বন্ধনমুক্ত আওরঙ্গজেব
I am what time, circumstance, history, have made of me, certainly, but I am, also, much more than that. So are we all
- জেমস বল্ডউইন, আমেরিকিয় লেখক, ১৯৫৫
- জেমস বল্ডউইন, আমেরিকিয় লেখক, ১৯৫৫
জনগণের স্মৃতিতে যে আওরঙ্গজেব বসবাস করেন, তিনি আর ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেবের ছবির মিল, মাটিতে পড়া সম্রাটের ছায়াটুকুই – এর বেশি কিছুই নয়। এই গরমিলটার দিকে দৃষ্টি দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ দুটি কারণে – আগুণেচোবানো সাম্প্রদায়িক ভাবনা ছড়ানো থেকে বেরিয়ে আসা এবং ঐতিহাসিক গবেষণার মুক্তি।
ভারত ও পাকিস্তানে আওরঙ্গজেবের যে ছবি তৈরি হয়েছে, তার জন্যে দায়ি মুঘল অতীত নিয়ে উপমহাদেশের রাজনৈতিক ভাষ্য। এর আগে আমরা দেখেছি আওরঙ্গজেবকে নিয়ে দুটি ভাষ্য বাজারে চালু রয়েছে – ধর্মান্ধ আওরঙ্গজেব এবং ধার্মিক আওরঙ্গজেব। এই দুটোই বিভ্রান্তকারী – এবং বহু সময় বিধ্বংসীও বটে – যেভাবে অতীতে ধর্মান্ধ আওরঙ্গজেবকে উপস্থাপন করা হয়েছে হিন্দু আর হিন্দুস্থানের ধ্বংসকারী হিসেবে। রাজনৈতিক নেতা এবং অন্যান্যরা ভারতে এই ধারনাটা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মুসলমান বিরোধিতা এবং বিদ্বেষ চাগিয়ে তোলার জন্যে এবং ভারতীয় মুসলমানেদের দাগিয়ে দেন বিপজ্জনক বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। আওরঙ্গজেব নিজে গোঁড়া মুসলমান ছিলেন এই ধারনাটাও সমস্যার – মহম্মদ ইকবালের ভাষায় Muslim—“an Abraham in India’s idol house। এই ধারনাটির প্রতীতিটি হল মুসলমানেদের মূলত ধার্মিক বিশ্বাসেই নির্ভরতা এবং ইসলামের সঙ্গে হিন্দুত্বের সঙ্গে ইসলামের তফাত ঘোচার নয়। ভারতের ক্ষেত্রে এটার অর্থ সমঝে দেওয়া হয় মুসলমানেরা পুরপুরি ভারতীয় হতে পারে না, উল্টো দিকে পাকিস্তানের বয়ান বলে সব নাগরিককে একটা নির্দিষ্ট ধরণের ইসলামের অনুগামী হতেই হবে।
---
দ্বিতীয়ত আওরঙ্গজেবের যে ছবি সাধারণ মানুষের মনে আছে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে এই কারনেই যে আমরা যাতে তাকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই দেখতে পারি। আওরঙ্গজেব তার সময়ের মানুষ, আমাদের সময়ের নয়। আমি এর আগে বলার চেষ্টা করেছি, আওরঙ্গজেব তার সময়ের আদাব(রাজনীতি) এবং আখলাক(নৈতিক মূল্যবোধ) আর রাজনীতির বাস্তবতা অনুসরণ করেই চলার চেষ্টা করেছেন। তার ধার্মিকতার ধারনা আর তিনি যে মুঘল কৃষ্টি আত্মীকরণ করলেন, তার মধ্যেই তাঁর বিশ্বদৃষ্টি তৈরি হয়েছে। তিনি আধুনিককালের আধুনিক মনন সঞ্জাত হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব তৈরিতে উৎসাহীই ছিলেন না – বরং তিনি যাকে ন্যয় বিচার বলে ভাবতেন সেটি দেওয়ার চেষ্টা করতেন, মুঘল প্রথা অনুসরণ করতেন এবং উপমহাদেশে তাঁর পকড় বজায় রাখার উপায় বার করতেন।
---
দ্বিতীয়ত আওরঙ্গজেবের যে ছবি সাধারণ মানুষের মনে আছে তার বিরুদ্ধাচরণ করতে হবে এই কারনেই যে আমরা যাতে তাকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গীতেই দেখতে পারি। আওরঙ্গজেব তার সময়ের মানুষ, আমাদের সময়ের নয়। আমি এর আগে বলার চেষ্টা করেছি, আওরঙ্গজেব তার সময়ের আদাব(রাজনীতি) এবং আখলাক(নৈতিক মূল্যবোধ) আর রাজনীতির বাস্তবতা অনুসরণ করেই চলার চেষ্টা করেছেন। তার ধার্মিকতার ধারনা আর তিনি যে মুঘল কৃষ্টি আত্মীকরণ করলেন, তার মধ্যেই তাঁর বিশ্বদৃষ্টি তৈরি হয়েছে। তিনি আধুনিককালের আধুনিক মনন সঞ্জাত হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্ব তৈরিতে উৎসাহীই ছিলেন না – বরং তিনি যাকে ন্যয় বিচার বলে ভাবতেন সেটি দেওয়ার চেষ্টা করতেন, মুঘল প্রথা অনুসরণ করতেন এবং উপমহাদেশে তাঁর পকড় বজায় রাখার উপায় বার করতেন।
No comments:
Post a Comment