ভূমিকা
পঞ্চম অধ্যায়ে ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির বাংলায় কাজকর্ম আলোচনা করে দেখব, ১৭৫০এর দশক পর্যন্ত বাংলায় ইওরোপিয় রপতানি ক্ষেত্রে কোন বড় পতনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। ১৭৩০ এবং ১৭৪০এর দশকে ব্রিটিশ কোম্পানির রপ্তানির হিসেবে কিছুটা ঢালএ গড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু এই উপাত্ত থেকে মনে করা ঠিক হবে না এর কারণ বর্গী হামলার পরের বাংলার আর্থিক সঙ্কট ঘণিভূত হচ্ছিল। এটাও আমরা দেখাব নানান ঐতিহাসিকের লেখায় মারাঠা আক্রমনের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে আলোচিত হয়েছে, যদিও সেটা তার প্রাপ্য ছিল না। মারাঠা হ্যাঙ্গাম বাংলার অর্থনীতিতে কিছুটা প্রান্তিক প্রভাব ফেলেছিল কিন্তু সেটাও খুব কম সময়ের জন্যে। তথ্য দিয়ে আমরা দেখাতে পারি যে ইওরোপিয় বা এশিয় বাণিজ্যের পরিমান এবং মোট্ট মূল্যের খুব বেশি দৃষ্টিগোচর হয় নি ১৭৪০ এবং ৫০এর দশকগুলিতে। ১৭৫০এর দশকের প্রথম দিকে ইওরোপিয় বাণিজ্যের পতন ঘটলেও সেটা বাংলার পুষিয়ে যায় ডাচ রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায়।
ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির বাংলা কুঠির রপ্তানির বিপুল অংশ যেহেতু বস্ত্র ছিল আমরা সপ্তম অধ্যায়ে ব্রিটিশ এবং ডাচ বস্ত্র রপ্তানির বিশদ বিবরণ গভীরে গিয়ে উপস্থাপন করব। এবং এই ফল আমাদের ইন্টারেস্টিং ফল প্রদান করবে। ১৭৪০ এবং ৫০এর দশকে সুতি বস্ত্রের দাম বিপুল বেড়েছিল, সেই তথ্যাবলীও যে সত্য নয় সেটাও আমরা দেখাতে পারব(Brijen K. Gupta, Sirajuddaulfp,h, p. 33; l)..N. Chaudhuri, Trading World, pp. ,99-108; PJ ¥arshall, East ITJ,dianF ortun1s, p. 35; Bengal, pp. 73, 142-43, 163-64, 170)। একইভাবে অষ্টম অধ্যায়ে ডাচ এবং ব্রিটিশ কোম্পানির রেশম রপ্তানির বিশদ বিবরণ আলোচনা করব অষ্টম অধ্যায়ে; এবং আমরা দেখব, মধ্য অষ্টাদশ শতকে এশিয় বণিকদের রেশম বস্ত্র রপ্তানি ইওরোপিয় কোম্পানিগুলির থেকে বেশ বেশি ছিল। ৫০এর দশকের প্রথম দিকে এশিয় বাণিকদের রেশম ও সুতি বস্ত্রের রপ্তানির মোট মূল্য, দুটি ইওরোপিয় কোম্পানির মোট মূল্যের সমান।
কিছু কিছু ঐতিহাসিক(S. Bhattacharyya,EastlndiaComp'any, p. 17. Marshall.Bengal, p. 80.) যুক্তি দিয়েছিলেন ১৭২০ এবং ১৭৪০এর দশকে বাংলার ভৌগোলিক অঞ্চলের অর্থনীতির একটা বড় অংশ ইওরোপিয়/ব্রিটিশ কোম্পানির দখলে চলে গিয়েছিল। এটা কোনওভাবেই সত্য নয়। আমাদের বিশ্লেষণে আমরা দেখাতে চেষ্টা করব, পলাশীপূর্ব সময়ে বাংলার অর্থনীতিতে ইওরোপিয়দের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে এশিয় বণিক তাদের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। ইওরোপিয় কোম্পানিগুলি বাংলায় মাল কেনার জন্যে যে বিনিয়োগ, যাকে তারা ইনভেস্টমেন্ট বলত সেটা জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যেত। এই বিষয়টা আমরা চতুর্থ অধ্যায়ে আলোচনা করেছি। এটাও আমরা দেখাব যে ইওরোপিয় কোপম্পানিগুলির পুঁজি পৌনপুণিকভাবে কম পড়ত, তারা স্থানীয় ধারের বাজার থেকে বিপুল পরিমানে অর্থ ধার করত। স্থানীয় অর্থনীতিতে তাদের নিয়ে আসা দামি ধাতু এবং মশলাকে সম্পদ হিসেবে গণ্য করে সেটাকে পণ্য কেনার উপযোগী অর্থে রূপান্তরিত করার কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল, তাই দিয়ে তারা স্থানীয় অর্থনীতিকে কতটা প্রভাবিত করতে পারত সেটাও আমরা আলোচনা করব।
No comments:
Post a Comment