(ছবিতে পাদসানামায় দারা শুকোর বিবাহের কিছু ছবি)
জ্ঞানচর্চা ছাড়াও সাধারণত মুঘল শাহজাদাদের ছোটবেলা কাটত ভাইদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় পরিবেশে, এবং আওরঙ্গজেবের ছোটবেলা এই প্রথা থেকে বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রমী ছিল না।
শাহজাহানের চার সন্তান ছোটবেলা থেকেই সিংহাসনের জন্যে নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। মুঘলেরা মধ্য এশিয়ার পরম্পরার আদিবাসী সমাজের নীতি, নেতার প্রত্যেক পুরুষ সন্তান(আত্মীয়রাও গণ্য হত) সিংহাসন আর রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্যে সমভাবে যোগ্য – এই প্রথা উত্তরাধিকার সূত্রে মান্য করত। সম্রাট আকবর এই উত্তরাধিকারের তালিকাটি শুধু আইনি সন্তানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দ্যান ভাইপো এবং খুড়তুতো ভাইদের এই প্রতিযোগিতার বাইরে বার করে দিয়ে। এইউ প্রতিযোগিতায় জন্মক্রম বিবেচ্য ছিল না(অর্থাৎ বড় ছেলেই সিংহাসনে বসবে এই ধারনাটি তারা মান্য করত না)। জৈষ্ঠাধিকারের প্রথা না থাকায় শাহজাহানের আকর্ষনীয় ময়ূর সিংহাসন এক দিন হয়ত আওরঙ্গজেবের অধিকারেও আসতে পারে, যদি তিনি তার অন্যান্য ভাইকে সিংহাসন দখলের প্রতিযোগিতায় কিস্তি মাত করতে পারেন। ছোটবেলায় তার ভাইদের থেকে তিনি কতটা আলাদা সে চরিত্র সর্বসমক্ষে দ্যাখানোর সুযোগ আওরঙ্গজেবের সামনে এসেগিয়েছিল(এবং তিনি যে সুযোগ সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগান)।
শাহজাহান প্রকাশ্যেই তার জৈষ্ঠপুত্রের দিকে প্রকাশ্যেই ঢলে ছিলেন। দারা শুকোর প্রথম বিবাহ উৎসব মুঘল ইতিহাসের সব কটি বিবাহের জাঁকজমক ম্লান করে দ্যায়। ১৬৩৩ সাল পর্যন্ত যে কোন মুঘল বিবাহে ৩২ লক্ষ টাকা ব্যয় হয় নি। এই পরিমান মুঘল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ইওরোপিয় মুসাফির পিটার মুণ্ডির বর্ণনায় আগরার যমুনাপারের আকাশে বাজির প্রদর্শনী আধ কিলোমিটার দূর থেকে দ্যাখা গিয়েছে। উইন্ডসর ক্যাসলে রাখা পাদশানামায় আলোচ্য বিয়ের ছবি আমাদের মুঘল ঔজ্জ্বল্য স্মরণ করিয়ে দ্যায়। রাজকীয় বাদকবাহিনী, উপহারবাহকদের চিত্র, শুভচিন্তক আর আমলাদের ভিড় শাহজাহানের প্রিয়তম সন্তানের উজ্জ্বল রত্নখচিত রাজকীয় বিবাহের অত্যুচ্চ নিদর্শন। আওরঙ্গজেব সে সময় চৌদ্দ। শোনাযায় তিনিও এই বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন, অথচ পাদশানামার হাজারো বিবাহের মিছিলের ছবিতে তিনি প্রবেশ করার বিন্দুমাত্র সুযোগ পান নি।
---
বড় ভায়ের বিবাহের কয়েক মাস পরে আওরঙ্গজেব বাবার চোখে উদ্ভাসিত হবার একটা পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগালেন তীব্রভাবেই। সাম্রাজ্যের চাপ কাটাতে শাহজাহান হাতিদের লড়িয়ে দিয়ে আহ্লাদের সময় কাটাতেন। সুধাকর এবং সুরতসুন্দর(মুঘল সম্রাটেরা হাতিদের দেশিয় ধারায় নাম রাখতেই পছন্দ করতেন) নামে(দুটিই বাংলার) হাতি মুখোমুখি হল লড়ায়ের জন্যে এবং চার শাহজাদা লড়ায়ের ক্ষেত্রে ঘোড়ায় চড়ে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে। হঠাতই সুধাকর আওরঙ্গজেবের দিকে পাগলপারা হয়ে ছুটে আসতে লাগল। আওরঙ্গজেব হাতিটির মাথা লক্ষ্য করে হাতের বল্লমটি ছুঁড়লেন। এতে হাতিটি আরও রেগে গেল। তার বিশাল দাঁত দিয়ে সে আওরঙ্গজেব্বের ঘোড়ায় আঘাত করতেই সেটি মাটিতে পড়ে গ্যাল, সঙ্গে আওরঙ্গজেবও। দূরে এই ঘটনা দেখতে থাকা দাদা শাহ শুজা এবং প্রভাবশালী রাজপুত অভিজাত রাজা জয় সিংহ তার দিকে ছুটে আসতে চাইছিলেন, কিন্তু বিপুল গোলোযোগে তারা আসতে পারছিলেন না। শেষে সুরতসুন্দর এবং অন্যান্য কর্মচারী এসে সুধাকরকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
---
বড় ভায়ের বিবাহের কয়েক মাস পরে আওরঙ্গজেব বাবার চোখে উদ্ভাসিত হবার একটা পড়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগালেন তীব্রভাবেই। সাম্রাজ্যের চাপ কাটাতে শাহজাহান হাতিদের লড়িয়ে দিয়ে আহ্লাদের সময় কাটাতেন। সুধাকর এবং সুরতসুন্দর(মুঘল সম্রাটেরা হাতিদের দেশিয় ধারায় নাম রাখতেই পছন্দ করতেন) নামে(দুটিই বাংলার) হাতি মুখোমুখি হল লড়ায়ের জন্যে এবং চার শাহজাদা লড়ায়ের ক্ষেত্রে ঘোড়ায় চড়ে আলাদাভাবে দাঁড়িয়ে। হঠাতই সুধাকর আওরঙ্গজেবের দিকে পাগলপারা হয়ে ছুটে আসতে লাগল। আওরঙ্গজেব হাতিটির মাথা লক্ষ্য করে হাতের বল্লমটি ছুঁড়লেন। এতে হাতিটি আরও রেগে গেল। তার বিশাল দাঁত দিয়ে সে আওরঙ্গজেব্বের ঘোড়ায় আঘাত করতেই সেটি মাটিতে পড়ে গ্যাল, সঙ্গে আওরঙ্গজেবও। দূরে এই ঘটনা দেখতে থাকা দাদা শাহ শুজা এবং প্রভাবশালী রাজপুত অভিজাত রাজা জয় সিংহ তার দিকে ছুটে আসতে চাইছিলেন, কিন্তু বিপুল গোলোযোগে তারা আসতে পারছিলেন না। শেষে সুরতসুন্দর এবং অন্যান্য কর্মচারী এসে সুধাকরকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য দারাশুকোকে এই জীবনহানিকর ঘটনার আশেপাশে দ্যাখা যায় নি। লিখিত ইতিহাস এই ঘটনায় তার কোন ভূমিকা থাকার বর্ণনা দ্যায় নি। দারাকে নিয়ে যে সব মুঘল মিনিয়েচার পাওয়া গিয়েছে, তাতে তার যুদ্ধে যাওয়ার মানসিকতা থেকে দূরে হারেম এবং আভিজাতিক ঔজ্জ্বল্যে কাটানোর মানসিকতার প্রমান পাওয়া গিয়েছে।
No comments:
Post a Comment