ইংরেজি অনুবাদ যদুনাথ সরকার
(ছবিতে আওরঙ্গজেব সুধাকরের মুখোমুখি)
যুবা আওরঙ্গজেবের হাতির সঙ্গে লড়াই
তখন সম্রাট শাহজাহান লাহোরে ছিলেন। শালিমার বাগানে তিনি প্রায়ই হাতির যুদ্ধ দেখতেন। বাংলা সুবার দেওয়ান তাকে একদা ৪০টা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হাতি পাঠিয়েছিল। সম্রাট ঝুল বারান্দায় বসে – তাঁর চার পুত্র ঘোড়ায় চড়ে। উল্টো দিকে দাঁড়ানো যুথের মধ্য থেকে একটি হাতি শাহজাহাদের দিকে ছুটে এগিয়ে আসতে থাকে। সম্রাটের পুত্রদের মধ্যে তিনজন সেই মূহুর্তে ডানদিকে ঘুরে পালিয়ে গেল। একটুও ভয় না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন শুধু চৌদ্দ বছরের মহম্মদ আকবর। দৌড়ে আসা হাতিটি আকবরের পাশ দিয়ে চলে যায়। অন্য শাহজাদারা পালিয়ে যাওয়ায় সেটি আকবরের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। আকবরের হাতে তখন শুধু একটি বল্লম। তিনি অস্বাভাবিক দ্রুততায় হাতিটিকে আক্রমন করলেন। হাতির শুঁড়ের আঘাতে শাহজাদার ঘোড়াটি পড়ে গেল। পড়ে গিয়েও আওরঙ্গজেব বল্লমটি ছাড়েন নি। তিনি বল্লমটি হাতির মাথা তাক করে ছুঁড়বেন বলে ঘুরে দাঁড়ালেন। ঝুল বারান্দায় সম্রাট উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন নেমে আসছেন, এমত সময়ে প্রহরীরা ছুটে গিয়ে অবস্থা সামাল দেন। আওরঙ্গজেব আস্তে আস্তে মহামহিমের দিকে হেঁটে আসছেন। সম্রাটের মামা(বাড়ি)র দিকের ভৃত্য নাজির ইতিবাদ খাঁ, বৃদ্ধাবস্থায় যতটা পারা যায় দ্রুত এসে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কান্না জড়ানো গলায় বলতে থাকেন – ‘আপনি সম্রাটের দিকে ধীর পদে এগোচ্ছেন, মহামহিম বিপদাশঙ্কায় অধীর হয়ে পড়েছেন’। শাহজাদা অনুচ্চস্বরে বললেন, ‘হতিটি যদি সেখানেই থাকত আমি হয়ত দ্রুত হাঁটতাম। কিন্তু এখন তো আর উত্তেজিত হওয়ার কোন কারণ নেই’। আওরঙ্গজেবের তাঁর পিতার কাছে পৌঁছবার মাত্র সম্রাট তাকে এক লাখ টাকা ইনাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললেন, ‘পুত্র, খোদাকে ধন্যবাদ, সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে শেষ হল। খোদা না করুন ঘটনাটা যদি অন্যদিকে মোড় নিত তাহলে কি যে অসম্মানের ব্যাপার হত বলা যায় না’। সেলাম জানিয়ে আওরঙ্গজেব উত্তর দিলেন, ‘এটা যদি অন্য ভাবে শেষ হত, তাতে কোন অসম্মান ছিলা না। আমার ভাইয়েরা যা করল, সেটাই চরম অসম্মানের’।
কবিতা – মৃত্যু সম্রাটের ওপরেও তাঁর ঘোমটা ছেয়ে দেয়। তাতে কোন অসম্মান নেই।
কবিতা – মৃত্যু সম্রাটের ওপরেও তাঁর ঘোমটা ছেয়ে দেয়। তাতে কোন অসম্মান নেই।
মন্তব্য – ঘটনাটার সত্যি। বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায় আবদুল হামিদের পাদশানামায় – শাহ জাহান আগ্রা দূর্গের ঝুল বারান্দা থেকে হাতির লড়াই দেখতেন(২৮ মে ১৬৩৩)। লড়াই ময়দানে তাঁর তিন পুত্র ঘোড়ার পিঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সামনে দাঁড়ান দুটো হাতি। একটি দাঁতালের নাম সুধাকর, দাঁতবিহীন অন্যটির নাম সুরতসুন্দর। তারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। প্রতিদ্বন্দ্বীরা(শাহজাদা) পালিয়ে যাচ্ছে দেখে সুধাকর আওরঙ্গজেবের দিকে তাক করে ছুটে এল। আওরঙ্গজেব কিন্তু তাঁর ঘোড়াকে সোজা দাঁড় করিয়ে রেখে(পালাতে দেন নি) দৌড়ে আসা হাতিটির কপালে বল্লম ছুঁড়ে মারলেন। হাতিটিকে নিবৃত্ত করতে না পেরে ভৃত্যরা বিভিন্ন ধরণের আতসবাজি(হাউই, চরকি ইত্যাদি) ছুঁড়তে শুরু করে। কিন্তু সেগুলি অগ্রাহ্য করেই হাতিটি তার দাঁতে(শুঁড়ে নয়) করে ঘোড়া সহ আওরঙ্গজেবকে মাটিতে ফেলে দেয়। চরম মুহূর্তে আওরঙ্গজেব জিন ছেড়ে লাফ দিয়ে মাটিতে দাঁড়িয়ে পড়েন। সুজা হাতের চাবুক দিয়ে হাতিটিকে আঘাত করার জন্য ভাইকে সাহায্য করতে আসতে চাইলেও বাজি ফাটানোর বিপুল আওয়াজ, যুদ্ধস্থান ঘিরে থাকা ধোঁয়া, উত্তেজিত মানুষের চিৎকার, গোলোযোগের দেওয়ালে ব্যহত হয়ে, তিনি ভাইয়ের কাছে আসতে পারেন না। সেই সঙ্গে একটা চরকি সুজার ঘোড়ার কপালে আঘাত করলে ঘোড়াটি চিৎকার করে দাঁড়িয়ে পড়তে চায়, সুজা ঘোড়া থেকে পড়ে যান। জয় সিংএর ঘোড়াও স্থানুবত দাঁড়িয়ে থাকে। এই সময়ে সুরতসুন্দর, সুধাকরকে আক্রমন করে। সুধাকর পালিয়ে যায়। আওরঙ্গজেব তখন ১৪ বছরের বালক। সম্রাট তাঁকে ৫০০০ স্বর্ণ মুদ্রা, সুধাকর এবং অন্যান্য উপহার দেন, মোট উপহারের পরিমান ছিল ২ লক্ষ টাকা।
ইতিমদ খাঁকে, শাহ জাহানকে সেবা করতে দেন তাঁর শ্বশুর ইয়ামিনউদ্দৌলা আসফ খাঁ(সূত্রঃ আবদুল হামিদ, পাদশাহ)।
ইতিমদ খাঁকে, শাহ জাহানকে সেবা করতে দেন তাঁর শ্বশুর ইয়ামিনউদ্দৌলা আসফ খাঁ(সূত্রঃ আবদুল হামিদ, পাদশাহ)।
No comments:
Post a Comment