যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবিতে পুত্র আজমশাহের সঙ্গে বাজপাখি হাতে সিংহাসনে আওরঙ্গজেব)
(ছবিতে পুত্র আজমশাহের সঙ্গে বাজপাখি হাতে সিংহাসনে আওরঙ্গজেব)
<বছর দুয়েক আগে আহকমইআলমগিরি অনুবাদ করি আওরঙ্গজেবের জীবনী আর চরিত্র এই দুই অধ্যায় বাদ দিয়ে। আজ সেই অধ্যায় দুটো ধরলাম>
আওরঙ্গজেবের জীবন
প্রথম জীবন
প্রথম জীবন
মুহিউদ্দিন মহম্মদ আওরঙ্গজেব, শাহজাহান এবং প্রখ্যাত রাজ্ঞী মুমতাজ মহলের তৃতীয় সন্তান, ২৪ অক্টোবর ১৬১৮ সালে আজকের(যদুনাথের সময়ে) বম্বে প্রেসিডেন্সির(আজকের গুজরাট) পাঁচ মহল তালুক, গোদরা-রতলম রেলস্টেশন শহরে, দোহাদএ জন্মান। তার প্রথম জীবনের অসম সাহসিকতার পরিচয় পাই ২৮ মে ১৬৩৩ সালে আগরা দুর্গে তার পিতার চোখের সামনে। (সকালে যমুনা তীরে হাতির সঙ্গে কুচের সময়) তীব্র বেগে ছুটে আসা একটি হাতির মুখোমুখি হন তিনি। পশুটি তার দিকে ছুটে এলেও তিনি তার ঘোড়াকে স্থিরভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে সক্ষম হন এবং হাতির কপাল লক্ষ্য করে হাতে ধরা বল্লমটি ছুঁড়ে মারেন। হাতির দাঁতের আঘাতে ঘোাটি মাটিতে পড়ে গেলেও আওরঙ্গজেব, ঘোড়ার জিন ছেড়ে মাটিতে ঠিক সময়ে লাফিয়ে নামেন এবং আবারও হাতিটির মুখোমুখি হন। সেই সময়ে সহায়কেরা ছুটে এসে হাতিটিকে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং শাহজাহাপুত্র বিপদমুক্ত হন। পাদশা অকুতোভয় সন্তানকে সোনা ওজন করে উপহার দেন।
১৬৩৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর, ১৬ বছর বয়সে আওরঙ্গজেব সেনাবাহিনীর ন্যুনতম আমলাদারি, একহাজারি মনসবদার হন। সেপ্টেম্বরে তাকে রণাঙ্গনের অবস্থা হাতেকলমে বুঝতে উরছার বুন্দেলা প্রধানের(যিনি ঐ বছরই মারা যান) বিরুদ্ধে যুদ্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঝুঝার সিং এবং তার পুত্র বিক্রমজিতের সঙ্গী করে দেওয়া হয়। ১৬৩৬এর ১৪ জুলাই থেকে ২৮ মে ১৬৪৪ আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্যের সুবাদার নিযুক্ত হন এবং সম্রাটকে দেখতে বহুবার উত্তরভারত আসেন। তিনি বগলানা জয় করেন এবং তাঁর হাতে আহমদনগরের নিজামশাহীর পতন ঘটে। ৮ মে ১৬৩৭ সালে শাহ নাওয়াজ খান সাফাভির কন্যা দিলরাস বানুকে প্রথম বিবাহ করেন, পরে নবাব বাঈকেও বিবাহ করেন। তার জৈষ্ঠা কন্যা জেবুন্নিসা(জ ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৩৮) প্রথম শ্রেণীর কবি হিসেবে আজও পরিগণিত।
আওরঙ্গজেবের উন্নতিতে ঈর্ষান্বিত হয়ে সম্রাটের প্রশ্রয়ে জৈষ্ঠপুত্র দারা শুকো বার বার তাঁর কাজে হস্তক্ষেপ করছেন এই অভিযোগে তিনি রাজকীয় দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তীব্র অসন্তুষ্ট পাদশা তার সমস্ত দায়িত্ব ও সুযোগসুবিধে কেড়ে নেন। অপমানিত শাহজাদা কয়েকমাস আগ্রায় কাটান। শাহজাহানের জৈষ্ঠা এবং ঘনিষ্ঠ কন্যা জাহানারার পোড়াদেহ সেরে ওঠার খুশিতে আবার তার কেড়ে নেওয়া পদ ফিরিয়ে দেন। ১৬৪৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি গুজরাটের সুবাদার নিযুক্ত হন এবং তার সুশাসন সম্রাটের নজর কাড়ের এবং তাঁকে তিনি উপহারও দেন।
তৈমুরদের কব্জা থেকে বলখ এবং বাদাখশন উদ্ধার করতে তাকে মধ্য এশিয়ায় পাঠানো হয়। ৭ এপ্রিল ১৬৪৭ সালে কাবুল ছেড়ে তিনি ২৫ মে বলখ পৌঁছন এবং অপ্রতিহত যোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। রাজপুতেরা মুঘল সৈন্যবাহিনীর হয়ে বিপুল রক্ত ক্ষরণ করে; প্রচুর সম্পত্তির ক্ষয় ক্ষতি হয়; কিন্তু ভারতীয় সেনা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে হঠে না। কোন পক্ষেরই জয় হয় না। উভয়পক্ষেরই বিপুল ক্ষয় ক্ষতি হচ্ছে দেখে দুপক্ষই শান্তিচুক্তি করতে মরিয়া হয়ে ওঠে, ঠিক যেমনভাবে স্যর লেপেল গ্রিফিন আমীর আবদুর রহমান সঙ্গে যে ব্যবহার করেছিলেন, বলখের প্রাক্তন রাজা নজর মুহম্মদ খানও মুঘলদের সঙ্গে চুক্তি করতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন। শীতের ঠিক আগে আগেই আরও ভায়াবহ ক্ষতি এড়াতে ভারতীয় সেনা পিছিয়ে আসে। ভারতীয় রাজস্বের বহু কোটি টাকা ব্যয় হল কোন উপযোগিতা ছাড়াই। যে গুদামটি ছেড়ে আসে তাতে সে যুগের সাত লক্ষ টাকার সামগ্রী ছিল। বহু কোটি টাকার যঞ্জত্রপাতি বয়ে আনতে না পেরে যুদ্ধক্ষেত্রেই ফেলে দিয়ে আসে বাহিনী।
No comments:
Post a Comment