(ছবি- আওরঙ্গজেবের সাধারণ সমাধি, তার পাশে দুই পীর শেখ বুরহানুদ্দিন গরীব এবং সৈয়দ জাইনুদ্দিন শিরাজির দরগা)
ভূমিকায় আওরঙ্গজেব
অবিস্মরনীয় আওরঙ্গজেব
আমি এখানে অপরিচিত অবস্থায় এসেছিলাম, আমি যাচ্ছিও অপরিচিত অবস্থায় – মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে লেখা চিঠি
আমি এখানে অপরিচিত অবস্থায় এসেছিলাম, আমি যাচ্ছিও অপরিচিত অবস্থায় – মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে লেখা চিঠি
পরিণত বয়সে ১৭০৭ সালে, অষ্টাশি বছর বয়সে সম্রাট আওরঙ্গজেব যখন তাঁর জীবনকে ফিরে দেখেন, তখন দেখলেন শুধুই ব্যর্থতা।
মৃত্যুশয্যা থেকে বেশ কিছু মর্মভেদী চিঠি আওরঙ্গজেব তার পুত্রদের লিখেছেন, যেখানে তিনি তার গভীরতম ভয়কে অক্ষরের মাধ্যমে লিখেছেন, বলেছেন সর্বশক্তিমান হয়ত তার অধার্মিকতাকে শাস্তি দেবেন। অধিকাংশ সময়ে তিনি সম্রাট হিসেবে কত ব্যর্থ সেটাও বলেছেন। তাঁর ছোট ছেলে কাম বক্সকে লেখা চিঠিতে তার আশংকা ছিল তাঁর মৃত্যুর পর তার সেনা বাহিনী, তার আমলারা হয়ত সঠিক আদর পাবে না। তৃতীয় সন্তানকে লেখা চিঠিতে তিনি আরও গভীর ভাবে বলেছেন, ‘আমি শাসক হিসেবে ব্যর্থ এবং জনগণকে নিরাপত্তা দিতেও ব্যর্থ। আমার দামি জীবনটা খুব হেলাফেলায় কাটালাম। সর্বশক্তিমান এখানেই ছিলেন, কিন্তু আমার মুদে থাকা চোখ তাকে দেখতেই পেল না।’
আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে ১৫ কোটি বেশি মানুষের সম্রাট ছিলেন। তাঁর সময়ে মুঘল সাম্রাজ্য সব থেকে বেশি এলাকায় বিস্তৃত হয়, উপমহাদেশে তাঁর পূর্বে – বলা যায় মানব সভ্যতার ইতিহাসে, কোন একটি সাম্রাজ্যিক শক্তি এই বিপুল ব্যপ্ততা অর্জন করতে পারে নি। তাঁর সাম্রাজ্যের সব ধরণের সব বর্ণের সব ধর্মের মানুষকে বিচার দেওয়ার জন্যে আইন তৈরি, ব্যখ্যা এবং প্রয়োগের কাজে অসামান্য নিদর্শন পেশ করে গিয়েছেন। তিনি তাঁর সময়ে ধনীতম ব্যক্তি হতে পারতেন, কারণ তাঁর তোষাখানায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ রত্ন কোহিনুর সহ অগুন্তি মণিমাণিক্য, সোনা-দানা উপচিয়ে পড়ত। এত শিক্ষা দীক্ষা অর্জন সত্ত্বেও শেষ বয়সে এসে তাঁর মনে হচ্ছিল কিন্তু তার রাজনৈতিক অক্ষমতার কথা।
আজম শাহ এবং কাম বক্সের কাছে আওরঙ্গজেব তার ধর্মীয় অক্ষমতার কথা উল্লেখ করে বলে গ্যাছেন তিনি সর্বশক্তিমানের কাছে খুব তাড়াতাড়ি তিক্ত বিচারের মুয়খোমুখি হবেন। তিনি জীবনে নৈষ্ঠীক মুসলমান ছিলেন, কিন্তু তার জীবনে বা জীবনের পরবর্তী সময়ে তিনি “সর্বশক্তিমানের থেকে আলাদাই থাকাটাই বেছে নিয়েছেন”। যদিও তিনি এই বিশ্বে কোন বোঝা ছাড়াই এসেছেন, কিন্তু তার যেন মনে হচ্ছে তিনি জীবন পরিবর্তী সময়ে প্রবেশ করছেন বিপুল পাপের বোঝা কাঁধে নিয়ে। তিনি আজমকে লেখা শেষতম চিঠিতে উদ্দীপনাময় অক্ষরে, তীক্ষ্ণভাবে এবং প্রসন্ন চিত্তে লিখছেন, “বিদায়, বিদায় বিদায়”।
---
ঔরঙ্গজেব তিনশ বছরে বেশি আগে এই বিশ্বে ছিলেন, মারা যান ১৭০৭ সালের শীতে। তাঁকে মহারাষ্ট্রের খুলিদাবাদ নামক ছাদ খোলা এক জায়গায় খুবই সাধারণভাবেই কবর দেওয়া হয়। দিল্লিতে হুমায়ুনের লাল পাথরের তৈরি বিপুল বিশাল কবরখানা বা শাহজাহানের আগরায় তৈরি তাজ মহলের বিপরীতে ঔরঙ্গজেব এমন সমাধি এমনভাবে বানানোর নির্দেশ দিয়ে যান, যেন কেউ সেটা মনে না রাখে। আওরঙ্গজেবের ইচ্ছাক্রমে, তার সমাধি হবে সরল, সাধারণ, অলক্ষিত, এবং কোন একটা সুফি দরগার পাশে। শতাব্দের পর শতাব্দ পেরিয়েছে, শুধু মেঝেতে কিছু পাথরের যোগ হয়েছে, বেড়া দেওয়া হয়েছে, সাধারণ পরিচিতি চিহ্ন যোগ হয়েছে। এত আভূষণ সত্ত্বও আওরঙ্গজেবের সমাধির অতিসাধারণত্ব তার পূর্বজদের বিপুল বিশাল সমাধি চিহ্নগুলির তুলনায় সরল সাধারণই থেকে গিয়েছে।
---
ঔরঙ্গজেব তিনশ বছরে বেশি আগে এই বিশ্বে ছিলেন, মারা যান ১৭০৭ সালের শীতে। তাঁকে মহারাষ্ট্রের খুলিদাবাদ নামক ছাদ খোলা এক জায়গায় খুবই সাধারণভাবেই কবর দেওয়া হয়। দিল্লিতে হুমায়ুনের লাল পাথরের তৈরি বিপুল বিশাল কবরখানা বা শাহজাহানের আগরায় তৈরি তাজ মহলের বিপরীতে ঔরঙ্গজেব এমন সমাধি এমনভাবে বানানোর নির্দেশ দিয়ে যান, যেন কেউ সেটা মনে না রাখে। আওরঙ্গজেবের ইচ্ছাক্রমে, তার সমাধি হবে সরল, সাধারণ, অলক্ষিত, এবং কোন একটা সুফি দরগার পাশে। শতাব্দের পর শতাব্দ পেরিয়েছে, শুধু মেঝেতে কিছু পাথরের যোগ হয়েছে, বেড়া দেওয়া হয়েছে, সাধারণ পরিচিতি চিহ্ন যোগ হয়েছে। এত আভূষণ সত্ত্বও আওরঙ্গজেবের সমাধির অতিসাধারণত্ব তার পূর্বজদের বিপুল বিশাল সমাধি চিহ্নগুলির তুলনায় সরল সাধারণই থেকে গিয়েছে।
No comments:
Post a Comment