অষ্টম অধ্যায়
আওরঙ্গজেবের উত্তরাধিকার
(ছবিতে প্রথম বাহাদুর শাহ বা মুয়াজ্জম)
আওরঙ্গজেবের উত্তরাধিকার
(ছবিতে প্রথম বাহাদুর শাহ বা মুয়াজ্জম)
আওরঙ্গজেবের পর
None but the Creator has knowledge of the future;
If anyone says he knows it, do not believe him!
-বাবা মুসাফির(মৃ ১৭১৪), নকক্সবন্দী সুফি, আওরঙ্গজেবের পুত্রদের সিংহাসন দখলের লড়াই বিষয়ে
None but the Creator has knowledge of the future;
If anyone says he knows it, do not believe him!
-বাবা মুসাফির(মৃ ১৭১৪), নকক্সবন্দী সুফি, আওরঙ্গজেবের পুত্রদের সিংহাসন দখলের লড়াই বিষয়ে
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর এক দশক কাটতে না কাটতেই মুঘল সাম্রাজ্য ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা আমাদের জানাচ্ছে, এর আগে আওরঙ্গজেবের পরের সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংস ক্রিয়া যতটা দ্রুত হয়েছে বলে মনে করা হত, তত দ্রুত এবং সামগ্রিকভাবে পতনের ঘটনা ঘটে নি। কিন্তু পার্থক্য যতই সূক্ষ্ম হোক না কেন আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরে যে পতন ঘটল সেই ঢালটায় চলার গতি লক্ষ্যনীয়।
সম্রাটের তিন সন্তান একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলেন। দুবছরের ভিতরেই দ্বিতীয় পুত্র মুয়াজ্জম অন্য দুজন আজম এবং কাম বক্সকে ধরাধাম থেকে সরিয়ে দিয়ে নিজে সিংহাসনে চড়লেন বাহাদুর শাহ নাম নিয়ে। ওপর ওপর মনে হচ্ছিল সাম্রাজ্যের দৈনন্দিন কাজকর্ম সব ঠিকঠাক চলছে। অতীতে দেখা গিয়েছে মুঘল রাজপরিবারের মধ্যে সিংহাসন দখলের লড়াই আদতে মুঘল সাম্রাজ্যকে সবল করেছে। এখন দেখা গেল সমস্যার শেকড় অনেক গভীরে চারিয়েছে এবং মুঘল সাম্রাজ্যকে ধীরে ধীরে গিলে ফেলতে চাইছে।
পিতার কাজকর্মে মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু সমস্যা গভীর হয়ে দেখা দিচ্ছিল। উত্তরে জাঠ আর শিখেরা অস্ত্র ধরেছিল আর দক্ষিণে মারাঠাদের বিদ্রোহে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিল, ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল সাম্রাজ্য বন্ধু রাজপুতেরা। বাহাদুর শাহের ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যাগুলো প্রবল হয়ে দেখা দিতে শুরু করে এবং বিদ্রোহীরা এই সুযোগে মুঘল সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে। কিন্তু বাহাদুর শাহ, তার পিতার মত এই সমস্যা সামাল দিতে অপারগ হয়ে সমস্যার সামনে ঝুঁকে পড়লেন, আর মুঘল সাম্রাজ্যের খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
তিরিশ বছর আগে মারোয়াড়ের রাঠোড় রাজপুর পরিবার আওরঙ্গজেবের বিরোধিতা করে অসফলভাবে বিদ্রোহ করেছিল, তারা এই সুযোগে মুঘল আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ খুঁজল। রাঠোড় শাসক অজিত সিংহ মুঘল বাহিনীকে যোধপুর থেকে তাড়িয়ে বার করে দিলেন এবং শহরে সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের সময় তৈরি হওয়া মসজিদগুলিও ভেঙ্গে দিলেন। বাহাদুর শাহ যোধপুর দখল নিলেন। কিন্তু বাহাদুর শাহ পাঞ্জাবে শিখ বিদ্রোহের ফলে অনেক বেশি সেখানে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায়, নতুন করে অজিত সিংহ মারোয়াড়ের আধিপত্য তৈরি করলেন। পাঞ্জাবের শিখ বিদ্রোহ মুঘল সাম্রাজ্যকে ভোগাতে শুরু করল।
বাহাদুর শাহ ১৭১২তে মারা যান, বাবার মৃতুর পাঁচ বছরের মধ্যেই। তারপরে মুঘল সাম্রাজ্যের খণ্ডবিখণ্ড হবার হার বেড়ে গেল। ১৭১২ থেকে ১৭১৯, এই সাত বছরে চারজন মুঘল সম্রাট খুব দ্রুতলয়ে ক্ষমতায় আরোহন করলেন এবং সরেও গেলেন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর তের বছরের মধ্যেই পাঁচ জন সম্রাট সিংহাসনে আরোহন করে। এর সঙ্গে তুলনা করুণ তার আগের ১৫০ বছর। সে সময় রাজত্ব করেছিলেন মাত্র চারজন রাজা। এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় মুঘল রাজপরিবার অভিজাতদের আস্থা ও নিয়ন্ত্রণ হারাল। ফলে সাম্রাজ্যের সব থেকে মৌলিক কর্ম রাজস্ব আদায় ভীষণ কমে গেল। সমগ্র সাম্রাজ্যের আমলাতন্ত্রে দুর্নীতি ছেয়ে গেল এবং বহু এলাকা মুঘল সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হয়ে যায়।
No comments:
Post a Comment