Monday, September 17, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৪৮ - অড্রে ট্রুস্কে

১৬৬৯ সালে আওরঙ্গজেব কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরের বেশ বড় অংশ ভেঙ্গে ফেলেন। এই মন্দিরটি আকবরের সময় তৈরি হয়েছিল রাজা মান সিংহের উদ্যোগে। মান সিংহের প্রপৌত্র রাজা জয় সিংহ যদিও শিবাজীকে দরবারে ধরে নিয়ে এসেছিলেন, অনেকের ধারনা গৃহবন্দী শিবাজীকে পালিয়ে যেতেও তিনি সাহায্য করেছিলেন। ১৬৬৯ সালে বেনারসের জমিদারদের মধ্যে বিশ্বনাথ মন্দির নিয়ে যে লড়াই হয়, তাদের মধ্যে অনেকেই শিবাজী পলায়ন কাণ্ডে যুক্ত ছিলেন।
১৬৭০ সালে আওরঙ্গজেব মথুরার কেশব দেব মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দ্যান। এটি ১৬১৮ সালে বীর সিংহ বুন্দেলার তৈরি। এবং এই ঘটনাটা ঘটেছিল একই যুক্তিতে, রাজনৈতিক কারণে। শিবাজীর পলায়ন কাণ্ডে মথুরার ব্রাহ্মণদের অনেকেই যুক্ত ছিল। আর এই মন্দিরটা আওরঙ্গজেবের প্রতিদ্বন্দ্বী দারা শুকোর পৃষ্ঠপোষণা পেত। এছাড়াও ১৬৬০ এবং ৭০ সালে জাঠ বিদ্রোহে মুঘলদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। তার পরের বছরগুলিতে একই কারণে যোধপুর, খাণ্ডালা এবং অন্যান্য যায়গায় আওরঙ্গজেব মন্দির ধ্বংস করেন।
বিশ্বনাথ এবং কেশব দেব মন্দিরের পুরোনো ভিতে মসজিদ তৈরি হয়, যদিও এই মসজিদ তৈরির পিছনে অন্য প্রেক্ষিত রয়েছে। জ্ঞানবাপী মসজিদ আজও বেনারসে ভাঙ্গা মন্দিরের কাঠামো ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এই নতুন ভাবে তৈরি করার বিষয়টা আদতে মুঘল শাসকদের পক্ষ থেকে বিরোধীদের কাছে ধর্মীয় মোড়কে পাঠানো রাজনৈতিক বক্তব্য - রাষ্ট্রের বিরোধিতা করার ফল কি ফলতে পারে। জ্ঞানবাপী মসজিদ আওরঙ্গজেবের সময়ে তৈরি হয়, কিন্তু এর পৃষ্ঠপোষক আজও অজানা এবং মুঘল নথিতে এই কাঠামোর কোন উল্লেখ নেই।
মথুরার কেশব দেব মন্দিরের যায়গায় তৈরি মসজিদের সরাসরি পৃষ্ঠপোষক ছিলেন আওরঙ্গজেব। এর একটা কারণ হল জাঠ বিদ্রোহে মুঘল সেনাপতি আবদুল নবি খান নিহত হন, তিনি মথুরার একটি মসজিদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। আবদুল নবির মৃত্যুর মাত্র আট মাস পরে মথুরার মসজিদ সম্রাটকে নতুন পৃষ্ঠপোষক পেল আর কেশব দেব মন্দির ধুলোয় লুটোল।
---
আমরা যখন মুঘল রাষ্ট্রের হিন্দু মন্দির ধ্বংসের নীতি যুক্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছি, সে সময় যদি আমরা মধ্যযুগের দিকে তাকাই দেখতে পাব কোন বিশেষ ধর্মস্থান আক্রমনের পিছনে কোন বাস্তববাদী রাজনীতি কাজ করছে, সে বিষয়ে সে সময়ের মানুষেরা খুব বেশি চিন্তিত ছিলেন না। হিন্দু এবং জৈন চিন্তকেরা ধরেই নিয়েছিলেরন কলি যুগে এসব ইল্লুতে কাণ্ড ঘটবেই। মুসলমানেরা মন্দির ধ্বংসকে জেহাদ বা অন্য কোন ধর্মীয় মোড়ক পরিয়েছিলেন। ইসলামি বর্ণনাকারীদের এই ঝোঁক থেকেই স্পষ্ট হয় সরকারি স্তরে ধর্মস্থানে ধ্বংসকরার উদ্যম ইসলামি আইনে জায়েজ নয়, অথচ এই কাজ ইসলামের প্রচারের জন্যে করা হয়েছে এই কথা বলাই হয়েছে বরাবর। এই যুক্তি কৃষ্টিগতভাবে হয়ত সহি, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে আওরঙ্গজেবের সময়ে মন্দির ধ্বংসের ঐতিহাসিক কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা মুশকিল।

No comments: