যদিচ এই অন্ধকারের মধ্যে দিয়েও কয়েকটি নির্দিষ্ট আলোকরশ্মির আমরা দ্যাখা পাই, যেখান থেকে বুঝতে পারি, আওরঙ্গজেবের সময়ে মন্দির ভাঙ্গা খুব নিয়মিত ভাবে হয় নি। উদাহরণস্বরূপ ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর কিছু পরেই ফারসি সময় সারণি(ইতিহাস) মাসিরইআলমগিরি লেখেন সাকি মুস্তায়েদ খান। তিনি মথুরার কেশব দেব মন্দির ধ্বংস বিষয়ে বলছেন, a rare and impossible event that came into being seemingly from nowhere। মাসির... ইসলামি বিজয়ের রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গীতে কিন্তু আওরঙ্গজেবের সময়কে দ্যাখার চেষ্টা করেছে, এবং বহু সময়ে লেখকের উদ্দেশ্যপুরণে বহু তথ্য ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে, কোথাও ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। এই ধরণের বহু বিকৃত পাঠ্য ইতিহাস চর্চায় অবশ্যপাঠ্য হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা এই পাঠগুলি থেকে কোন তথ্য নিতে গেলে সাবধানতা অবলম্বন করব। এই পাঠ্যেই(মাসির...) আছে আওরঙ্গজেবের সময় বহু মন্দির ধ্বংস হয়েছিল এবং দ্যাখা যায় সে সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে বলতে বড্ড আগ্রহী। এই বাড়িয়েচড়িয়ে বলা তথ্যের সঙ্গে বেনারসের মন্দির ধ্বংসের খবরে আশ্চর্য হওয়া থেকে আমরা বুঝতে পারি যে এই ধরণের ঘটনা খুব নিয়মিত ঘটত না।
ঔপনিবেশপূর্ব মন্দির ধ্বংস আলোচনায় নম্বরের খেলায় ঢুকে পড়া ঈটনের ভাষায় পণ্ডশ্রম(fool’s errand) বই আর কিছুই নয়। আমরা নতুনভাবে দেখব তারে বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু মন্দির ধ্বংসের অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তিনি কেন করেছেন। এই আলোচনায় হয়ত আমরা বুঝতে পারব তিনি আরও কয়েক হাজার মন্দির কেন ধ্বংস না করে ফেলে রাখলেন।
---
রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের প্রভাবে আওরঙ্গজেব কয়েকটি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছেন। তিনি ১৬৬৯ সালে বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০এ মথুরার কেশব দেব মন্দির ধ্বংস করেন। দুটো ক্ষেত্রেই তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমন করে মুঘল রাষ্ট্রের নতিস্বীকার করাতে চেয়েছিলেন।
---
রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের প্রভাবে আওরঙ্গজেব কয়েকটি হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছেন। তিনি ১৬৬৯ সালে বেনারসের বিশ্বনাথ মন্দির এবং ১৬৭০এ মথুরার কেশব দেব মন্দির ধ্বংস করেন। দুটো ক্ষেত্রেই তিনি মন্দির কর্তৃপক্ষের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা দমন করে মুঘল রাষ্ট্রের নতিস্বীকার করাতে চেয়েছিলেন।
ধর্মীয় সংগঠনকে রাজনৈতিক গোলযোগে ধ্বংসের মুখে পড়তে হচ্ছে, এই ধারণাটিই আজকে যদিও বিবমিষার উদ্রেক করে, কিন্তু আধুনিকপূর্ব ভারতে ধর্ম আর রাজনীতির মধ্যে খুব মোটা দাগের রেখা টানা ছিল না। বরং হিন্দু মুসলমান উভয়েই ভাবতেন যে ধর্মস্থান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। ষষ্ঠ শতে লিখিত বৃহতসংহিতায় বলা হয়েছে If a Shiva linga, image, or temple breaks apart, moves, sweats, cries, speaks, or otherwise acts with no apparent cause, this warns of the destruction of the king and his territory। এই যুক্তিতে ধর্মীয় মূর্তি রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হত – সপ্তম শতক থেকে হিন্দু রাজারা একে অপরকে আক্রমন করতে গিয়ে দুর্গা, গণেশ, বিষ্ণু ইত্যাদি মন্দিরের সম্পত্তি লুঠতেন এবং বিগ্রহ ধ্বংস করতেন। তারা মাঝে মাঝেই একে অপরের মন্দির ধ্বংস করেছেন। বহু রাজা সংস্কৃত স্তোত্র লিখিয়ে এই সব লুঠকাণ্ডকে মর্যাদা দিয়ে অমর করার চেষ্টা করেছেন। ইন্দো-মুসলমান সম্রাট আওরঙ্গজেব এই ধারায় রাজনৈতিন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে মন্দির ধ্বংসকে রাষ্ট্রগতভাবে সহি শাস্তিদানের কাজ বলে মনে করতেন।
No comments:
Post a Comment