Monday, September 17, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৪৬ - অড্রে ট্রুস্কে

১৬৭২ সালে হিন্দুদের সমস্ত রাষ্ট্র থেকে দান করা জমি ফেরত নিয়ে, মুসলিমদের দেওয়া সমস্ত জমি রেখে দেওয়ার ফরমান জারি করেন আওরঙ্গজেব, সম্ভবত উলেমাদের শান্ত করানোর জন্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এই ফরমানটা যদি কড়া হাতে প্রয়োগ করা হয় তাহলে হিন্দু এবং জৈন ধর্মীয় সঙ্গঠনগুলি সঙ্কটে পড়বে। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য অন্য কিছুর দিকে ইঙ্গিত করছে। আলোচনা করা যাক।
মুঘল সাম্রাজ্যজুড়ে জমি দানের নতুন নির্দেশিত নীতি খুব ভাল প্রযুক্ত হয় নি, বিশেষ করে রাজধানী থেকে দূরের এলাকাগুলিতে। যেমন বাংলায়। এখানে আগের মুঘল সময়ের তুলনায় ১৬৭২এর ফরমানের পরের সময়ে মুঘল আমলারা প্রচুর জমি দান করেছিলেন। প্রচুর ব্যক্তিগতকে দানের উদাহরণে আমরা বুঝতে পারি এই ফিরিয়ে নেওয়ার ফরমান যতটা না প্রায়োগিক তার বেশি আলঙ্কারিক। গুজরাটে পারসি বৈদ্যদের পরিবারকে, আওরঙ্গজেবের রাজত্বের শেষের দিকে ১৭০২ সালে দেওয়া জমি দানের তথ্য পাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে আরও অনেক উদাহরণ দেওয়াই যায়, তাতে প্রমান হয় এই নীতির বাস্তবিক অকার্যকারিতা। এই সব উদাহরণ মাথায় রেখে কয়েকজন আধুনিক ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেন, ১৬৭২এর এই ফরমান সাম্রাজ্যেরে অধিকাংশ এলাকাতেই প্রযুক্ত হয় নি, পাঞ্জাব ছাড়া এটি কাগুজে নীতি হিসেবেই থেকে গিয়েছে।
হিন্দুমন্দির নিয়ে তার উদ্বেগ আরও কিছু ঘটনায় আমরা পাচ্ছি। ১৬৫৯ সালের বেনারস ফরমান, যেটি নিয়ে আমি আগে বিশদে আলোচনা করেছি, সেখানে আওরঙ্গজেব বলছেন ইসলামি আইনে(শরিয়ত) নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, পুরোনো মন্দির ভাঙ্গা যাবে না, এরই সঙ্গে বলা হয়েছে নতুন মন্দির তৈরিও করা যাবে না। রিচার্ড ঈটন বলছেন এই নিষেধাজ্ঞা শুধুই বেনারসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল, কেননা আওরঙ্গজেবের আমলে ভারতজুড়ে বহু জায়গায় প্রচুর হিন্দুমন্দির তৈরি হয়েছে। তবুও এই ফরমান অতীতের মুঘল নীতি থেকে বিচ্যুতি – সেটা অস্বীকার করার নয়, যেখান থেকে আমরা আওরঙ্গজেবের হিন্দুমন্দিরের নিরাপত্তা দেওয়ার ইচ্ছে বিষয়ের জটিলতা এবং সীমাবদ্ধতার আঁচ পাই।
মন্দির বিনাশী
It is not lawful to lay waste ancient idol temples, and it does not rest with you to prohibit ablution in a reservoir which has been customary from ancient times.
- দিল্লির সিকন্দর লোধিকে দেওয়া কাজিদের পরামর্শ
মুঘল রাজত্বে হাজারো হাজারো হিন্দু মন্দির, যদিও সব নয়, আওরঙ্গজেবের মৃত্যু পর্যন্ত টিকেছিল।
কেউ জানে না আওরঙ্গজেবের রাজত্বে কতগুলো মন্দির ধ্বংস অথবা লুঠপাট হয়েছিল এবং আমরা এ তথ্য আজ সত্যিই জানতে পারব না। এ বিষয় নিয়ে কাজ করা অন্যতম জ্ঞানী রিচার্ড ঈটন বলছেন আওরঙ্গজেবের রাজত্বে মোটামুটি বারোটার কাছাকাছি মন্দির ধ্বংস হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটা সম্রাটের সরাসরি নির্দেশে। অন্য দিকে বেশ কিছু গবেষক বলছেন সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের ফরমান জারি করা হয় ১৬৫৯ এবং ১৭০৬ সালে (দ্বিতীয় ফরমানটার প্রয়োজন হয়েছিল কারণ প্রথমটা ব্যবহারই হয় নি)। আওরঙ্গজেব মন্দিরের অপবিত্রতা বিষয়ে উৎসাহী ছিলেন। ১৬৪৫ সালে তিনি জৈন ব্যবসায়ী শান্তিদাসের তৈরি চিন্তামণি পার্শ্বনাথ মন্দিরে mihrab (মসজিদের প্রার্থনা কুলুঙ্গি) তৈরির নির্দেশ দ্যান। এই ঘটনা নিয়ে ঈটনকে উদ্ধৃতি দিয়েই বলি, the evidence is almost always fragmentary, incomplete, or even contradictory। তবুও আমরা যত মন্দির ধ্বংসের কথা বলছি, তার থেকেও হয়ত কিছু বেশি মন্দির ধ্বংস হয়েছে(মোট ১২টার কাছাকাছি?)। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা একটি বিশাল বড় অতীত-অন্ধকারের দেওয়ালে ধাক্কা মারি, যেখান থেকে কোন উত্তর আসে না।

No comments: