(ছবিতে আকবর জাহাঙ্গীর শাহজাহান তাদের আমলাদের নিয়ে বৈঠক করছেন)
তার রাজত্বে সামগ্রিকভাবে সাধারণ রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল হিন্দু ধার্মিক সঙ্গঠনগুলি আর তাদের কর্মকর্তাদের ভাল রাখা। আমলাদের প্রতি তাঁর লেখা বেশ কয়েকটি চিঠি বা ফরমানে তিনি স্পষ্ট নির্দেশ দিচ্ছেন অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেরপ থেকে মন্দিরগুলি বাঁচানো এবং হিন্দু গোষ্ঠীদের জমি দান এবং হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের ভাতা দেওয়ার।
তার রাজত্বের নবম বছরে তিনি গুয়াহাটির উমানন্দ মন্দিরে ফরমান পাঠিয়ে তাদের জমি দান করেন এবং সেই জমি থেকে তাদের রাজস্ব আদায়ের অধিকার দেন। ১৬৮০ সালে তিনি বেনারসের গঙ্গার তীরে বাস করা হিন্দু সন্ন্যাসী ভগবৎ গোঁসাইএর প্রতি কোন রকম বেইজ্জতি নিষিদ্ধ করেন। ১৬৮৭ সালে তিনি মসজিদের কাছে থাকা বেনারসের একটি ঘাটে কাছে রামজীবন গোঁসাইকে কিছু জমি বরাদ্দ করেন, যেখানে তিনি ধর্মপ্রাণ ব্রাহ্মণ আর পুজ্য ফকিরদের জন্যে বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৬৯১ সালে চিত্রকূটের বালাজী মন্দিরের সাহায্যের জন্যে মহান্ত বালকদাস নির্বাণীকে কিছু নিষ্কর জমি প্রদান করেন। ১৬৯৮ সালে তিনি পূর্ব খণ্ডেশের নেক ভক্তর পুত্র রং ভক্তকে কিছু নিষ্কর জমি দ্যান। এই তালিকা ক্রমশঃ বাড়তেই থাকবে এবং এই তালিকায় যোগ হবে এলাহাবাদ, বৃন্দাবন, বিহার এবং অন্যান্য জনপদের একই ধরণের হাজারো কাহিনী।
আওরঙ্গজেব তার পূর্বজদের অনুসৃত হিন্দু ধার্মিক গোষ্ঠীকে সুযোগ সুবিধে দেওয়ার প্রথা বহন করে নিয়ে যান নিজের রাজত্বের সময়েও। এই প্রথার একটা উদাহরন দেখি জঙ্গমের সঙ্গে তার সম্পর্কে। জঙ্গম একটি শৈব গোষ্ঠী, মুঘলদের পৃষ্ঠপোষকতার আকবরের সময় থেকে বিকশিত হতে থাকে। আকবর তাঁদের ১৫৬৫ সালে জমির অধিকার দ্যান। এই জঙ্গম গোষ্ঠী আওরঙ্গজেবের থেকে বেশ কিছু ফরমান পান যেখানে বলা হয়েছে পূর্বে কোন কারণ না দেখিয়ে তাদের যে সব জমি দখল নেওয়া হয়েছিল(১৬৬৭) সেগুলো ফেরত দেওয়া হল, স্থানীয় মুসলমান গোষ্ঠীর হুজ্জুত থেকে(১৬৭২) তাদের বাঁচানো হল, এবং বেআইনিভাবে তাদের থেকে যে রাজস্ব আদায় করা হয়েছিল(১৬৭৪) সেগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হল। এই পদক্ষেপ থেকে আমরা আন্দাজ করতে পারি অরাজনৈতিক নিষ্কলুষ ধর্মীয় সংগঠনের কাজকর্ম আওরঙ্গজেবের ন্যায় বিচার চেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গীতে জায়েজ।
তিনি একই ধরণের পৃষ্ঠপোষনার নীতি নিয়েছেন জৈন ধার্মিক সংগঠনের ক্ষেত্রে। আবারও তিনি আকবরের পদক্ষেপ অনুসরণ করে জৈনদের বিশেষ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা তিনটি তীর্থ ক্ষেত্র শত্রুঞ্জয়, গিরনার এবং আবু পাহাড়ে জমি দান করেন ১৬৫০এর দশকের শেষের দিকে। তিনি জৈন সাধু লালা বিজয়কে একটি পোষালা(ধর্মস্থান) দান করেন ১৬৮১ সালের আগেই এবং ১৬৭৯ সালে তাদের জন্যে একটি উপাশ্রয়(বিশ্রামস্থল)ও দান করেন। ১৭০৩ সালে সাধু জৈন চন্দ্র সুরীর প্রতি যে কোন অশালীন আচরণের বিরুদ্ধে ফরমান জারি করেন। এই উদাহরণ সূত্রে আমরা বুঝতে পারি কেন সেই সময়ের নানান জৈন সূক্তে কেন আওরঙ্গজেবকে Aurangzeb Shah is a brave and powerful king” (mardano aur mahabali aurangasahi naranda) বলা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment