Monday, September 24, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৪

ভূমিকা
বাংলার সওদাগরদের চরিত্র বিষয়ে ভ্যান লেউর যা বলেছেন, আমাদের গবেষণাও তাই বলছে, তারা মূলত শাসক অভিজাত নির্ভর ব্যবসায়ী ছিল(].C. van Leur, Indonesian Trade and Society, p. 204.)। বাংলার সওদাগর সম্রাটদের ক্ষমতার শীর্ষে আরোহন এবং যে মহত্ব তারা অর্জন করেছিল অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদ পর্যন্ত, তার একটা বড় কারণ তারা বাংলার নবাবদের বিপুল পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল। আমাদের পঞ্চম অধ্যায়ের আলোচনায় দেখাব কিভাবে দরবারকে ভিত্তি করে এই সওদাগর সম্রাটদের উত্থান এবং বাড়বাড়ন্ত ঘটেছিল এবং যখনই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ঘটল, পলাশীর পরবর্তী সময়ে তারা এবং তাদের সমস্ত ব্যবসা হেঁটমুণ্ড ঊর্ধ্বপদ হয়ে উদ্বায়ী হয়ে গ্যাল। আশ্চর্যের হল সম্প্রতি গুজরাট এবং সুরাটে দুজন ব্যবসায়ীর ওপর কাজ হয়েছে, সেখানে দেখা গিয়েছে তারা প্রশাসন নিরপেক্ষ হয়ে ব্যবসা বাড়িয়ে তুলেছে। গবেষকেরা দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা সরকারের পৃষ্ঠপোষণা ছাড়াই নিজেদের খাড়া রাখতে সাহায্য করেছে(M.N. Pearson, Merchants and Rulers; Ashin Das Gupta, Indian Merchants)। ঠিক এই উদাহরণের বিপরীতে আমরা দেখাতে পারছি, কিভাবে হাতে হাত ধরে শাসক অভিজাত আর ব্যবসায়ীরা এক যোগে কাজ করেছ্যিল।

এই বইতে আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, ব্রিটিশদের বাংলা বিজয়। মোটামুটি সব ঐতিহাসিকই পলাশীর চরিত্র এবং বিজয়ের কারণ একই ভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন – ব্রিটিশ বিযুক্তি। খুব সাম্প্রতিক গবেষনাতেও বলা হয়েছে বাংলার আভ্যন্তরীণ আর্থিক এবং রাজনৈতিক দুর্যোগের জন্যেই ব্রিটিশেরা অবশ্যম্ভাবীভাবে বাংলায় এসেছিল। এ প্রসঙ্গে বার বার বলা হয়েছে, ব্রিটিশদের পক্ষে কোন রকম রণনৈতিক পরিকল্পনা ছিল না, এবং বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে পরাজিত করতে পলাশীর চক্রান্তের শুরু করতে এবং ঘটাতে তাদের ভূমিকা ছিলই না। তারা বলেন যে ইওরোপিয়রা ব্যবসার মাধ্যমে যে বিপুল পরিমানে দামি ধাতু আনতেন, সেটির সঙ্গে বাংলার সামরিক, সওদাগর-ব্যাঙ্কার এবং জমিদারদের স্বার্থ জড়িয়েছিল। ফলে ১৭৫৬ সালে কলকাতা থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাকে শাসক অভিজাত মেনে নিতে পারে নি, তার ফলে পলাশীর চক্রান্ত ঘটয়ে ব্রিটিশকে দিয়ে প্রশাসন দখল করে উপনিবেশ তৈরি করল (P.J. Marshall, Bengal, 56, 63, 65, 67, •77, 91; C.A, Bayly, Indian Society, 49-50; Rajat Kanta Ray, 'Colonial Penetration and Initial Resistance', IHR, vol. XII, nos. 1-2, 1986, pp. 4, 6, 7, 14.)। রাজনৈতিক সঙ্কটের তত্ত্ব দেওয়া হচ্ছে এটা দেখাতে যে অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকেই অভিজাতদের সঙ্গে নবাবদের বিচ্ছিন্নতা ঘটে গিয়েছিল এবং তার ফলে নতুন শ্রেণীবিন্যাস ঘটে যায়। এটাও বলা হল, যে ব্রিটিশ দখলদারির আগে বাংলার আর্থিক দুর্গতি ঘটতে থাকে(P.J. Marshall, Bengal, p. 91)। এছাড়াও বহু ঐতিহাসিক দেখিয়েছেন ১৭৪০ এবং ৫০এর দশকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাহ্যত এবং দীর্ঘকালীন মূল্যবৃদ্ধি ঘটতে থাকে(Brijen K. Gupta, Sirajuddaullah, p. 33; K.N. Chaudhuri, Trading World, pp. 99-108', 159, 311-12; .P.J. arshall ,EastlndianFortunes, p. 35; Bengal, pp. 7r, 73, 91, 142-43, 163-64, 170)।

কিন্তু আমরা এই বইতে দেখানোর চেষ্টা করেছি ব্রিটিশ বিজয় কোনভাবেই অনিচ্ছাকৃত বা হঠাত ঘটে যাওয়া ঘটনা ছিল না। একাদশ অধ্যায়ে আমরা দেখিয়েছি, কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা স্বার্থেই পলাশী এবং বাংলায় দখলদারি ঘটেছে। ফরাসী কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসার বাড়বৃদ্ধির জন্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা মার খাচ্ছিল। তাই ফরাসীদের ধ্বংস করা(পলাশীর আগে চন্দননগর আক্রমন) যার ফলে ব্রিটিশ বিরোধী বঙ্গ-ফরাসী জোট তৈরি হওয়ার দিকে সময়টা এগোচ্ছিল সেটিও বাধাপ্রাপ্ত হয় আরেকদিকে নবাবকেও ক্ষমতাচ্যুত করার দরকার হয়ে পড়ে কারণ তিনি ব্রিটিশদের বেআইনি ব্যক্তিগত ব্যবসা আর দস্তকের যথেচ্ছ বেআইনি দুর্ণীতিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বহু অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলছিলেন নিয়মিত। ফলে কোম্পানির আমলাদের উপউপনিবেশিকতা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। বাংলার অভিজাতদের সঙ্গে ইওরোপিয়দের নতুন করে শ্রেণী সমঝোতা গড়ে ওঠার বিরুদ্ধে একটাই মন্তব্য করা যায়, যে সওদাগর সম্রাট যারা পলাশীর বিপ্লবে অন্যতম কুশলী ছিলেন, তাদের মুল রোজগার কিন্তু ইওরোপজাত ব্যবসা সঞ্জাত উদ্বৃত্ত ছিল না। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রাজনৈতিক কাঠামো আলোচনা করতে গিয়ে যে নতুন শ্রেণী সমঝোতা তৈরি হল, তার ভিত্তি হল ব্যক্তিগর স্বার্থ সাধন, কোন সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল না, এবং এই জন্যে এই সমঝোতা ক্ষণস্থায়ী হল। এছাড়াও আমরা দশম অধ্যায়ে দেখব যে সময়ের আলোচনা আমরা করছি সে সময়ে যে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটেছিল তাকে কোনো ভাবেই উল্লেখাযোগ্য এবং দীর্ঘসময়ের বলা যায় না।

No comments: