Saturday, September 8, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৪ - অড্রে ট্রুস্কে

(মানচিত্র - আওরঙ্গজেবেরে মৃত্যুকালে - ১৭০৭ সালে উপমহাদেশ)
আওরঙ্গজেব হয়ত চেয়েছিলেন এই বিশ্ব তাকে ভুলে যাক। বিশ্ব তা হতে দিল না। একবিংশ শতকের ভারত পাকিস্তানের জনজীবনের স্মৃতিতে তিনি আজও বেঁচে আছেন তীব্র জীবন্ত ভাবেই। ভারতে, তার সময় নিয়ে আজও কাটাছেঁড়া চলে, এবং তাঁকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষাভাবাপন্ন সম্রাট হিসেবে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়। যদিও আওরঙ্গজেব তার উত্তরাধিকার নিয়ে নিজেই প্রশ্ন ছুঁড়ে গিয়েছিলেন, আজ বহু ভারতীয় দ্বিধাহীনভাবে মনে করে তিনি একজন ধর্মান্ধ শাসক যাঁর সারাজীবন কেটেছে তরোয়ালের ধারে শাসন পরিচালনায় এবং বহু হিন্দুর চোখের জল ফেলার কারণই তিনি।
সম্প্রতি কালে ভারত থেকে তাঁর বহু স্মৃতি মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে – দিল্লিতে তাঁর নামেও রাস্তা আওরঙ্গজেব রোডের নব্য নামকরণ এরকমই এক উদ্যম। এই কাণ্ডে এই সাদায় কালোয় মাখানো সম্রাটকে নিয়ে, এবং ভারতের ইসলামি অতীত নিয়ে নতুন তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী পাকিস্তানে তিনি হয়ত ঈষৎ ভাল আচরণ পাচ্ছেন কি না সন্দেহ। কেউ কেউ ভারতীয় বিতর্ক অনুসরণ করে তাঁকে সোজাসুজি ধর্মান্ধ শাসক হিসেবে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কেউ তাকে অতীতের ইতিহাস খুঁড়ে তাঁকে সত্যকারের মুসলমান শাসক হিসেবে গণ্য করছেন। আধুনিক কালের এই বিতর্কের সংস্করণে ইতিহাসের সত্যনিষ্ঠ তথ্য খুব বেশি উঠে আসছে না।
বরং ভুলতথ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় আওরঙ্গজেব নিয়ে একবিংশ শতকে বিতর্কের ঘুর্ণাবর্তে মানুষটা প্রহেলিকা হিসেবেই থেকে যান।
---
বিপুল মানুষের শাসনভার বয়ে নিয়ে মুঘল সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ সম্রাট হয়ে ছিলেন তিনি। যদিও উপমহাদেশের বাইরে আজ মুঘলদের নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, কিন্তু সেই সময়ে সারা বিশ্বের কাছে মুঘল সাম্রাজ্য ছিল তীব্র আকর্ষণেরে এবং যথোচিত সম্ভ্রমের বিষয়। ১৬০০ সালে মুঘল ভারতের জনসংখ্যা ইওরোপের মোট জনসংখ্যা ছাড়িয়ে যায়, এবং মুঘলদের সময়ে যে সম্পদ তৈরি হয় তা সে সময়ে অভাবনীয়ও বটে। আওরঙ্গজেব ক্ষমতায় আরোহন করেন ১৬৫৮ সালে ভাইদের মধ্যে বিপুল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে – দুই ভাই সে যুদ্ধে মারা যান, আরেকজন বার্মায় নিহত হন এবং তার পিতাকে তিনি বন্দী করেন। তিনি নিজের নাম নেন আলমগীর। তার উপাধির প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করতেই যেন তিনি উনপঞ্চাশ বছরের শাসনে একের পর এক রাজ্য দখল করেন।
তাঁর জীবন সময়ে আওরঙ্গজেবের কথা প্রায় সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছে। ১৬৭৫ সালে ব্রিটিশ কবি জন ড্রাইডেন, Aureng-zebe মুঘল সম্রাটের জীবন নিয়ে একটি বীরত্বপুর্ণ বিয়োগান্ত কাব্য লেখেন। সে সময় একের পর এক ইওরোপিয় মুসাফির ভারতে ঘুরতে আসতে থাকেন – ব্রিটিশ, ডাচ, পর্তুগিজ এবং ফরাসী সওদাগর, মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে চুক্তি করে উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁদের ব্যবসার কুঠি খুলে ব্যবসা করছেন। মুঘল দৃষ্টিভঙ্গীতে ইওরোপিয়রা ছিল ন্যুনতম শক্তি(এবং সত্যিই তাই, সুশীল চৌধুরী প্রস্পারিটি এন্ড ডিক্লাইন বইতে দেখিয়েছেন, বাংলায়(এবং স্বাভাবিকভাবে সমগ্র উপমহাদেশেই) সব ক'টি ইওরোপিয় কোম্পানি যা ব্যবসা করত তার থেকে দেড়গুণ ব্যবসা করত বাংলার এশিয় ব্যবসায়ীরা, এবং পলাশীর আগে তারা সামরিকভাবেও দিক্ষিণ এশিয়ায় দাঁত বসাতে পারে নি)। তাঁর পূর্বজদের মত আওরঙ্গজেবও বিশ্বের সব থেকে বড় সাম্রাজ্য শাসনের স্বপ্ন দেখতেন, এবং তাঁর জীবদ্দশায় তিনি যে সাম্রাজ্য তৈরি করেন তার মোট এলাকা ছিল ৩২ লক্ষ বর্গ কিমি (মোটামুটি আধুনিক ভারতের ক্ষেত্রফলের সমান), এবং ধনে, মানে, উন্নতিতে, ধর্মীয় এবং কৃষ্টিগত বৈচিত্র্যে তার তুলনা শুধু সেই সাম্রাজ্যই ছিল।

No comments: