(ময়ূর সিংহাসন এবং সিংহাসনে নাদির শাহ)
ঝড়তি পড়তি মুঘল সাম্রাজ্যে যা কিছু ছিল, ১৭৩৯ সালে ইরানি লুঠেরা নাদির শাহ সেটাও লেপে পুছে নিয়ে চলে গ্যাল। নাদির শা মুঘল সম্রাট মহম্মদ শাহকে তার তরোয়ালের তলায় বন্দী করে রাখলেন আর তার সেনাবাহিনী গোটা দিল্লি শহর লুঠপাট করন খুন জখম চালাল। দিল্লির তিজোরি লুঠ হল। হাজারো বিশ্বশ্রুত হিরে জহরত ইত্যাদির সঙ্গে ছিল ময়ূর সিংহাসন এবং কোহিনুর হিরেও ভারতের বাইরে চুলে গ্যাল। আদতে নাদির শাহ শুধু দিল্লির সম্পদ লুঠলেন না, তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের সম্মানটাও লুঠে নিয়ে গেলেন।
দিল্লি অভিযানের কিছু পরেই নাদির শাহর একটি মূর্তি আঁকা হল তাতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে বিপুল পরিমানে গয়নাগাটি রত্ন্রাজি পরে থাকতে, সত্যিকারের মুঘল সম্পদ পরে থাকতে। মুঘল সাম্রাজ্য আর নাদির শাহের আক্রমনের দুর্বিসহ যন্ত্রণা অপমান থেকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি। সে সময়ের এক মুসলমান বুদ্ধিজীবি মন্তব্য করলেন, sultanate of Delhi had become a child’s game।
মুঘল সাম্রাজ্য খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলেছিল সিপাহি যুদ্ধোত্তর ১৮৫৭র ভারতের জাতীয়করণ না হওয়া পর্যন্ত। কিন্তু চলছিল সাম্রাজ্যের আভরণসূচক নাম নিয়েই। ১৭৬৫র পর থেকে ভারতের শাসক ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অবনত মুঘলদের সমস্ত ধরণের সার্বভৌমত্ব বলতে যা বোঝায় জমির দখল, সেনাবাহিনী এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তাদের নিয়মতান্ত্রিক শাসকে পরিণত করে। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের পূর্বজ দ্বিতীয় আকবর শাহ (রাজত্ব১৮০৭-৩৭)র অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে তার রোজের ক্ষুন্নিবৃত্তি নিবৃত্ত করতে ভারতে ঘুরতে আসা বিদেশিদের তার সঙ্গে দ্যাখা করার জন্যে হাত পেতে প্রণামী চাইতেন!
---
গুণীরা একমত হতে পারেন নি কেন মুঘল সাম্রাজ্যের পত ঘটল, তার কারণই বা কি এবং সত্যি কোন সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে ফাটল কবে ধরতে শুরু করে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একটা বিষয়ে একমত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্যে আওরঙ্গজেবই মূলত দায়ি। এই যুক্তিটা আমার কেমন কেমন লাগে কারণ তাঁর আমলেই মুঘল সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে সব থেকে বেশি এলাকায় বিস্তৃতি ঘটেছিল। কিন্তু আওরঙ্গজেবের সাফল্যই হয়ত এর পতনেরও কারণ হতে পারে। তিনি হয়ত মুঘল সাম্রাজ্য এত বিপুল বিশাল আকার দিয়েছিলেন, তার জন্যে বিপুল সম্পদ ব্যয় করতে হয়েছিল এবং সাম্রাজ্য চালানোর সামগ্রিক হাতিয়ারগুলো ভোঁতা হয়ে পড়তে থাকে।
কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলেছেন আওরঙ্গজেবের মিতব্যয়িতা পতনের বড় কারণ। বিংশ শতকে আওরঙ্গজেবের বিষয়ে সব থেকে বেশি গবেষক যদুনাথ সরকার সরকার স্বভাবিত নাটকীয়ভঙ্গীতে লিখলেন, [in Aurangzeb’s reign] the Mughal crescent rounded to fulness [sic] and then began to wane visibly। যদুনাথ সরকার আওরঙ্গজেব নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গী স্পষ্ট করেছেন, তার বহু বইতে, বিশেষ করে পাঁচ খণ্ডের হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেবএ। শেষ পর্যায়ে আওরঙ্গজেবের চরিত্র বর্ণনা করে তিনি লিখছেন, The life of Aurangzib was one long tragedy,—a story of man battling in vain against an invisible but inexorable Fate, a tale of how the strongest human endeavor was baffled by the forces of the age। যদুনাথ সরকার আওরঙ্গজেবকে ট্রাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে ঔপনিবেশিক সময়ের মনীষা অনুসরণে তিনি আওরঙ্গজেবকে ধর্মীয় মতান্ধ(এবং মুঘল অর্ধচন্দ্র) বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন, এবং ভাবছেন, আওরঙ্গজেব যে ধরণের ইসলাম চর্চা করেছেন, সেটি সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে চরম হানিকর হয়েছে।
---
গুণীরা একমত হতে পারেন নি কেন মুঘল সাম্রাজ্যের পত ঘটল, তার কারণই বা কি এবং সত্যি কোন সময়ে মুঘল সাম্রাজ্যের মধ্যে ফাটল কবে ধরতে শুরু করে। অধিকাংশ ঐতিহাসিকই একটা বিষয়ে একমত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের জন্যে আওরঙ্গজেবই মূলত দায়ি। এই যুক্তিটা আমার কেমন কেমন লাগে কারণ তাঁর আমলেই মুঘল সাম্রাজ্য ভৌগোলিকভাবে সব থেকে বেশি এলাকায় বিস্তৃতি ঘটেছিল। কিন্তু আওরঙ্গজেবের সাফল্যই হয়ত এর পতনেরও কারণ হতে পারে। তিনি হয়ত মুঘল সাম্রাজ্য এত বিপুল বিশাল আকার দিয়েছিলেন, তার জন্যে বিপুল সম্পদ ব্যয় করতে হয়েছিল এবং সাম্রাজ্য চালানোর সামগ্রিক হাতিয়ারগুলো ভোঁতা হয়ে পড়তে থাকে।
কেউ কেউ দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলেছেন আওরঙ্গজেবের মিতব্যয়িতা পতনের বড় কারণ। বিংশ শতকে আওরঙ্গজেবের বিষয়ে সব থেকে বেশি গবেষক যদুনাথ সরকার সরকার স্বভাবিত নাটকীয়ভঙ্গীতে লিখলেন, [in Aurangzeb’s reign] the Mughal crescent rounded to fulness [sic] and then began to wane visibly। যদুনাথ সরকার আওরঙ্গজেব নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গী স্পষ্ট করেছেন, তার বহু বইতে, বিশেষ করে পাঁচ খণ্ডের হিস্ট্রি অব আওরঙ্গজেবএ। শেষ পর্যায়ে আওরঙ্গজেবের চরিত্র বর্ণনা করে তিনি লিখছেন, The life of Aurangzib was one long tragedy,—a story of man battling in vain against an invisible but inexorable Fate, a tale of how the strongest human endeavor was baffled by the forces of the age। যদুনাথ সরকার আওরঙ্গজেবকে ট্রাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে ঔপনিবেশিক সময়ের মনীষা অনুসরণে তিনি আওরঙ্গজেবকে ধর্মীয় মতান্ধ(এবং মুঘল অর্ধচন্দ্র) বলে দাগিয়ে দিচ্ছেন, এবং ভাবছেন, আওরঙ্গজেব যে ধরণের ইসলাম চর্চা করেছেন, সেটি সাম্রাজ্যের ক্ষেত্রে চরম হানিকর হয়েছে।
No comments:
Post a Comment