যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
< আজ যে দলে দলে সিপিএম বিজেপি হয়ে যাচ্ছে সেটার ঐতিহাসিক কারণ ভদ্রবিত্তের চোরা মুসলমান বিদ্বেষ - শুধু বর্তমানের রাজনৈতিক হিংসা নয়। আওরঙ্গজেবের প্রতি এই ভদ্রবিত্তসুলভ একদেশদর্শিতার জন্যে এত দিন যদুনাথ সরকার লিখিত আওরঙ্গজেবের জীবনালেখ্য অনুবাদ করি নি। ৫এর দশক থেকে ভারতজুড়ে যে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হয়, তাতে ইওরোপের হাতে তৈরি এই চোরা ইসলামি বিদ্বেষের দৃষ্টিভঙ্গীর মারাত্মক ভাবে উপস্থিত ছিল। সাত-আটের দশকেও বাম আমলে যে পাঠ্য পুস্তক পড়েছি তাতেও এই বিদ্বেষের ধারনাটাও প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে - বর্তমানে এই অনুবাদটা করতে মানসিক নির্যাতন হচ্ছে খুব, তবু ঐতিহাসিক নথি করার জন্যে দাঁতে দাঁত চেপে কাজটা করছি। এর পরেই অড্রি ট্রুস্কের আওরঙ্গজেব - দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অনুবাদ করব।>
< আজ যে দলে দলে সিপিএম বিজেপি হয়ে যাচ্ছে সেটার ঐতিহাসিক কারণ ভদ্রবিত্তের চোরা মুসলমান বিদ্বেষ - শুধু বর্তমানের রাজনৈতিক হিংসা নয়। আওরঙ্গজেবের প্রতি এই ভদ্রবিত্তসুলভ একদেশদর্শিতার জন্যে এত দিন যদুনাথ সরকার লিখিত আওরঙ্গজেবের জীবনালেখ্য অনুবাদ করি নি। ৫এর দশক থেকে ভারতজুড়ে যে পাঠ্যপুস্তক রচনা করা হয়, তাতে ইওরোপের হাতে তৈরি এই চোরা ইসলামি বিদ্বেষের দৃষ্টিভঙ্গীর মারাত্মক ভাবে উপস্থিত ছিল। সাত-আটের দশকেও বাম আমলে যে পাঠ্য পুস্তক পড়েছি তাতেও এই বিদ্বেষের ধারনাটাও প্রবলভাবে বিদ্যমান ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে - বর্তমানে এই অনুবাদটা করতে মানসিক নির্যাতন হচ্ছে খুব, তবু ঐতিহাসিক নথি করার জন্যে দাঁতে দাঁত চেপে কাজটা করছি। এর পরেই অড্রি ট্রুস্কের আওরঙ্গজেব - দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অনুবাদ করব।>
ইতোমধ্যে শুরু হল আওরঙ্গজেবের ধর্মান্ধতার দিকে যাত্রা। ১৬৬৯ সালের ১ এপ্রিল তিনি তার সেনানায়কদের নির্দেশ দিলেন বিধর্মীদের বিদ্যালয় এবং ধর্মস্থানগুলি ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যে। সন্ন্যাসী উদ্ধব বৈরাগীকে গ্রেফতার করা হল। ১৬৬৯ সালে কাশীর বিশ্বনাথ মন্দির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মথুরায় বুন্দেলার রাজা বীরসিংহদেবের নিজের হাতে ৩৩ লক্ষ টাকা দিয়ে তৈরি সর্বজনমান্য কেশব রাইএর মন্দির ১৫৭০ সালে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় একটি মসজিদ তৈরি হয়। “মন্দিরের মূর্তিটি আগরায় নিয়ে এসে, জাহানারার মসজিদের সিঁড়ির তলায় পুঁতে দেওয়া হয়” যাতে ধার্মিক মুসলমানের সেটিকে প্রতিনিয়ত মাড়িয়ে যেতে পারেন। এই সময়েই কাথিয়াবাড়ের সোমনাথ মন্দিরটিও ধ্বংস করা হয়। যারা সেইখানে তার পরেও পুজা করতেন তাদের পুজো করতে নিষেধ করা হয়। অগুন্তি ছোটছোট ধর্মীয় মন্দিরের ওপর আঘাত নামিয়ে আনা হয় তার সময়েই।
১৬৭৯-৮০ সালের রাজপুর যুদ্ধতে সোমেশ্বর মন্দিরের সঙ্গে উদয়পুরের তিনটি বৃহৎ মন্দিরের সঙ্গে সঙ্গে শুধু মাড়োয়ারেই ২৪০টা মন্দির ধ্বংস হয়। অধীনস্থ রাজ্য জয়পুরেই ৬৭টা মন্দির ভাঙ্গা হয়। ১৬৭৯সালের ২ এপ্রিল অমুসলমানেদের ওপর জাজিয়া কর বসে। গরীব মানুষেরা করের প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করলে তাদের ওপরে হাতি ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য আরেকটি ১৬৯৫ সালের মার্চের ফরমানে বলা হয় “রাজপুত ছাড়া কোন হিন্দুই অস্ত্র বহন, হাতি, আরিবি পার্সি ঘোরা আর পালকি চড়তে পারবেন না”। “কলমের এক খোঁচায় তার প্রশাসনের সব হিন্দু আমলাকে বরখাস্ত করে দেওয়া হল।” মুসলমান ব্যবসায়ীদের চুঙ্গীকর তুলে দিয়ে হিন্দুদের এই কর দ্বিগুণ করে দেওয়া হোল।
এই ধর্মান্ধ কাজের ফলে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে থাকে সেই আগুনটা রাজশক্তিকেই পোহাতে হয় এবং আওরঙ্গজেব এই বিদ্রোহের ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে যান একজন প্রকৃষ্ট ধর্মান্ধ শাসকের মতই। মথুরা এবং আগরা জেলায় বিশেষ করে গোকলা জাট(১৬৬৯) এবং নারোলএর কাছে সতনামি বা মুণ্ডিয়াদের(মে, ১৬৭২) বিদ্রোহ ধুমায়িত হয়ে ওঠে। এই ৫০০০ ঘাড় কেঁদো বিদ্রোহী চাষীকে এক্সটার্মিনেট করে দেওয়া হয়। শিখ গুরু তেগ বাহাদুরকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত না হতে চাইলে তার মুণ্ডচ্ছেদ করা হয়(১৬৭৫) প্রকাশ্যে, তার অনুগামীরা বিদ্রোহ চালিয়ে যায়।
এরপরে আওরঙ্গজেব তার সমস্ত নিরপেক্ষতার ঘোমটা খুলে রাজপুতেদের আক্রমন করেন। যোধপুরের মহারাজা যশোবন্ত সিংহ ১০ ডিসেম্বর ১৬৭৫ সালে সম্রাটের সেবায় আত্মাহুতি দেন। তৎক্ষণাৎ আওরঙ্গজেব মুঘল আধিকারিকদের পাঠিয়ে তার রাজ্য দখলের হুকুম দেন এবং কাজ তদারক করতে আর বিরোধীদের ভয় দেখাতে নিজেও অগ্রসর হন। পরের ফেব্রুয়ারি মহাজারার দুই স্ত্রী দুই পুত্র জন্মদেন লাহোরে। আওরঙ্গজেব যোধপুরের রাজসিংহাসন রাজার অপদার্থ নাতিকেকে ৩৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করেন এবং মহারাজার বিধবা আর তাদের সদ্য জন্মানো বাচ্চাকে ধরে নিয়ে হারেমে রাখার ব্যবস্থা করেন যতদিন না তারা পুর্নবয়স্ক হয়ে উঠছে। কিন্তু রাজপুত ইতিহাসে মহত্তম চরিত্রের অন্যতম দুর্গাদাসের প্রতি আনগত্যে বীরত্বব্যঞ্জক রাঠোড় সেনানায়কেরা যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ বিসর্জন দেন। রাঠোর কুলপ্রদীপ শিশু অজিত সিংহকে মারোয়াড়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়(২৩ জুলাই ১৬৭৯)।
No comments:
Post a Comment