Sunday, September 16, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৩৯ - অড্রে ট্রুস্কে

নৈতিক খবরদারি(Moral Policing)
A king is a shepherd of the poor even if he cows them with his glory. Sheep do not exist for the shepherd. It is the shepherd who exists for serving the sheep
- সাদি, গুলিস্তাঁ
আওরঙ্গজেব তার নীতিতাত্ত্বিক ভাবনাগুলি সমঝোতা না করার লক্ষ্যে প্রজাদের প্রতি পিতৃসুলভ দায়িত্ব নিয়ে তার কর্তব্য সম্পাদন করার কথা ভেবেছিলেন। তিনি প্রজাদের শুধু ঐহিক নিরাপত্তা সুস্বাচ্ছন্দ্যই দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন না তাঁর রাজত্বে তিনি তাদের পরমার্থিক মুক্তি দেওয়ার নিশ্চিন্ত করতে চাইলেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার রাজ্যের মানুষকে তার ভাবনায় যাকে নৈতিক জীবন বলে, সেটি দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চললেন এমনকি জোরও খাটালেন।
তিনি ইসলামি ধারণার নৈতিকতা আর ন্যায় বিচারের ধারণা ভিত্তি করে নিজেকে প্রজাদের নৈতিক নেতৃত্ব হিসেবে তুলে ধরলেন। তার পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা চিন্তা নির্ভরশীল ছিল সাদির প্রখ্যাত ফারসি সাহিত্য গুলিস্তাঁর তাত্ত্বিকতায় যেখানে সাদি শাসককে উত্তম প্রশাসক হয়ে উঠতে যেমন বলছেন, তেমনি তিনি বলছেন অধিকাংশই বিষবৎ স্বৈরাচারী। উল্লেখ্য আওরঙ্গজেব শুধুই মুসলমানেদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না, তিনি হিন্দুদেরও তার এই পরিকল্পনা থেকেও বাদ দ্যান নি। বহু সময় ধর্ম নির্বিশেষে তিনি বহু নির্দেশ সর্বসাধারন প্রজার জন্যে জারি করেছিলেন। অন্য এক উদাহরণে দেখতে পাই কোন একটি বিষয় কোন একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে বললেও, তিনি সেটাকে সার্বজনীন নীতি হিসেবে (analogous principles) উপস্থিত করতেন।
তিনি মুঘল রাজত্বে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে বহু কিছু অভ্যেস প্রথা নিষিদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রণ করে প্রজাদের ওপর নৈতিক খবরদারি সুনিশ্চিত করতেন। তার শাসনের নানান সময়ে যে সব কিছু নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেগুলি হল – মদ্যপান, আফিম সেবন, বেশ্যাখানা, জুয়াখেলা, প্ররোচনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক লেখা এবং গণজনের ধার্মিক জন উৎসব। মুহতাসিব পদের কর্মচারীরা নৈতিক মূল্যবোধের নির্দেশনা কার্যকর করতেন এবং প্রত্যেক শহর উলেমাদের মধ্যে থেকে মুহতাসিব নির্বাচিত হতেন। এই নিষিদ্ধকরণ বা নিয়ন্ত্রণের ন্যায্যতা প্রতিপাদন এবং লক্ষ্য একাভিমুখী – জন ও ব্যক্তি মানুষের নৈতিকতা উচ্চস্তরে বাঁধা। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার দিকে নজর রেখে কিছু এই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হতে থাকে, যা পরবতী কালে তাত্ত্বিকভাবে মুঘল ভারতকে নৈতিক এবং সুরক্ষিত অঞ্চল হসেবে তুলে ধরা। আওরঙ্গজেব মনে করতেন নৈতিকতা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং সম্রাটের বৃহত্তর দায়িত্ব তার প্রজাদের জনকল্যাণ।
---
সাম্রাজ্য জুড়ে মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করার বিফলতা, তার নীতিগুলোর মধ্যে সব থেকে ব্যর্থ কর্মসূচীগুলির মধ্যে অন্যতম। ইসলামে সার্বিকভাবে বলা হয়ে মদ্য অ-ইসলামিয়, এবং এই নীতি অনুসরণ করে মুঘল সম্রাটেরা বহুকাল ধরে প্রচারের তাপমাত্রা বাড়াতে শুরু করেছেন। উদাহরণস্বরূপ ১৫৯০ সালে জৈন সাধু শান্তিচন্দ্র লিখে গিয়েছেন কিভাবে আকবর ‘banned liquor, which ought to be universally reviled’। নিজে চরম মদ্যপায়ী হয়েও জাহাঙ্গির মদ্যপানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞা বহুবার জারি করার চেষ্টা হয়েছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি।

No comments: