আওরঙ্গজেব আরও কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তাঁর পুত্র শাহজাদা আকবরের বিরুদ্ধে, যিনি বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। ১৬৮১তে আওরঙ্গজেব আকবরকে রাজস্থানে শিশোদিয়া আর রাঠোড় বিদ্রোহ দমন করতে পাঠানোয়, তিনি না খুশ হয়ে নিজেকে ভারতেশ্বর ঘোষণা করেন। রাজপুতেরা খুব তাড়াতাড়ি অবস্থা বুঝে তার পাশ থেকে সরে যায়। একা তিনি শম্ভাজীর দরবারে আশ্রয় নেন, কেননা শম্ভাজী আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে প্রাণপন লড়ছেন। বহু বছর পর তিনি আওরঙ্গজেব পুত্রকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে ভারতের সীমান্ত পার করে দ্যান, আকবর পারস্যে পৌঁছে গিয়ে নিরাপদে ১৭০৪ সাল পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
---
আওরঙ্গজেব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ওপর কোন আঘাতই সহজে মেনে নিতেন না। যে সব ব্যক্তি বা সমাজ সম্রাটের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানয়েছে তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, হিংসা চাপিয়ে দিয়েছেন এবং নিষ্ঠুরতম ব্যবহার করেছেন।
আওরঙ্গজেব রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ওপর কোন আঘাতই সহজে মেনে নিতেন না। যে সব ব্যক্তি বা সমাজ সম্রাটের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ জানয়েছে তিনি তাদের বিরুদ্ধে লড়েছেন, হিংসা চাপিয়ে দিয়েছেন এবং নিষ্ঠুরতম ব্যবহার করেছেন।
১৬৮৯ সালে শম্ভাজীকে মুঘল সেনা গ্রেফতার করলে তিনি শম্ভাজী এবং তার ব্রাহ্মণ পরামর্শদতা কবি কলসকে মাথায় গাধার টুপি পরিয়ে উটে চড়িয়ে দরবারে নিয়ে আসেন। তিনি শম্ভাজীর চোখ নখ দিয়ে উপড়োন। তাঁর সময়ের এক ঐতিহাসিকের বর্ণনায়, his shoulders were lightened of the load of his head। কোন কোন ঐতিহাসিক বলেন এই দুজনের দেহ কুকুরের খাদ্য করা হয় এবং বল্লমের ওপর কাটা মুণ্ডু গেঁথে সারা দাক্ষিণাত্যে ঘুরিয়ে দিল্লির মুল দরজায় আটকানোর জন্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রাজনীতিতে বীভৎস ধরণর বৈচিত্র্যময় হিংসা জোড়ার কাজে আওরঙ্গজেব সে সময়ের ব্যতিক্রমী চরিত্র ছিলেন না। আওরঙ্গজেবের কাছে হিংসা ছিল মুঘল রাষ্ট্রীয় একতা, স্থিতিশীলতা, সংযোগ রক্ষার সদর্থক হাতিয়ার। তার সময়ে যে বাহিনী নিয়ে যে হিংসক আচরণ করেছেন, সেই আচরণের নিন্দা প্রায় সব সময়ের মানুষ করেছেন। এর একটা উদাহরণ হল গুরু তেগ বাহাদুরের হত্যাকাণ্ড।
মুঘল রাষ্ট্র তেগ বাহাদুরকে ১৬৭৫ সালে পাঞ্জাব অশান্ত করার জন্যে হত্যা করে। আজ প্রত্যেক আধুনিক শিখের কাছে এটা কালো ইতিহাস, কিন্তু সেদিনের সময়ে এটা স্বাভাবিক কাণ্ড ছিল। ঠিক যে জন্যে আওরঙ্গজেবের সময়ের কোন ফারসি ইতিহাসে এই ঘটনার কোন উল্লেখ নেই। এটা সহজ স্বাভাবিক ঘটনা হসেবে তখনকার ঐতিহাসিকেরা মনে করতেন। ঠিক এই জন্যেই পরের ফারসি ইতিহাসে এই নিয়ে ঐক্যমত্যের অভাব দ্যাখা দেয় – কেউ বলেন তাকে দাক্ষিণাত্যে হত্যা করা হয়, কেউ বলেন তাঁকে লাহোরে হত্যা করা হয়। কিন্তু শিখ পরম্পরা জানাচ্ছে ঘটনাটা দিল্লিতে ঘটেছিল। পরের দিকের শিখ ইতিহাসে তারিখেরও সঠিক বর্ণনা পাওয়া যায় না। পাঠ্য পুস্তকে অপ্রমান্য গণইতিহাস বলা হয়েছে – তিনি কাশ্মীরের ব্রাহ্মণদের ধর্মপরিবর্তনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। শিখেদের প্রাচীন ইতিহাসে এই দৃষ্টিভঙ্গীর কোন ঐতিহাসিক প্রমান নেই।
এই ঘটনাকে দেখতে হবে ফারসি এবং শিখ ইতিহাসকে নিয়ে মিলিয়ে মিশিয়ে – আওরঙ্গজেবের দৃষ্টিতে তেগ বাহাদুর সামরিকভাবে মুঘল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণলড়াই শুরু করেছিলেন। এই জন্যেই তিনি মুঘল রাষ্ট্রের মৃত্যু দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত হন। তার ধর্মীয় চরিত্র আওরঙ্গজেবের কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিল না, যতটা ছিল মুঘল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা। তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী। হয়ত তেগ বাহাদুরের ভাইপো সপ্তম শিখ গুরু হর রাই সিংহাসনের লড়াইতে দারা পক্ষ নেওয়াও তেগ বাহাদুরের বিপক্ষে যায়। এই সময় মুঘল রাষ্ট্র আরেকটি ধর্মীয় গোষ্ঠী সতনামীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালায়।
No comments:
Post a Comment