(ছবিতে ময়ুর সিংহাসন)
মুঘল সিংহাসন দখলের ইতিহাস বহুকাল ধরে ইয়া তাহত ইয়া তাবুত এই গোদা পার্সি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে। শাহজাহান তাঁর দুই ভাইকে হত্যার নির্দেশ দ্যান। ১৬২২ সালে খসরু এবং ১৬২৮ সালে শাহরিয়ারকে হত্যা করেন। একই সঙ্গে ১৬২৮ সালে ক্ষমতা দখল করার পরে দুজন ভাইপো আর দুজন পুরুষ খুড়তুতো ভাইকেও হত্যা করেন। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমান সূত্রে আন্দাজ করা যায় শাহজাহানের পিতা আওরঙ্গজেবের পিতামহ জাহাঙ্গির তার ছোটভাই ড্যানিয়েলকে হত্যা করেন(অনেকে বলে মদ্যপান করিয়ে)। এমন কি বাবর বা আকবরের সময়েও মুঘল পরিবারে ভাই এবং আত্মীয়দের মধ্যে হিংসক লড়ায়ের ইতিহাস বর্তমান।
যখন আওরঙ্গজেব এবং তার ভায়েরা পরস্পরের সঙ্গে লড়াই শুরু করার কথা ভাবছিল, সেটা কখন কিভাবে হবে, বা তার ফল কি ফলবে সে পরিকল্পনা তখন আন্দাজ করা যায় নি।
---
১৬৫৭ সালে শাহজাহান ৬৫ বছর যখন পূর্ণ করছেন তিনি কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষদের থেকে বেশি বছরই বেঁচেছেন। তবুও তার অসুস্থতা আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত। কেন তিনি হঠাতই মৃত্যুমুখে পড়লেন সে বিষয়ে, তার সময়ের লেখকেরা কেউই একমত হতে পারেন নি। ইতালিয় মুসাফির মানুচি তার মতই রঙ্গিন ভাষায় বললেন যে মাদক দ্রব্যের অতিসেবনেই তার রোগগ্রস্ততা। মানুচির দেশ থেকে আসা কারেরির মত বৃদ্ধাবস্থাতেও তাঁর প্রবল যৌনক্ষুধা ত্যাগ করতে না পারায় এই কাণ্ডটা ঘটেছে। বাস্তবিকভাবে হয়ত ব্লাডার বা নিত্যকৃত্য ইত্যাদির সমস্যার জন্যে তার অসুস্থতা ঘটা সম্ভব। যে কারণেই তাঁর অসুস্থতা হোক, বাস্তব হল সেই অসুস্থতার খবরই পুত্রদের মধ্যে এক বছর আগেই সিংহাসনে বসার অদম্য আগ্রহ তৈরি করে দিয়েছিল।
---
১৬৫৭ সালে শাহজাহান ৬৫ বছর যখন পূর্ণ করছেন তিনি কিন্তু তাঁর পূর্বপুরুষদের থেকে বেশি বছরই বেঁচেছেন। তবুও তার অসুস্থতা আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত। কেন তিনি হঠাতই মৃত্যুমুখে পড়লেন সে বিষয়ে, তার সময়ের লেখকেরা কেউই একমত হতে পারেন নি। ইতালিয় মুসাফির মানুচি তার মতই রঙ্গিন ভাষায় বললেন যে মাদক দ্রব্যের অতিসেবনেই তার রোগগ্রস্ততা। মানুচির দেশ থেকে আসা কারেরির মত বৃদ্ধাবস্থাতেও তাঁর প্রবল যৌনক্ষুধা ত্যাগ করতে না পারায় এই কাণ্ডটা ঘটেছে। বাস্তবিকভাবে হয়ত ব্লাডার বা নিত্যকৃত্য ইত্যাদির সমস্যার জন্যে তার অসুস্থতা ঘটা সম্ভব। যে কারণেই তাঁর অসুস্থতা হোক, বাস্তব হল সেই অসুস্থতার খবরই পুত্রদের মধ্যে এক বছর আগেই সিংহাসনে বসার অদম্য আগ্রহ তৈরি করে দিয়েছিল।
১৬৫০এর দশকের প্রথম দিকে, দারা শুকোর বিরুদ্ধে গোপনে আওরঙ্গজেব অন্য দুই ভায়ের সঙ্গে জোট গড়ে তোলেন। তিন ভাইই জানতেন তাঁদের পিতা বড়ভাইকেই পছন্দ করেন এবং দারাও সেই সময়েই তাঁর তিন ছোটভাইকে হত্যা করতে পরিকল্পনা করছিলেন। ১৬৫২ সালে সমসাময়িক ফার্সি সাহিত্য থেকে পরিষ্কার বুঝতে পারি, দারা, ‘নেকড়ের মত ভাইদের রক্ত পানের অপেক্ষা করছেন’। পরে যখন সিংহাসনের লড়াই চলছে, শোনা যায় আওরঙ্গজেব শাহজাহানকে চিঠি পাঠিয়ে তার বড়দার হত্যার ইচ্ছের কথা বিশেষ করে আওরঙ্গজেবের মত নির্মল রক্ত পেতে তার ঔসুক্য সংবাদ জানান।
শাহজাহান অসুস্থ হবার মুহূর্তে দারা শুকোই একমাত্র পুত্র যিনি দিল্লিতে পিতার পাশে দরবারে ছিলেন। তাঁর তিন ভাই সাম্রাজ্যের দূরবর্তী তিন অঞ্চল – শাহ শুজা বাংলা, মুরাদ গুজরাট এবং আওরঙ্গজেব দাক্ষিণাত্য সামলাচ্ছিলেন। দারা রাজদরবারের খবর তার ভাইদের কাছে যাতে না যায় তার ব্যবস্থা করলেন(রাজদরবারের সংবাদলেখকদের সংবাদ বাইরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে), কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল না। ইতমধ্যেই শাহজাহানের অসুস্থতার সংবাদ সংক্রান্ত নানান ধরণের গুজব বিশেষ করে বাবাকে গৃহবন্দী করে তিন ভাইকে হত্যা করে দারার ক্ষমতা দখলের গল্প তিন ভায়ের কানে আসতে শুরু করেছে।
চার ভাই যখন পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন, অভিজাতরা চারজনের পিছনে আলাদা আলাদাভাবে দলবদ্ধ হলেন। তবে অধিকাংশই হয় দারা অথবা আওরঙ্গজেবের শিবিরের এসে জুটলেন। রাজ পরিবারের মহিলারাও সিংহাসনের লড়াইতে জুড়ে গেলেন - শাহজাহানের তিন কন্যাও শিবির বেছে নিলেন। বড় কন্যা জাহানারা বেছে নিলেন বড় ভাই দারাকে, মাঝের কন্যা রোশেনারা বেছে নিলেন আওরঙ্গজেবকে এবং ছোট বোন গৌহরারা বাছলেন মুরাদ শিবির। আওরঙ্গজেবের কাছে দারার সঙ্গে বিবাদের প্রথম ধাপ হল মুরাদের সঙ্গে জোট করা।
No comments:
Post a Comment