Friday, September 7, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং১ - অড্রে ট্রুস্কে

<শুরু করার আগে কিছু কৈফিয়ত লিখে যাওয়া জরুরি। উপমহাদেশিয় ইতিহাসে কারিগর অর্থনীতির একজন ছাত্র হিসেবে আমাদের কাছে মুঘল আমল গুরুত্বপূর্ন এইজন্যে নয় যে সে সময় উপমহাদেশ জাগতিক উন্নতি, প্রশাসনিক সুব্যবস্থাপনা এবং রাজনৈতিকভাবে বিশ্বের দরবারে অত্যুজ্জ্বলভাবে উপস্থাপিত হয়েছিল, বরং এই জন্যে যে, এই রাজনৈতিক সময়টা উপমহাদেশ স্বাধীনতা হারাবার ঠিক আগের ঘটনা - সেই সময়টা জানান জরুরি সেই জন্যেই। এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণতম চরিত্র ঘটক আওরঙ্গজেব। বাংলার কারিগরদের সংগঠন করার সূত্রে একটা বিষয় বুঝতে পারছি ক্রমশঃ, পলাশীর পর ব্যপক অনিয়ন্ত্রিত লুঠ এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পরে প্রাতিষ্ঠানিক লুঠ এবং সুশাসিত উপমহাদেশকে চিরস্থায়ী গোলোযোগের আবর্তে ফেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশপূর্ববর্তী সময়কে কলঙ্কিত, ঘৃণিত দেখানোর আবশ্যকতা হয়ে পড়েছিল সাম্রাজ্যবাদী আর সাম্রাজ্য শিবিরের। সাম্রাজ্যবাদী, রাষ্ট্রবাদী ঐতিহাসিকেরা সরাসরি এই প্রকল্পের অংশীদার হয়ে পড়েন এবং বঙ্গ-পাঞ্জাব ভাগের পরেও সেই প্রবণতা কমে নি বরং চোরা ইসলাম বিদ্বেষ বেড়েছে নানান ভাবে সামনাসামনি বা প্রগতিশীলদের মাধ্যমে পরোক্ষে। আমরা যদুনাথ সরকারের কিছু বই অনুবাদ করেছি - বিশেষ করে মুঘল এডমিনিস্ট্রেশন এবং আহকমইআলমগিরি। উনি উপমহদেশিয় ইতিহাসে সরাসরি আওরঙ্গজেবকে ঘৃণিত চরিত্র হিসেবে দেখানোর অন্যতম প্রতিভূ। যেহেতু তিনি পশ্চিমবিদ্য আর সর্বজনমান্য, ফলে তাঁর বক্তব্য প্রায় প্রত্যেক শিবিরেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়। আহকম অনুবাদ করতে গিয়ে বইতে ওনার লেখা আওরঙ্গজেবের সঙ্খিপ্ততম জীবনীটি বাদ দিয়ে যাই। বইটি সম্পূর্ণ করতে গিয়ে সেই বাতিল করা অংশটা কয়েকদিন আগে অনুবাদ করতে গিয়ে দেখলাম তিনি অতি কঠোরভাষায় নিন্দনীয় বিশেষণে আওরঙ্গজেবকে বিদ্ধ করেছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের মত বিষয় লেখার উদ্দেশ্যে সরাসরি উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে আওরঙ্গজেবকে দায়ি করে, তাকে অপরাধী, ধর্মান্ধ, পরশ্রীকাতর ইত্যাদি ঠাওরান - নাহলে তার প্রকল্পটি খাড়া হয় না। যদিও আহকমে বেশ কিছু কাহিনী আছে যা আওরঙ্গজেবকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে শেখায়। ওনার পরে বেশ কিছু কাজ হয়েছে যা সাদায় কালোয় নিন্দিত এই সম্রাটকে তুলে ধরে। খুব সম্প্রতি প্রকাশিত অড্রে ট্রুস্কের সহজপাঠ্য বইটি অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিই। অনুবাদের কাজটি চলবে বেশ কিছু দিন ধরে, কারণ হাতে সঙ্গঠনের নানান চলতি কাজ জমে আছে। তবুও চেষ্টা করব রোজ অন্তত একটা করে অনুবাদের কিস্তি দেওয়ার। তথ্যসমৃদ্ধ এই বইটি লিখে ট্রুস্কে অধিকাংশ যায়গায় নিন্দিত হয়েছেন। তা হোন। সত্য উন্মোচনে বহু স্বার্থব্যক্তির গায়ে আঘাত লাগতে পারে এই সতর্কতা লিখে অনুবাদে প্রবেশ করা গেল।>
ভূমিকা
এই বইএর শুরু একটি টুইটার বার্তায়, বলা ছিল, আমার কাছে কি কোন মুঘল সম্রাটের জীবনী তৈরি আছে? আলোচনাটা এবারে মেল মার্ফত হতে শুরু করল। আমি মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব আলমগিরকে বেছে নিলাম। সামাজিক মাধ্যমেই এই বইটির জন্মের একটা যৌক্তিকতা আছে - আধুনিক ভারতে আওরঙ্গজেব নিয়ে মাথাব্যথা বাড়ছে বিশেষ করে টুইটার আর ফেসবুক। এই ক্ষুদ্রায়তনিক জীবনীতে আমি গণকৃষ্টিতে আওরঙ্গজেবের রঙ্গিন উপস্থাপন নিয়ে কিছুটা আলোচনা করেছি। তবে ঐতিহাসিকের দৃষ্টিভঙ্গীতে প্রাথমিকভাবে আওরঙ্গজেব একজন মুঘল সম্রাট, যাঁর সম্বন্ধে আম জনতা দুঃখজনকভাবে খুবই কম জানেন। এই বইটি বৃহত্তর পাঠকের জন্যে মুঘল সম্রাট ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেবকে তার জীবনের নানান জটিল দিক নিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।
গড়গড়িয়ে গল্প বলা আর পাঠ তৈরির জন্যে প্রতিপাতায় পাদটিকা দেওয়া থেকে বিরত থেকেছি। এমনিতেই আওরঙ্গজেবের জীবন এবং যে শাসন কৌশল তিনি অবলম্বন করেছিলেন, সেটি বেশ জটিল, তারপরে যদি প্রতিপাতায় পাঠক পাদটিকার কন্টকে জর্জরিত হন তাহলে পাঠকের মুশকিল বাড়ে। আমি কোন কোন সূত্র থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি, সেগুলি যদি পাঠককে জানতে উৎসাহিত করে তাহলে তিনি পাঠের শেষে লেখা পুস্তকতালিকা প্রবন্ধ এবং আমার মন্তব্যটা পড়তে পারেন। পুনশ্চ বিভাগটি তৈরি করেছি অতিরিক্ত উতসাহীদের জন্যে যাদের জানান ইচ্ছে থাকে কিভাবে একজন ঐতিহাসিক অতীত নিয়ে ভাবেন এবং সেই কাজে উত্তরাধুনিক সূত্রগুলি বিশ্লেষণ করেন।
---
এই বইটি লিখতে গিয়ে আমি অনেকের কাছে ঋনী। অপ্রকাশিত অবস্থায় আমার পাণ্ডুলিপিটি এলিসন বুশ, মুনিস ফারুকি, সুপ্রিয়া গান্ধী, এনি মার্ফি, হেইডি পাউয়েলস, সমূঈরা শেখ এবং সিন্থিয়া ট্যালবটকে দেখাই। বইটির ছবির জন্যে আমি ইয়েল রাইসের প্রতি কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে মিড আর্ট মিউজিয়ামে আওরঙ্গজেবের একটি প্রতিকৃতি তিনি খুঁজে বার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে কামার আদমজী, পুর্নিমা ধবন, ওয়েন্ডি ডনিয়ে, রিচার্ড ঈটন, মুনিস ফারুখি, টমাস ব্লুম হান্সেন, শান্তি কাভুরি-বাওয়ার, আফজার মইন, শেলডন পোলক, সিমরন জিত সিংহ, আনন্দ তানেজা, তাইমিয়া জামান এবং স্ট্যানফোর্ড মেলন পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপএর সঙ্গে আলোচনা করেছি। বইএর সব তথ্য, তত্ত্ব, ভুল সব আমার নিজস্ব।
ভারতীয় ইতিহাসে সব থেকে ঘৃণিত চরিত্র আওরঙ্গজেবকে নিয়ে লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। এর জন্যে আমায় কয়েকজনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। আমায় যাঁরা এই বইটি লিখতে অত্যুগ্র প্রেরনা দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন – আমি জানি তাঁরা কারা – তাঁরাও জানেন - তাঁদের সক্কলকে আমার হৃদয়ভরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।

No comments: