(ছবিতে অম্বরের জয় সিং এবং মারোয়াড়ের গজ সিং)
এই অবমাননা এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ওপর আঘাত সহ্য না করতে পেরে আওরঙ্গজেব মির্জা রাজা জয় সিংহকে দায়িত্ব দিলেন শিবাজীকে সায়েস্তা করার জন্যে। জয় সিংহ কাছোয়া রাজপুতদের নেতা, এবং আওরঙ্গজেবের সিংহাসন দখলের লড়ায়ের অন্যতম সেনাপতি এবং আওরঙ্গজেবের ঘনিষ্ঠতমদের মধ্যে অন্যতম। পুরন্দর পাহাড়ের দুর্গে একাদিক্রমে দুবছর ঘেরাও হয়ে থাকার পর শিবাজী আত্মসমর্পন করে মুঘল সাম্রাজ্যের করদ রাজা হয়ে সম্রাটকে রাজস্বের অংশ তুলে, প্রণামী ইত্যাদি দিয়ে, দুর্গ ইত্যাদি সমর্পন করে মুঘলদের পক্ষে যুদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি যখন এই আপাত আত্মসমর্পনের নাটক করছেন, তখন আসলে মুঘল বিরোধিতার সলতে পাকানো চলছে।
---
শিবাজী আওরঙ্গজেবের দরবারে গেলেন ১৬৬৬ সালের মে মাসের গরমে। সম্রাটকে আত্মসমর্পনের নিদর্শন হিসেবে নানান ধরণের উপঢৌকন দিলেন এবং মাথা নামিয়ে সম্মানও জানালেন - যা একজন শত্রু থেকে অভিজাত হওয়া মানুষের করা দরকার তিনি তাইই করলেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পর্কটা বিষিয়ে গ্যাল। বহু ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেব-শিবাজীর একবার মাত্র ঘটা মুখোমুখি আলাপচারিতা নিয়েও লিখেছেন, কিন্তু কারোর বর্ণনা কারোর সঙ্গেও মেলেনা। তবে অধিকাংশই একটা তুচ্ছ কারণ উল্লেখ করেছেন - শিবাজীকে নিচুশ্রেণীর অভিজাতদের সঙ্গে দাঁড়াতে বলায়, তিনি খোলা দরবারে গোলমাল শুরু করে দ্যান। এক ঐতিহাসিক বলেছেন শিবাজী দরবারে শুয়ে পড়ে পশুর মত গর্জন করছিলেন, আরেকজন বলেছেন তিনি পাগলের মত আচরণ করছিলেন। আওরঙ্গজেব দরবারি প্রথাভঙ্গের শাস্তিস্বরূপ তাকে গৃহবন্দী করে রাখার নির্দেশ দ্যান।
---
শিবাজী আওরঙ্গজেবের দরবারে গেলেন ১৬৬৬ সালের মে মাসের গরমে। সম্রাটকে আত্মসমর্পনের নিদর্শন হিসেবে নানান ধরণের উপঢৌকন দিলেন এবং মাথা নামিয়ে সম্মানও জানালেন - যা একজন শত্রু থেকে অভিজাত হওয়া মানুষের করা দরকার তিনি তাইই করলেন। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পর্কটা বিষিয়ে গ্যাল। বহু ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেব-শিবাজীর একবার মাত্র ঘটা মুখোমুখি আলাপচারিতা নিয়েও লিখেছেন, কিন্তু কারোর বর্ণনা কারোর সঙ্গেও মেলেনা। তবে অধিকাংশই একটা তুচ্ছ কারণ উল্লেখ করেছেন - শিবাজীকে নিচুশ্রেণীর অভিজাতদের সঙ্গে দাঁড়াতে বলায়, তিনি খোলা দরবারে গোলমাল শুরু করে দ্যান। এক ঐতিহাসিক বলেছেন শিবাজী দরবারে শুয়ে পড়ে পশুর মত গর্জন করছিলেন, আরেকজন বলেছেন তিনি পাগলের মত আচরণ করছিলেন। আওরঙ্গজেব দরবারি প্রথাভঙ্গের শাস্তিস্বরূপ তাকে গৃহবন্দী করে রাখার নির্দেশ দ্যান।
এই ঘটনার হাতে গোনা দিনের মধ্যেই শিবাজী তার ন বছরের শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই আগরার নজরবন্দী গৃহ থেকে পালিয়ে যান। যতদূরসম্ভব শিবাজী নিরাপত্তারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে পালান, যদিও কল্পনার শিশুপাঠ্য হিসেবে ব্রাহ্মণদের ফল বিতরণের ঝুড়িতে লুকিয়ে পালানোর গল্প বাজারে বেশ চালু। তিনি ভবঘুরে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ আর তার পুত্র ধরেন তাঁর স্ত্রীর রূপ যতক্ষণনা তাঁরা মুঘল সীমান্ত পার হচ্ছেন। ১৬৬৯ সালের পর থেকে শিবাজী মুঘলদের যে সব সম্পত্তি দিয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলির ওপর ভীষণ প্রত্যাঘাত হানেন।
ঘটনা যাই হোক না কেন মুঘল-শিবাজী সম্পর্ক আর জোড়া লাগে নি, আওরঙ্গজেব শিবাজীকে মুঘল রাষ্ট্রের সেবায় লাগাতে পারেন নি। এক নজরে এই ব্যর্থতার কোন ব্যখ্যা নেই, কারণ প্রজন্মের পর প্রজন্ম হিন্দু রাজপুতেরা মুঘলদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে মুঘল অভিজাতদের মধ্যে অন্যতম রূপে গণ্য হয়েছে। দরবারে নাটক করে শিবাজী কেন মুঘল বশ্যতা স্বীকার করলেন না, সেই ধাঁধা সমাধান করতে গিয়ে আমাদের সবার আগে হিন্দুদের এক গাঁটারির মধ্যে ফেলে এক দেহী হিসেবে দেখার ঔপনিবেশিক প্রবণতা থেকে বেরতে হবে। সেযুগে দরবারে ঢোকার ছাড়পত্র পাওয়া অধিকাংশ রাজপুত অভিজাত শিবাজীকে নব্য অমার্জিত ভুঁইফোঁড় হিসেবে গণ্য করছেন, যিনি মুঘল প্রথা অনুযায়ী দরবারি আদাবে অনভ্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে শিবাজী অন্যান্য মুঘল অভিজাতর মত পার্সি দরবারি প্রথা সম্বন্ধে অজ্ঞ ছিলেন। শিবাজীর পিতা বিজাপুরের আদিলশাহী রাজ্যের অভিজাত হলেও শিবাজীকে তার মা, জিজাবাঈ বড় করেছেন দরবারি কৃষ্টি থেকে বহুদূরে। নিজের বুদ্ধি ক্ষমতার ওপর অগাধ আস্থার পাশাপাশি, শিবাজী, রাজপুতদের মত মুঘল দরবারের আভিজাত্যিক প্রথাগুলি মানিয়ে নিতে না পারার জন্যেই মুঘল বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
No comments:
Post a Comment