(মুল বইটির পরিসমাপ্তি ঘটল এই কিস্তিতে কিন্তু আরও লেখা বাকি)
তবুও বলা দরকার সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেব যে কোন সরল সাধারণীকরনীয় চরিত্রমাত্র নন। তিনি বিপুলভাবে পরস্পর বিরোধী ও বিভ্রান্তিকর চরিত্রের মানুষ যাকে গভীরে গিয়ে পড়াশোনা করে বুঝতে হয়। আওরঙ্গজেব নিজে ছিলেন প্রচুর অধৈর্য নির্দেশদাতা যেমন রাস্তার নিরাপত্তা নিয়ে বড্ড চিন্তিত – কিন্তু নিজের পিতাকে তিনি বহু বছর বন্দী করে রাখেন, যে কাজটা সে সময় এশিয়াজুড়ে নিন্দিত হয়েছে। তিনি দারা শুকোর মত পারিবারিক সদস্যকে যেমন খুন করেন তেমনি শম্ভাজীর মত শত্রুকেও বাস্তবিকভাবে ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেলতে নির্দেশ দ্যান। একই সঙ্গে তিনি নিয়মিত ফেজ টুপি সেলাই করে নিজের ধার্মিকতাকেও বজায় রাখেন। তিনি পছন্দ করতেন না দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা, পচা আম এবং অনুপযুক্ত পুত্রদের। তিনি সঙ্গীতের রসিক সমঝদার, এমন কি যুবা বয়সে একজন রূপসী সঙ্গীতকলাকার হীরাবাঈএর প্রেমে পড়েন, কিন্তু পরিণত বয়সে নিজেকে সে রসে বঞ্চিত করে রাখেন। তবে তার শেষ বছরগুলো আরেক সঙ্গীতপ্রেমী উদিপুরী মহলের সঙ্গে কাটাতে হয়। তিনি বিশ্বের সব থেকে বড় মসজিদ বানান, কিন্তু নিজেকে আনামা কবরে শয়িত রাখতে নির্দেশ দ্যান। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যকে সব থেকে বড় চেহারা দিতে দিতে মারা যান কিন্তু মনে করতেন তার জীবনটাই ব্যর্থতায় ভরা।
আওরঙ্গজেবের জীবন হেঁয়ালিতে ভরা। তাঁর সময়ের প্রখ্যাত ঐতিহাসিক কাফি খাঁএর উক্তি উদ্ধৃত করব, যিনি আওরঙ্গজেবের সময়কে পারস্যের প্রখ্যাত শাসক জামশিদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন, তিনি বলেন, To attempt a summary of the major events of a fifty-year reign of an emperor the equal of Jamshid is to measure the ocean’s water with a pitcher। এই ভাষাতেই ভারতের বিতর্কিত সম্রাটের বিচার করা দরকার। যদি আমরা আওরঙ্গজেবের সঙ্গে জুড়ে থাকা মিথগুলি ছিঁড়ে ফেলতে পারি, তখন আমরা সম্রাট হিসেবে, মধ্যযুগের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে, তিনি যে আকর্ষনীয় ধাঁধাগুলি ছেড়ে গিয়েছেন, সেগুলিকে উদ্ধার করতে পারব।
No comments:
Post a Comment