যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবিতে অজিত সিংহ)
(ছবিতে অজিত সিংহ)
কিন্তু আওরঙ্গজেব ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। তিনি অজিত সিংহকে জাল রাজা ঘোষণা করলেন, এবং পথের অনাথ শিশু, যার নামটা খুব গুরুত্বপুর্ণ মহম্মদি রাজকে যশোবন্তের পুত্র বলে ঘোষণা করলেন। চির অনুগত জয়পুর ছাড়া সারা রাজপুতানা রাঠোর সিংহাসনে এই অজ্ঞান্তকুলশীলকে বসাবার প্রতিবাদে ফেটে পড়ল। মহারাজা রাজ সিংহ অনাথের পক্ষে লড়লেন। যুদ্ধে উভরপক্ষের ক্ষয় ক্ষতি হতে লাগল। মহারানা অগম্য পাহাড়ে আশ্রয় নিলেন। শেষ পর্যন্ত আওরঙ্গজেবের চতুর্থ পুত্র আকবর বিদ্রোহ করে(১৬৮১ জানুয়ারি) রাজপুতদের সঙ্গে যোগ দ্যায়। কিছু দিন আওরঙ্গজেব হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন; কিন্তু তার সুচতুর তীক্ষ্ণবুদ্ধি তাকে বাঁচিয়ে দ্যায় – তিনি আকবরের একটি মিথ্যা চিঠি রাজপুতদের দেখান, যার ফলে আকবরের বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, আকবর তার পরিবার, সম্পত্তি ইত্যাদি রেখে পালিয়ে যান, মারাঠা দরবারে, ভরসাপ্রদ দুর্গাদাসের সাহায্যে(মে ১৬৮১)। এর পরে রাজপুতেরা মুঘল বাহিনী ত্যাগ করে। এরপরে আর কোন প্রধান রাজপুত সেনাকে মুঘল সেনাবাহিনীতে দেখি না। তাকে বুন্দেলাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। আওরঙ্গজেবের জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত রাঠোরেরা লড়াই চালিয়ে যায়। এই পর্যন্ত আওরঙ্গজেবের স্থিতিশীল উত্তরভারতের জীবন শেষ হল।
দাক্ষিণাত্যে আওরঙ্গজেবের শাসন
এরপরে ফলহীন ২৬ বছরের দাক্ষিনাত্য অভিযান ঘটল, মারাঠাদের সঙ্গে তিক্তযুদ্ধ করে স্বাস্থ্য নষ্ট করলেন, সেনাবাহিনীর মনোবল নষ্ট হল, রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস হল। এই অভিযানে অংশনেওয়া প্রত্যেকেই আওরঙ্গজেবের ব্যর্থতা দেখলেন, মানসিকভাবে শ্রান্ত হয়ে পড়েও তাঁর সঙ্গে থাকা প্রত্যেকেই তাঁকে শেষ পর্যন্ত সুরক্ষা দিয়েছেন, এবং এই সুরক্ষা পেয়ে তিনি আরও একবগগা হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ৯০ বছরের বৃদ্ধ মানসিক বিপর্যন্ত হয়ে, অন্ধকারে তলিয়ে গিয়ে নিজের পরিবার আর সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে কবরের চির নিদ্রায় আশ্রয় নিলেন।
এরপরে ফলহীন ২৬ বছরের দাক্ষিনাত্য অভিযান ঘটল, মারাঠাদের সঙ্গে তিক্তযুদ্ধ করে স্বাস্থ্য নষ্ট করলেন, সেনাবাহিনীর মনোবল নষ্ট হল, রাষ্ট্রের সম্পদ ধ্বংস হল। এই অভিযানে অংশনেওয়া প্রত্যেকেই আওরঙ্গজেবের ব্যর্থতা দেখলেন, মানসিকভাবে শ্রান্ত হয়ে পড়েও তাঁর সঙ্গে থাকা প্রত্যেকেই তাঁকে শেষ পর্যন্ত সুরক্ষা দিয়েছেন, এবং এই সুরক্ষা পেয়ে তিনি আরও একবগগা হয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত ৯০ বছরের বৃদ্ধ মানসিক বিপর্যন্ত হয়ে, অন্ধকারে তলিয়ে গিয়ে নিজের পরিবার আর সাম্রাজ্যকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে কবরের চির নিদ্রায় আশ্রয় নিলেন।
শিবাজীর পুত্র শম্ভু তার পিতার থেকেও অকুতোভয় ঘোড়সওয়ার এবং ফলাফলের দিকে লক্ষ্য না রেখেই কাজ করতেন। দাক্ষিণাত্যে যত সেনা বাহিনী পাঠানো হয়েছে বা শাহজাদা এসেছেন তারা তো বিজয় পানই নি, বরং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন এবং দক্ষিণের রাজাদের থেকে ঘুষ নিয়েছেন যুদ্ধ না করা জন্যে। ফলে ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধ ঘোষনা করা ছাড়া আওরঙ্গজেবের আর কোন উপায় ছিল না। ৮ সেপ্টেম্বর ১৬৮১তে তিনি আজমেড় থেকে দাক্ষিনাত্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন – এর পরে তিনি জীবিত বা মৃত কোন অবস্থাতেই উত্তরভারতে ফিরে আসেন নি। আওরঙ্গাবাদে পৌঁছলেন ১৬৮২ সালের ২২ মার্চ। ১৬৮৩র ১৩ নভেম্বর তিনি আহমদনগরে পৌঁছলেন, যে শহরে তিনি তেইশ বছর পরে ফিরে আসবেন মরার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে। তার দুই পুত্র এবং কিছু অভিজাতকে বিজাপুর আর মারাঠাদের বিরুদ্ধে পাঠানো হল। বড় সংখ্যায় শম্ভুর দুর্গ আধিকৃত হলেও লাভের লাভ কিছু হল না। রামঘাট গিরিখাতে সাহজাদা মুয়াজ্জমের বাহিনী(সেপ্ট ১৬৮৩-মে ১৬৮৪) বিসাল ক্ষয়ক্ষতি করে ফিরে আসে।
No comments:
Post a Comment