কি কি বই – একটি প্রবন্ধ
আমরা আওরঙ্গজেবের জীবনীটি দাঁড় করিয়েছি আধুনিক এবং প্রাগাধুনিক ঐতিহাসিকদের কাজের ওপর ভিত্তি করে। কোন কোন বইএর প্রতি ঋণী এই লেখাটা তৈরি করতে পারলে আমি একই সঙ্গে বোঝাতে পারব আওরঙ্গজেবের জীবনী নির্মানের জন্যে কোন কোন বই পড়া দরকার। আমি পাণ্ডুলিপির মহাফেজখানা খুব কম ব্যবহার করেছি, আমার অধিকাংশ প্রাথমিক সূত্রই হল ছাপা সংস্করণ। যারা আরও গভীরে যেতে চান, নির্দিষ্ট কিছু উদ্ধৃতি ইত্যাদির সূত্র জানতে, তাদের জন্যে এই প্রবন্ধের সঙ্গে আরও একটা প্রবন্ধ জুড়ে দিয়েছি।
---
আমি প্রথমেই জানিয়েছি এই কাজের মুল সূত্র হল ফারসি ইতিহাস। আওরঙ্গজেবের আগের সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিষয়ের ইতিহাস শাহজাহানের সময়ের বা তার পরের বইগুলি থেকে আহরিত যেমন আবদুল হামিদ লাহোরির পাদশানামা, ইনায়ত খানের শাহজাহাননামা, মহম্মদ সালেহ কম্বুর অমলইসালিহ এবং তবতাবায়ির শাহজাহাননামা।
---
আমি প্রথমেই জানিয়েছি এই কাজের মুল সূত্র হল ফারসি ইতিহাস। আওরঙ্গজেবের আগের সময়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার বিষয়ের ইতিহাস শাহজাহানের সময়ের বা তার পরের বইগুলি থেকে আহরিত যেমন আবদুল হামিদ লাহোরির পাদশানামা, ইনায়ত খানের শাহজাহাননামা, মহম্মদ সালেহ কম্বুর অমলইসালিহ এবং তবতাবায়ির শাহজাহাননামা।
আওরঙ্গজেবের সময়ের ইতিহাস বেশ কিছু লেখক লিখেছেন, আবদুল হাই এবং খাদিম হুসেইনের সুসম্পাদনায় মহম্মদ কাজিমের আলমগিরিনামা(কলকাতা ১৮৬৮)য় একমাত্র আওরঙ্গজেবের সরকারিভাবে প্রথম জীবন এবং দরবারের ইতিহাস পাই। বখতাবর খানের(মৃ ১৬৮৫) মিরাটঅলআলম একটি সাধারণ ইতিহাস বই যেখানেও আমরা আওরঙ্গজেবের প্রথম জীবন পাই। পার্সপেক্টিভস অন মুঘল ইন্ডিয়া(করাচি)য় সাজিদা আলভি জানাচ্ছেন আলমগিরিনামা থেকেও কিছু বেশি সূত্র আমরা মিরাট...এ পাই, কিন্তু বইটি খুব বেশি পঠিত নয়। আকিল রাজি খান(মৃ ১৬৯৬/৭)এর ওয়াকিয়তইআলমগিরি সিংহাসন দখলের লড়ায়ের তথ্য পাওয়ার জন্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ, আমি মৌলভি জাফর হাসানের (দিল্লি ১৯৪৬) সংস্করণটি ব্যবহার করেছি। এছাড়াও কিছু কাজ ছাপা হয় নি যেমন হাতিম খানের আলমগিরনামা, মুহম্মদ মাসুমের তারিখইশাহজাহানি এবং আবুল ফজল মামুরির তারিখইআওরঙ্গজেব, আমি বইটি লেখার সময় দেখতে পেরেছি।
আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর এক দশক পর বেশ কিছু বই লেখা হয়। কাফি খানের মুন্তাবাখাবঅললুবুব(১৭৩০), সাকি মুসতায়েদ খানএর মসিরইআলমগিরি(১৭১০) বহু ঐতিহাসিক ব্যবহার করেছেন, অংশত কারণ অনুবাদের সহজলভ্যতা; যথাক্রমে অনুবাদ করেছেন মনিউল হক(করাচি ১৯৭৫) এবং যদুনাথ সরকার (কলকাতা ১৯৪৭), আরও বড় কারণ এইদুটি বই আওরঙ্গজেবের জীবনের অধিকাংশ সময়ের ঘটনা এই দুটিতে উল্লিখিত হয়েছে। তাদের জন্ম তারিখ এবং বিপুল অলঙ্কারের ব্যবহারের জন্যে আমি খুব সাবধানে সেগুলির তথ্য কাঁচিয়ে তুলেছি এবং তথ্যগুলো অন্যান্য সূত্রের সঙ্গে তুলনা করে নিয়েছি। কাফি খানের অনুবাদ হিসেবে এলিয়ট আর ডসনের বইটার তথ্যকে আমি সর্বাংশে বর্জন করেছি। মাসির... যেহেতু খুব সর্বজনগ্রাহ্য তাই তার অনুবাদ হিসেবে যদুনাথ সরকারের কাজটাই উল্লেখ করেছি এটা মাথায় রেখে যে যদুনাথ সরকারের অনুবাদ অসম্পূর্ণ এবং বেশ কিছু ভ্রান্তিও আছে(এইটির অনুবাদ পড়তে ২০১৬ সালের ইওরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউটের পিএইচডি প্রবন্ধ Tilmann Kulkeর A Mughal Munsi at Work অনুসরণ যোগ্য)।
ভীমসেন সাক্সেনার তারিখইদিলখুসা দাক্ষিনাত্যের অসাধারণ তথ্যাবলী উল্লিখিত হয়েছে, আমি যদুনাথ সরকারের অনুবাদের সঙ্গে ব্রিটিশ লাইব্রেরির পাণ্ডুলিপিটি(Or. 23) মিলিয়েছিলাম এবং কয়েকটি পাতা নতুন করে অনুবাদ করে নিয়েছি। নগরের ব্রাহ্মণ এবং যোধপুরের মুঘল প্রশাসনিক আমলা ঈশ্বরদাস ফুতুহাতইআলমগিরি লিখেছিলেন ১৭০০ সালে, যদিও ভুলভাবে যদুনাথ একে ১৭৩০এর কাজ বলেছেন। ফুতুহাত (বরোদা ১৯৯৫)এ যদিও কিছু ঐতিহাসিক তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আছে কিন্তু বেশ কিছু প্রাসঙ্গিক তথ্য আছে যা অন্যান্য সূত্রে পাওয়া যায় না। ১৭৫৪ সালের এক্কেবারেই কম ব্যবহার হওয়া মিরাটইআহমদি আওরঙ্গজেবের গুজরাট সময়ের জন্যে ব্যবহার করা যায়। আবদুর রহিম এবং মির্জা আশরফ আলির(কলকাতা ১৮৮৮-৯১) সম্পাদনায় শাহ নাওয়াজ খানের মসিরউলউমরায় ১৭৮০ পর্যন্ত মুঘল অভিজাতদের খুব সংক্ষিপ্ত জীবনী পাই। এর বেভারিজ আর বাণীপ্রসাদের আরও একটি অনুবাদ আছে(পাটনা ১৯৭৯)।
ফারসি কাজ ছাড়া আমি বেশ কিছু হিন্দি কাজ ব্যবহার করেছি যেমন ভূষণের শিবরাজভূষণ(অনুবাদের জন্যে ধন্যবাদ এলিসন বুশ)। জ্ঞান চন্দ্রের গবেষণায় দেশি ভাষায় জৈন লেখকদের কাজ দেখেছি(এর জন্যে বিশদে দেখুন আকরম লারি আজাদএর Akram Lari Azad’s Religion and Politics in India [Delhi, 1990], 234–37 বইটি)। আমি কিছু পরোক্ষ সূত্রে শিখ ইতিহাস দেখেছি। রাজপুত দরবারের কিছু হিন্দি কাজে আওরঙ্গজেবের জীবনের বহু বিশদ ঘটনা উল্লিখিত হয়েছে; এর সঙ্গে লক্ষ্মীপতির সংস্কৃত কাজ অবদুল্লাচরিত এবং নৃপতিনীতিগর্বিতভৃত্ত আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের কথা বলে।
ঐতিহাসিকেরা বহুকাল ধরেই আওরঙ্গজেবের জীবনের নানান তথ্য আহরণ করছেন মুসাফিরদের লেখা থেকে যেমন উইলিয়াম আর্ভিংএর অনুবাদে নিকোলি মানুচির স্তোরিয়া দা মোগোর(লন্ডন ১৯০৭-৮), আর্চিবলড কনস্টেবল এবং ভিনসেন্ট স্মিথের অনুবাদে ফ্রানসিস বার্নিয়ের ট্রাভলস ইন দ্য মোঘল এম্পায়ার(লন্ডন ১৮৮৯) এবং ভি বলের অনুবাদে জাঁ ব্যাপটিস্ট তাভার্নিয়ের ভয়েজেস(লন্ডন ১৮৮৯)। এখানে খুব বিখ্যাত নন এমন কিছু মুসাফিরদের কাজ ব্যবহার করেছি Gemelli Careri, Peter Mundy, William Norris, John Ovington, Jean de Thevenot। বিদেশি মুসাফিরেরা মুঘল আমলের দারুণ বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু গবেষকেরা ভারতীয় সূত্রের থেকেও বিদেশিদের কাজ থেকে নিষ্কর্ষ তথ্যে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, এটা মনে না রেখেই, কিভাবে পশ্চিমি মুসাফিরেরা একই সঙ্গে বাস্তব এবং খোশখেয়ালকে একেঅপরের পিঠেপিঠি ব্যবহার করেছেন।
No comments:
Post a Comment