Saturday, September 22, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৫৮ - অড্রে ট্রুস্কে

(ছবিতে নাদির শাহ ভারত লুঠতে আসার সময়কার মুগথল সম্রাট মহম্মদ শাহ)
যদিও আজ খুব বেশি ঐতিহাসিক, যদুনাথ সরকারের মত মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে ধর্মান্ধতার প্রভাব খুব বেশি গুরুত্বের বলে মনে করেন না, কিন্তু জনগণের ভাবনায় এই বিষয়টার গুরুত্ব আজও থেকে গ্যাছে। আদতে এটা একটা ধারনা-বর্ণনার সমস্যা – ঐতিহাসিক সমস্যা নয়। আদতে ভদ্রবিত্তিয় দৃষ্টিভঙ্গীতে কোন এক বড় কাঠামোর পতনের কারণ খোঁজার সমস্যার সমাধানের গল্প তৈরি হয় সেই ঝামেলার একটি নৈতিকতা নির্ভর গল্প তৈরি করে সেই গল্পে সেই পরিবেশের একজন দুর্বৃত্তকে গুঁজে দিয়ে সেই বেঁড়ে ব্যাটাকেই বিশাল বড় সাম্রাজ্যের পতনের মুল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা। আজকাল ইতিহাসে মুসলমানেদের দুর্বৃত্ত দেখানোটাই চল হয়েছে, আওরঙ্গজেবের সেই সব ঐতিহাসিকদের সহজ টার্গেট হন তার গভীর ধর্মচর্চার কারণে। সেই প্রবণতার বাইরে দাঁড়িয়ে ঐতিহাসিক সামাজিক, আর্থিক এবং প্রশাসনিক ফ্যাক্টরগুলি মিলেমিশে যে মুঘল ক্ষমতাকে দুর্বল করেছে সেটি বোঝাতে চান। এই ধরণের বিস্তৃত, ব্যবস্থা-ভিত্তিক বিশ্লেষণে ইতিহাসের প্রভুত রেণু খুঁজে পাওয়া গেলেও সেটা জনরূচিসম্মত হয় না।
সত্যিই তো আওরঙ্গজেবের পরে মুঘল ভারত সম্বন্ধে আমরা কতটুকুই বা জানি। এবং আমরা সত্যিই তার সাম্রাজ্যের সময়ের বহু বিষয় সম্বন্ধে জানি না, যেগুলিকে হয়ত আমরা ধরেই নিচ্ছি মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ হিসেবে। কিন্তু আওরঙ্গজেন যতদূর সম্ভব একটি দোমড়ানো মোচড়ানো উত্তরাধিকার ফেলে যাচ্ছেন এটা দেখতে পাচ্ছিলেন তার সাম্রাজ্যের শেষের দিকে। তাঁর শেষের চিঠিগুলিতে লিখেছেন যে মুঘল সাম্রাজ্যের সামনে কালো দিনগুলির কথা, এবং সেই সাম্রাজ্যকে ঢালের দিকে গড়িয়ে যাওয়ার দিকে থেকে তার মত শক্তিশালী মানুষ এড়াতে পারছেন না।
---
মুঘল সাম্রাজ্য পতনের কারণ হিসেবে আওরঙ্গজেবের দায়িত্ব নিয়ে যে সম্ভাব্যতার আলোচনা আমরা করি, তার বাইরে আমরা এই এত পরস্পর বিরোধী সম্রাটের দীর্ঘকালের রাজত্বকে কিভাবে দেখি সেটা কি ভেবেছি? আধুনিক সময়ের প্রেক্ষিতে হিংসা, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং বরদাস্ত করা বিষয়ে নানাভাবে তার কাজকে প্রশ্ন তোলাই যায়। কিন্তু আমরা তাকে তার সময়ের পূর্বের সম্রাটেদের সঙ্গে তাকে কিভাবে তুলনা করতে পারি এই প্রশ্নটার মুখোমুখি হওয়া যাক।
আকবর এবং তার পরের সম্রাটদের তুলনায় আওরঙ্গজেব মুঘল প্রথা থেকে অনেক বেশি বিচ্যুত হয়েছিলেন। কিন্তু যে পরিবর্তনগুলি তিনি এনেছিলেন যেমন শিল্পকলা, দাক্ষিণাত্য অভিযান, জিজিয়া লাগুকরা, তিনি মুঘল প্রশাসনিক সেনাবাহিনীকগত এবং কৃষ্টিগতভাবে মুঘল সাম্রাজ্যিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিলেন। তাঁকে আমরা আকবরের মত আন্তকৃষ্টির মেলবন্ধনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত অকরি না(এবং ষষ্ঠ শাসক হসেবে সেই কাজটা করা তার দরকারও ছিল না বলে তিনি মনে করেছেন)। তিনি ফতোয়াইআলমগিরির মত আদ্যোপান্ত একটি বিশাল বড় বৌদ্ধিক কাজ করিয়েছেন এবং তাকে উদ্দেশ্য করে বেশ কয়েকটা রামায়নও উতসর্গিত হয়েছিল। তিনি শাহজাহানের মত প্রাসাদ তৈরির মানুষ ছিলেন না, যদিও তিনি লাহোরে অসাধারণ বাদশাহী মসজিদ তৈরি করান। আজকের মানুষ তাকে যা ভাবেন, তিনি তার বাইরে দাঁড়িয়ে তার পূর্বপুরুষদের মতই ছিলেন।

No comments: