিত আছে যে কোন সময়ে আওরঙ্গজেব
পাদশাহ স্বতনয়ার বর্ণ তাহার বস্ত্র ভেদ করিয়া প্রকাশ হইয়া ছিল দেখিয়া তাহাকে
তিরস্কার করাতে সে কহিয়াছিল, পিতঃ সপ্তস্তর বস্ত্র পরিধান করিয়াছি, তথাপি আমাকে
কেন তিরস্কার করেন।
খাসা বা জঙ্গল খাসা পূর্ব্বে
সোনারগাঁয়প্রস্তুত হইত। ইহা অন্যান্য মলমল অপেক্ষা ঘন, এবং অধিক প্রশস্ত। ৩ হস্ত
প্রশস্ত খাসা অপ্রাপ্য নহে।
শবনম। এই মলমল অতি
মনোহর। ইহা রজনী-যোগে তৃণময় ক্ষেত্রে বিস্তৃত করিয়া রাখিলে
শিশিরদ্বারা সিক্ত হইয়া পরদিবস প্রাতে অদৃশ্য হয়, ক্রমশঃ যত দিবা বৃদ্ধি হইতে থাকে
তত শিশির শুষ্ক হইলে তাহা পুণরায় দৃষ্টিগোচর হয়। সর্ব্বোত্তম
শবনমের টানায় ৭৮০ সূত্র থাকে।
স্থানাভাব
প্রযুক্ত আলাবলি তাঞ্জব ইত্যাদি বস্ত্রের
বিবরণ অধুনা বিবৃত হইল না। অবকাশমতে
এ বিষয়ের পরিশেষ ও ঢাকাই বস্ত্র ধৌত করণ প্রণালীর রীতি সম্বন্ধে পুনরায় যতকিঞ্চিত্
প্রকটিত হইতে পারে।
No comments:
Post a Comment