যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবিতে যুবা আওরঙ্গজেব)
(ছবিতে যুবা আওরঙ্গজেব)
মধ্য এশিয়ায় এই বিফল যুদ্ধের সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যার ফলে আররঙ্গজেবের নাম সমগ্র ইসলাম বিশ্বে ছড়িয়ে প’ড়ে তাকে রাতারাতি বিখ্যাত করে তোলে। বুখারা রাজা আবদুল আজিজ খানের নেতৃত্বে মধ্য এশিয়ার বিশ্বজয়ী আদিবাসী ঘোড়সওয়ার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুঘল বাহিনী যখন রক্ষক্ষয়ী লড়াইতে রত, এক সন্ধ্যায় সন্ধ্যের প্রার্থনা জহরের(zuhar) সময় ক্রমশ আসছে দেখে আওরঙ্গজেব বাহিনীর সেনানায়কদের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে নিজের সৈন্যের সামনে থাকা অবস্থায় ঘোড়া থেকে নেমে পড়ে, উল্টোদিকে সশস্ত্র সেনাবাহিনীকে দাঁড় করিয়ে রেখে ঠাণ্ডা মাথায় প্রথা মেনে নামাজ আদায় করেন। এই দেখে আবদুল আজিজ চিতকার করে বলে ওঠেন টু ফাইট উইথ সাচ আ ম্যান ইজ টু কোর্ট ওয়ান’স ওন রুইন এবং যুদ্ধ থামিয়ে দেন।
২৭ অক্টোবর ১৬৪৭এ আওরঙ্গজেব বলখ থেকে কাবুলে ফিরে এলে মুলতানের সুবাদার নিযুক্ত হন ১৫ মার্চ ১৬৪৮। ১৬৫২র জুলাই পর্যন্ত এই পদটিতে থাকবেন। তবে ইতিমধ্যে তাঁকে দু’দফায় কান্দাহার অবরোধে (১৬ মে – ৫ সেপ্ট ১৬৪০, ২ মে-৯জুলাই ১৬৫২) অংশ নিতে হয়েছে। এই দুটি শাহজাহানের কবল থেকে পার্সিরা কেড়ে নিয়েছিল। তৃতীয় অবরোধটি(২৮ এপ্রিল -২৭ সেপ্ট ১৬৫৩) আরও অতিরিক্ত ব্যয় করে দারাকে দিয়ে করানো হয় কিন্তু ব্যর্থ হয়।
দ্বিতীয়বার তিনি দাক্ষিনাত্যের সুবাদারি করতে যান ১৭ আগস্ট ১৬৫২য়। এটি আওরঙ্গজেবের জীবনে গুরুত্বপুর্ণতম সময়। জুলিয়াস সিজার গল দেশে গিয়ে যে শিক্ষা অর্জন করেছিলেন, আওরঙ্গজেব সেই শিক্ষা পেলেন দাক্ষিনাত্যে গিয়ে। আদাবইআলমগিরিতে তাঁর লেখা যে কয়েকশ চিঠিতে আগামী ছ বছরে অনুষ্ঠিতব্য বহুবর্ণিল নানান ঘটনার উল্লেখ পাই – কিভাবে তিনি পৌনপুণিক আর্থিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেলেন, কিভাবে তিনি কড়া হাতে দাক্ষিনাত্য শাসন করে মানুষকে আনন্দ দিতে পারলেন, কিভাবে তিনি বেছে বেছে তার চারপাশের আমলাদের তার ওপর নির্ভরশীল করলেন ইত্যাদি। নজরদারি আর নিয়মিত কুচের মধ্যে রেখে সামরিক বাহিনীকে চাঙ্গা করে রাখতেন। তিনি এক চিঠিতে লিখছেন, যেহেতু তাঁকে দাক্ষিনাত্যে সব সময়ই সেনাবাহিনী নিয়ে অভিযানে যেতে হত, তিনি নিয়মিত খেলাধুলা পছন্দ করতেন, ঘোড়সওয়ারি করতেন এবং সারাক্ষণ নিজেকে চাঙ্গা রাখতেন।
তাই তাকে আমরা ১৬৫৮ সালে আবিষ্কার করি শাহজাহানের সিংহাসনে আরোহন করার একমাত্র সুযোগ্য পুত্র হিসেবে।
No comments:
Post a Comment