আওরঙ্গজেবের জীবদ্দশায় দাক্ষিনাত্যে মুঘল সেনাবাহিনী এবং সার্বিকভাবে রাষ্ট্রকে বিপুল বিরোধিতা আর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। নিরন্তর যুদ্ধ মুঘল তোষাখানার হাল বেহাল করে দ্যায় আর যুদ্ধে যাওয়া অভিজাতরা হতোদ্যম হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাজপুত এবং অন্যান্য উত্তরভারতীয় সেনাপতিরা, আমলারা দক্ষিণ ভারতের পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকাকে মানিয়ে পারে নি। তারা বাড়ি, নিজের পরিবেশ ছেড়ে এমন একটা এলাকায় গিয়ে পড়ল যে কৃষ্টিকে তারা নিজেদের বলেই মনে করত না। উদাহরণস্বরূপ উত্তরপ্রদেশের কায়স্থ ভীমসেন সাক্সেনার পরিবার বহু প্রজন্ম মুঘলদের সেবা করেছে। আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন নেই। অথচ তিনি দাক্ষিনাত্যে কি কি সমস্যায় পড়েছেন, তার বিশদ বিবরণ লিখেছেন। দক্ষিণ ভারতীয়দের তিনি কুদর্শন বিদেশি বলেই মনে করেছেন এবং এই মানুষদের প্রতি তাঁর অপছদ তিনি বিন্দুমাত্র গোপন করেন নি। ১৬৯০এরে দশকের মাঝামাঝির সময়ে চলা দক্ষিণ ভারতে যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, তাদের বর্ণনা দিয়ে তিনি লিখছেন, They are dark of complexion, ill-shaped and ugly of form. If a man who has not seen them before, encounters them in the dark night, he will most likely die of fright। যে মানুষদের তাতা জীবনে দেখে নি, যাদের বহিরাঙ্গ তাদের মনে ঘৃণার উৎপাদন করে, তাদের সঙ্গে মুঘল সরকার কাজ করায় তারা মনে করল মুঘল সরকারের আভিজাত্য নষ্ট হয়েছে।
অন্যান্য পেশাদার অভিজাতদের পরিবেশ হয়ত সমস্যা সৃষ্টি করে নি, কিন্তু মুঘল মনসব ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার মুখে দাঁড়াল। সেনাপতিদের জায়গিরের জমি পেতে বহু বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছিল, ফলে তাদের রোজগার বন্ধ হয়ে গেল। ফলে বিপুল সৈন্যের পরিকাঠামো বজায় রাখা সমস্যা হয়ে দাঁড়াল। তাদের আশা ছিল মুঘল রাষ্ট্র তাদের ভর্তুকি দেবে। আনুগত্য আর অমান্যতা বেড়েই চলল।
জিঞ্জি দখল অভিযানেই সমস্যার ধোঁয়া দেখা দিচ্ছিল। আওরঙ্গজেব জিঞ্জি দখল করলেন ঠিকই তার জন্যে অসম্ভব দীর্ঘ সময় আট বছর অপেক্ষা করতে হল। এই দীর্ঘ সময় ধরে অবরোধের যৌক্তিকতাকে সমর্থন করা খুবই কঠিন। সে সময়ের লেখকেরা মন্তব্য করেছেন সেনাপতি জুলফিকার খান কাজটা যেন শেষই করতে চাইছে না। চারদিকে গুজব ছড়িয়ে গেল যে জুলফিকার, পরের পোস্টিং কান্দাহারে। সে সেখানে যেতে চাইছে না বলেই যতদিন পারা যায় মারাঠাদের সঙ্গে পরোক্ষে সমঝোতা করে নিরুপদ্রবে অবরোধ অবরোধ খেলা করে দিন কাটিয়ে দিতে চাইছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা জিঞ্জি অবরোধ থেকে পরিষ্কার সেনা বাহিনীর মনোবল তলানিতে এসে ঠেকেছিল এবং সেনাবাহিনীর ওপর সাম্রাজ্যের বজ্রমুষ্ঠি শিথিল হচ্ছিল।
No comments:
Post a Comment