(মুঘল দরবারের ছবি)
তাঁর পূর্বজদের মধ্যে দিয়ে আওরঙ্গজেব বিপুল বিশালঐতিহ্যসম্পন্ন মুঘল কৃষ্টিগত ও সামাজিক প্রথা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হন। দশকের পর দশক জুড়ে ভারতের মুঘল সম্রাটেরা বিপুল বিশাল সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাসাদ বানিয়েছেন, কবি আর জ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষণা করেছেন, বিশাল গ্রন্থাগার বানিয়েছেন ও বিপুল পাণ্ডুলিপি সংরক্ষণ করেছেন, নানান ধরণের দরবারি প্রথাকে উর্ধ্বেতুলে ধরেছেন, চিত্রকর আর কারিগরদের প্রশ্রয় দিয়েছেন। আওরঙ্গজেব এইগুলির বহুকটি বৌদ্ধিক, শৈল্পিক এবং স্থাপত্যগত জ্ঞানচর্চার রক্ষনাবেক্ষণ করেছেন, তেমনি বেশ কিছুকে বাদও দিয়েছেন, কিছু তার মত করে সম্পাদনা করে নিয়েছেন। তিনি সার্বিক বৃহত্তর মুঘল পরম্পরা থেকে বিচ্যুত হন নি। তাঁর মত করে প্রথা তৈরি করে নিয়েছেন, যেগুলি তাঁর মতই স্বতন্ত্রসূচক।
---
রাজত্বের শুরুর দিকে আওরঙ্গজেব কৃষ্টিগত এবং দরবারি প্রথা ইত্যাদি শাহজাহান এবং অন্যান্য পূর্বজর প্রথাগুলি অনুসরণ করে চলছেন।
---
রাজত্বের শুরুর দিকে আওরঙ্গজেব কৃষ্টিগত এবং দরবারি প্রথা ইত্যাদি শাহজাহান এবং অন্যান্য পূর্বজর প্রথাগুলি অনুসরণ করে চলছেন।
উদাহরণস্বরূপ, সম্রাট হবার প্রথম কিছু বছর আওরঙ্গজেব তাঁর প্রথমা স্ত্রী দিলিরাস বানু বেগম ১৬৫৭ সালে মারা যান তাঁর পঞ্চম সন্তানের জন্ম দেওয়ার সময় প্রসব জটিলতায়। মৃত স্ত্রীর জন্যে আওরঙ্গাবাদে তিনি একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে দ্যান। সাদা উজ্জ্বল পাথরের তৈরি সমাধিস্তম্ভ, যেটির নাম বিবি কা মকবরা (রাজ্ঞীর সমাধি)। স্তম্ভটা তাজমহলের অর্ধেক আকারের, বাইরে স্ট্যাকোর কাজ। এটি আওরঙ্গজেবের মায়ের স্মৃতিস্তম্ভ তাজমহলের অক্ষম অনুসরণ। জনসাধারণ আজও মন্তব্য করে এটা গরীব মানুষের তাজ। এতে যেমন আওরঙ্গজেব তাঁর কাজকেও সম্মান জানালেন না, তেমনি তার স্ত্রীর প্রতিও অসম্মান জানানো হয়।
মুঘল সাম্রাজ্যে বহু প্রাচীন হিন্দু রাজাদের দরকারি প্রথা অনুসৃত হত। সিংহাসন আসীন হবার প্রথম দশ বছরে হিন্দুদের নানান প্রথা, যা পরে মুঘল দরবারি প্রথা হিসেবে গৃহীত হয়েছিল, আওরঙ্গজেব অনুসরণ করতেন। যেমন সম্রাট দৈনিকভাবে তার প্রাসাদের বারান্দায়র ঝরোখায় দাঁড়িয়ে প্রজাদের দর্শন দেওয়া, অথবা সম্রাটের সৌর এবং চান্দ্র জন্মদিনে তাঁকে দাঁড়িপাল্লায় বসিয়ে সোনা বা রূপোর মুদ্রায় ওজন করে, সেই মুদ্রাগুলো গরীবদের মধ্যে বেঁটে দেওয়া ইত্যাদি। এইগুলি হিন্দু প্রথা, আকবরের সময় গৃহীত হয়।
আওরঙ্গজেব ব্যক্তিগতভাবে হিন্দু ধার্মিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। উদাহরণস্বরূপ ১৬৬১ সালে তিনি মোহান্ত আনন্দ নাথকে চিঠি লিখে যোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থার কিছু অষুধের অনুরোধ করেন। ১৬৬০ সালে তিনি পাঞ্জাবের গ্রামে আনন্দ নাথের জায়গিরের পরিমান বাড়িয়ে দ্যান। ঠিক যেমন তাঁর পূর্বজ শাহজাহান হিন্দু সন্ন্যাসী জদ্রুপএর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন, আর আকবর মথুরার বৈষ্ণব সমাজকে জায়গি দিয়েছিলেন।
বহু বছর আওরঙ্গজেব তার আনন্দচর্চাতেও তাঁর পূর্বজদের তৈরি ব্যবস্থা অনুসরণ করতেন। মুঘল সম্রাটদের প্রিয় গ্রীষ্মাবাস কাশ্মীরে সময় কাটাতেন এবং গানবাজানায় মন দিতেন। সে সমযের ঐতিহাসিক, আজকে খুব কম পঠিত, বক্তাবর খাঁএর লেখায় পাই সংগীত নিয়ে আওরঙ্গজেবের বিস্তৃত জ্ঞানের কথা। ১৬৬৬ সালের ফাকিরুল্লার রাগ দর্পণে আওরঙ্গজেবের প্রিয় গায়ক এবং বাদকদের নামোল্লেখ আছে।
No comments:
Post a Comment