ষষ্ঠ অংশ
জেমস ডব্লিউ ফ্রে, অসকোস, উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক। তিনি বাঙলা সুবার পাটনার সোরা ব্যবসা সম্বন্ধে বিশদে ইতিহাস রচনা করেছেন. এই ইতিহাস যেমন মনোগ্রাহী, তেমনি বাঙলার ইতিহাস এবং প্রযুক্তি চর্চকদের আর শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার বিষয়. ব্রিটিশ আধিপত্য বিশ্লষণে নানান দিকগুলি এর আগে বিশদে বিশ্লেষিত হয়েছে, কিন্তু সেই আলোচনায় সোরার ভূমিকার কথা আর সেই উত্পাদনে বাঙলা সুবার পাটনার কথা খুব একটা উঠে আসে নি। বলা দরকার প্রাচীন কাল থেকেই ১৯০০ সাল পর্যন্ত পাটনা বিশ্ব সোরা বাজারে বিশাল এক ভূমিকা নিয়েছে. এই ইতিহাস আমরা বিশদে এই প্রবন্ধে কয়েকটি অংশে ভাগ করে দেখব. এবারে ষষ্ঠ অংশ.
বিশ্বেন্দু
১৭২০ থেকে ১৭৩০ পর্যন্ত ফরাসি
কোম্পানি Compagnie des Indes পাটনা সোরা ব্যবসায়ে মাথা গলাতে শুরু করে। এর পর থেকে
ইওরোপের সঙ্গে বাঙলার বাণিজ্য পরিমান গুণিতক হারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। ফরাসি
ব্যবসায়ী(ফ্যাক্টর) জোসেফ ফ্রান্সিস ডুপ্লে অন্য ইওরোপিয়দের সঙ্গে নিয়ে সোরা
ব্যবসায় ইওরোপিয় একচেটিয়া কারবার গড়ে তোলেন। ১৭৩৬এ অসমিয়া
বণিদের থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে সোরা কোনার চুক্তি করে এই তিন রাষ্ট্রশক্তি। এই চুক্তিতে
ডেন, সুইস এবং অস্ট্রিয় বণিকদের বাদ রাখা হয়। আদতে ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানিগুলি ভারতে ব্যবসা করা তিন ভাই একত্রিত হয়ে পরস্পরের সঙ্গে স্বার্থ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়(এদের মালিকানা ছিল কয়েকজন ব্যবসায়ীদের হাতে)। ভিওসি ডুপ্লে
পরিকল্পনায় বাদ সেধে সোরা পরিবহনের জাহাজগুলি নিজেদের অধিকারে আনে। ১৭৪০ পর্যন্ত
ভিওসিরই ভারতের সোরা ব্যবসায় প্রধান ভূমিকা ছিল।
আলিবর্দি খাঁ(১৭৪০-১৭৫৬) বাঙলার
সুবাদার হয়েই বিদেশি বণিকদের পাটনা বাজারের দখলদারি শেষ করার উদ্যম নেন, যাতে
দক্ষিণ ভারতে ইওরোপিয় লড়াই শেষ হয়। এছাড়া ডাচেদের মালাবারের গোলমরিচের
ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেরও চেষ্টা করতে থাকেন আলিবর্দি। ভারত এবং
বাঙলার নানান পণ্যের ব্যবসার ওপর আধাএকচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেন তিনি। আমীরচাঁদ বাঙলা
সুবার প্রধান ব্যবসায়ী নিযুক্ত হন। ভাই দীপচাঁদ সিরাং(Syrang) জেলার ফৌজদার নিযুক্ত হলেন। ১৭৫০এ চাঁদ ভাইদের ব্যবসায় কোম্পানির
ধার দাঁড়াল ১.৬ মিলিয়ন রুপি। পলাশি পর্যন্ত সোরা ব্যবসার
নিয়ন্ত্রণ করতেন চাঁদ ভাইরা এবং ইরানের আর্মেনিয় বণিক খওজা ওয়াজিদ। খওজা সুবাদার
নিযুক্ত প্রধান ব্যবসায়ী। এছাড়াও ফরাসীদের এজেন্ট। আর ব্রিটিশদের চরম শত্রু।
১৭৫০এর দশকে ব্রিটিশ সোরা ব্যবসার
পরিমান ছিল বছরে ৫১ হাজার মন অথবা ২২৩৮ টন। পলাশির পর শুধু ভারত নয়, বিশ্বের
ইতিহাসই উল্টপাল্টে গেল। পলাশীর পর মির জাফর কোম্পানিকেই সোরা ব্যবসার একচেটিয়া
অধিকার দিলেন। চন্দননগরে ফরাসী কুঠীর ওপরেও আগাত হানে ব্রিটিশ শক্তি। সোরা ব্যবসা
থেকে সরে যায় ফরাসিরা। মির জাফরের প্রধান ব্যবসায়ী খওজা ভিওসির সঙ্গে চক্রান্ত
করতে শুরু করে। ব্রিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধে ভিওসি ১৭৫৯এর যুদ্ধে হেরে যায়। এর পর থেকে ইওরোপে
ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া প্রত্যেকটি সোরা ভর্তি জাহাজ ছিল ব্রিটিশদের। ব্রিটেন
বিশ্বের ৭০ শতাংশ সোরার মালিক হয়ে বসার প্রভাব পড়ল সাত বছরের যুদ্ধ(১৭৫৬-১৭৬৩)সহ
ইওরোপিয় নানান যুদ্ধে।
No comments:
Post a Comment