(ছবিতে মারোয়াড়ের অজিত সিংহ)
ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে মুঘল-মারাঠা যুদ্ধের দাবি ছিল সঠিক রনকৌশল গ্রহণের এবং জোটবদ্ধতার। শিবাজী বিজাপুর, গোলকুণ্ডার মত ইসলামিক রাজ্যের সঙ্গে এবং প্রয়োজনে মুঘলদের সঙ্গে জোট করেছেন(কখোনো কখোনো দক্ষিণ ভারতে হিন্দু স্বার্থের বিরোধিতাতেও)। শিবাজীর সেনাবাহিনীতে মুসলমান সেনা ছিল ছিল, তার রাজ্যে কাজি ছিল এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদে বহু মুসলমান ছিল। মুঘল জোট ঠিক সেরকই ছিল উপমহাদেশের মত বৈচিত্র্যপূর্ণ – আওরঙ্গজেব হিন্দু জয় সিংহকে পাঠান শিবাজীকে পুরন্দরে গ্রেফতার করতে। আধুনিককালের মুঘল মারাঠা দ্বন্দ্বের আমরা শিবাজীর ‘হিন্দু’ হিসেবে লড়াই করে ‘মুসলমান’ স্বৈরাচারকে আটকাতে চেয়েছিলেন বলে যে ব্যাখ্যা করি, তা আসলে আধুনিক ব্যখ্যাই, তার সঙ্গে কঠোর বাস্তবের কোন মিল নেই। এই যুদ্ধে ধর্ম এসেছে ঠিকই কিন্তু সেটা শিবাজীর পেশা হিসেবে যা ছিল ক্ষত্রিয়তা - তার বেশি নয়। মুঘল বা মারাঠা কেউই এই লড়াইকে বিশেষ করে পরের দিকে যে লড়াই হয়েছে, তাকে ধর্মের মোড়ক দেয় নি। বাস্তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের উদগ্র বাসনায় মারাঠারা আওরঙ্গজেবের বাহিনীর বিরোধিতা করেছে আর মুঘলেরা সেই বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে।
---
আওরঙ্গজেব রাজপুতদের থেকেও নিয়মিতভাবে বিরোধিতার আঁচ পেয়েছেন। একটা উদাহরণ দেওয়া যায় ১৬৭৯-৮১ সালে মারোয়াড় আর মেবারের রাজপুর শাসক পরিবার মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শুরু করল – সে সিদ্ধান্তে দুটি রাজ্যের পক্ষে আলাদা আলাদা ফল ফলল। ১৬৭৮ সালের ডিসেম্বরে যশোবন্ত সিং রাঠোড় মারা যান, আওরঙ্গজেব মারোয়াড় পরিবারে সিংহাসন দখলের লড়াইতে মাথা গলিয়ে দ্যান। রাঠোড় পরিবার আওরঙ্গজেবের মধ্যস্থতা পছন্দ করল না – বিশেষ করে আওরঙ্গজেবের দেওয়া দুই নাবালক শিশুকে রাজধানীর রাজদরবারে নিয়ে এসে বড় করার প্রস্তাব। আওরঙ্গজেব সেনা পাঠালেন যোধপুর দখল করতে। পাশের শিশোদিয়া রাজপুতেরাও একই ধরণের অবস্থার মুখোমুখি হয়ে মারোয়াড়ের সঙ্গে সন্ধিবদ্ধ হলেন মুঘলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
---
আওরঙ্গজেব রাজপুতদের থেকেও নিয়মিতভাবে বিরোধিতার আঁচ পেয়েছেন। একটা উদাহরণ দেওয়া যায় ১৬৭৯-৮১ সালে মারোয়াড় আর মেবারের রাজপুর শাসক পরিবার মুঘলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে শুরু করল – সে সিদ্ধান্তে দুটি রাজ্যের পক্ষে আলাদা আলাদা ফল ফলল। ১৬৭৮ সালের ডিসেম্বরে যশোবন্ত সিং রাঠোড় মারা যান, আওরঙ্গজেব মারোয়াড় পরিবারে সিংহাসন দখলের লড়াইতে মাথা গলিয়ে দ্যান। রাঠোড় পরিবার আওরঙ্গজেবের মধ্যস্থতা পছন্দ করল না – বিশেষ করে আওরঙ্গজেবের দেওয়া দুই নাবালক শিশুকে রাজধানীর রাজদরবারে নিয়ে এসে বড় করার প্রস্তাব। আওরঙ্গজেব সেনা পাঠালেন যোধপুর দখল করতে। পাশের শিশোদিয়া রাজপুতেরাও একই ধরণের অবস্থার মুখোমুখি হয়ে মারোয়াড়ের সঙ্গে সন্ধিবদ্ধ হলেন মুঘলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে।
আওরঙ্গজেব শাহজাদা আকবরকে রাঠোড়-শিশোদিয়া বিদ্রোহ দমন করার নির্দেশ দিলেন। আকবর প্রথম দিকে সাফল্য পেলেও ১৬৮১তের জানুয়ারিতে মনে হল এই জোটের গতিময়তাকে কাজে লাগিয়ে তার ভারতেশ্বর হওয়া আটকায় কে, তিনি নিজেকে রাজস্থানের নাদোলে ভারত সম্রাট হিসেবে ঘোষনা করে দিলেন। সাম্রাজ্যের চাপে আকবর দক্ষিণে জোট খুঁজতে গেলেন লড়াই জারি রাখতে গিয়ে। ইতোমধ্যে আওরঙ্গজেবের আরেক পুত্র আজম শাহ রাজপুতদের সঙ্গে ১৬৮১র জুনে রাজসমুদ্রর চুক্তি করে বসলেন। এই চুক্তি অনুসারে মেওয়ার আর মুঘল ক্ষমতার মধ্যে দীর্ঘকাল জুড়ে শান্তির পরিবেশ বয়ে নিয়ে এল। কিন্তু রাজস্থানের আরেক রাজ্য মারোয়াড় সাম্রাজ্যের দখলদারির বিরুদ্ধে বহুকাল ধরে বিদ্রোহ করছে। তারা বিদ্রোহের পথ থেকে সরল না।
এই গোটা লড়াইকে আধুনিক ঐতিহাসিকেরা মুসলমানেদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের যৌথ লড়াই যা রাজপুত বিদ্রোহ নামে আখ্যা দিয়ে থাকেন। শিশোদিয়া আর রাঠোড়, একজন মুসলমান, শাহজাদা আকবরের পাশে দাঁড়ানোয় ঐতিহাসিকদের দেওয়া ধর্মভিত্তিক লড়াইয়ের ছাপ মুছে যাওয়া দরকার ছিল – কিন্তু হয় নি। এবং আমরা যদি রাজসমুদ্র চুক্তির কথা ভাবি তাহলে এই ঐতিহাসিকদের ধার্মিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়েই প্রশ্ন উঠে যায়। মেওয়ার মুঘলদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে কিন্তু মারোয়াড় মুঘল চাপে মাথা নোয়ায় না। এই ঘটনা আদতে মুঘল আধিপত্যের বিরুদ্ধে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে শত শত বছরের ক্ষমতা দখলের/রক্ষার দ্বন্দ্ব।
No comments:
Post a Comment