(ছবি খাজ্বয়া যুদ্ধে দুই বাহিনী মুখোমুখি)
সিংহাসনে বসেই আওরঙ্গজেব তার পলাতক দুই ভাই দারা শুকো এবং শাহ সুজাকে নিউট্রালিজ করতে উদ্যোগী হলেন।
দারা পিছনে আওরঙ্গজেব লেগে থাকলেন মাসের পর মাস। লাহোর থেকে তাকে তাড়িয়ে মুলতানে এবং তারপরে আরও দক্ষিণে সিন্ধু পর্যন্ত তাড়িয়ে নিয়ে গেলেন। পালিয়ে পালিয়ে থাকার সময় দারা ধরা পড়ার ভয়ে ছোট থেকে ছোট হতে থাকা বাহিনীকে নিয়ে গভীর জঙ্গল কেটে এগোতে থাকলেন মিঠে জলের স্রোতের থেকে দূর দিয়ে। তার সমর্থকেদের রক্তস্রাব বইয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত গুজরাটে আশ্রয় নিলেন। ১৬৫৮র সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দারার পিছু ধাওয়া তার কিছু বিশ্বস্ত সেনা নায়কদের হাতে ছেড়ে আওরঙ্গজেব দিল্লি ফিরে শাহ শুজার পিছন নিলেন।
আগের বছর শাহ শুজা প্রচণ্ড ব্যস্ত থেকেছেন। ১৬৫৭য় শাহজাহানের অসুস্থতার খবরে শুজা নিজেকে ভারতেশ্বর দাবি করে আবুল ফাউজ (বিজয়ীদের পিতা) নাসরুদ্দিন(বিশ্বাসীদের রক্ষক) মহম্মদ তৃতীয় তিমুর দ্বিতীয় আলেকজান্ডার শাহ শুজা বাহাদুর গাজি উপাধি নিলেন। কিন্তু শাহ শুজার মুঘল ভারত শাসনের স্বপ্ন খুব বেশি দিন রইল না। ১৬৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সমুগড়ের যুদ্ধের(সে বছরের মে মাসে) আগে সে লড়াইতে মুরাদ আর আওরঙ্গজেবের যৌথ বাহিনীর তাড়ায় দারা লাহোরে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন, পলায়নপর দারা মুখোমুখি হলেন শুজা বেনারসের কাছে দারার বড় ছেলে শুলেইমান শুখোর নেতৃত্বে এবং চরমভাবে পর্যুদস্ত হলেন। ঐতিহাসিকদের মতে যুদ্ধক্ষেত্রে এত রক্ত বয়েছিল যে সেই মাটি যেন রক্ত গোলাপের মত(টিউলিপ) মত ঝকমক করছিল। ১৬৫৮ সালের মে মাসে শুজাকে চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে ভারতের পূর্ব দিকের সুবার দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন, যদি শুজা মাথা নিচু করেন। শুজা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধের জন্যে তৈরি হলেন।
এলাহাবাদের উত্তরপশ্চিমের খাজ্বয়া যুদ্ধ ক্ষেত্রে দুইভাই মুখোমুখি হলেন ১৬৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে। শাহজাহানের অনুগত রাজপুত যশোবন্ত সিং শেষ মুহূর্তে আওরঙ্গজেবকে ছেড়ে চলে গেলেও দুগুণ সেনা নিয়ে আওরঙ্গজেব সুজাকে আক্রমন করলেন। প্রচণ্ড ভীষণ যুদ্ধতে শোনা যায় আওরঙ্গজেব তার হাতির পিছনের দু পা বেঁধে রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে যুদ্ধে ভয় পেয়ে সে না পালায়। আওরঙ্গজেবের লেগে থাকা এবং নেতৃত্ব তার সেনাদের উদ্বুদ্ধ করে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ জয়ের দিকে নিয়ে যায়। শুজা পালিয়ে যান। এরপর দেড় বছর ধরে (মীরজুমলার নেতৃত্বে) আওরঙ্গজেবের বাহিনী শুজাকে পূর্ব থেকে পূর্ব দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ভারতের বাইরেই আশ্রয় নেন। ১৬৬০ সালে শুজা ঢাকা থেকে নদীপথে বার্মায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে যান। এবং গোটাপরিবার আরাকান রাজের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় - হয়ত আরাকান রাজের ভয় ছিল মুঘল সম্রাট সেই সুযোগে তার রাজ্য আক্রমন করতে পারেন(তবে আরাকান রাজার সঙ্গে শুজার গণ্ডগোলের এবং মৃত্যুর কারণ আজও জানা যায় না)।
No comments:
Post a Comment