Tuesday, September 25, 2018

ফ্রম প্রস্পারিটি টু ডিক্লাইন – এইটিনথ সেঞ্চুরি বেঙ্গল - সুশীল চৌধুরী৭

দ্বিতীয় অধ্যায়
রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা
২।
অষ্টাদশ শতকের প্রথম পাদে বিপুল বিশাল মুঘল সাম্রাজ্যের মোটামুটি পতন ঘটে যায়। ১৭০৭ সালে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলি সাম্রাজ্যের অধিকাংশ এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। যদিও পতনের দেওয়াল লেখা স্বপ্নভঙ্গের বেদনার ইঙ্গিত মিলছিল আওরঙ্গজেবের রাজত্বের শেষ সময় থেকেই, তারা তাঁর মৃত্যুর পর অবাঞ্ছিত গতিতে উর্ধ্বমুখে বেড়ে চলতে লাগল। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অরাজক অবস্থা এবং বিশৃঙ্খলারই রমরমা দেখা দিল। ভারত জুড়ে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর অর্থনৈতিক দুর্গতির পরিবেশ তৈরি হচ্ছিল, বাংলা সে পরিবেশে এক্কেবারেই ব্যতিক্রম হয়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। অষ্টাদশ শতকের সমগ্র প্রথম পাদ, বাংলার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশটি বজ্রমুষ্টি এবং দক্ষতা সম্পন্নভাবে চালিত করা হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও বাংলা সুবার প্রশাসনিক ব্যবস্থা মজবুতই ছিল। এই সময়ের প্রশাসনের চরিত্র নিয়ে সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, an elite ruling group which was representative of the political realities of the day coalesced and maintained rather high standards of administrative efficiency (P.B. Calkins, 'The Formation of a Regionally Oriented Ruling Group in Bengal, 1700-1740',JAS, vol.XXIX, no.4, 197d, p.799.)। 
২.১ প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো
সপ্তদশ শতকে বাংলা সুবার প্রশাসনিক কাঠাম গড়ে উঠেছিল প্রমিত মুঘল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায়। ওপরের অংশটি দখল করেছিল মনসদবদারেরা, যারা কেন্দ্রের মুঘল সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি। তাদের এক সুবা থেকে অন্য সুবায় নিয়মিত বদলি করা হত, এই ভাবনায় যে কোন সুবাতেই যেন তাদের উদ্যোগে কোন স্বার্থগোষ্ঠী গড়ে না ওঠে। কেন্দ্রের সরকার সুবাগুলির ওপর কড়া পকপড় বজায় রাখত উচ্চপদের আমলাদের নিয়মিত বদলি নীতি আর একে অপরের নজরদারির ভারসাম্য বজায় রাখার(checks and balances) ব্যবস্থাপনার নীতি অনুসরণ করে। সুবার প্রশাসন দুটি অংশে বিভক্ত – প্রশাসনিক বা ফৌজদারি এবং রাজস্ব বা দেওয়ানি – প্রত্যেকেই কেউ কারোর ওপরে নির্ভরশীল নয়। প্রথম পদটির নাম ছিল নবাব-নাজিম অথপবা সুবাদার এবং রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব ছিল দেওয়ানের ওপর। সাম্রাজ্যিক ফরমানে দুটি পদের আমলাই নিযুক্ত হতেন, এবং প্রশাসনিক নির্দেশনামা চালিত হত সম্রাটের নির্দেশে তৈরি দস্তুরউলঅমল নামক নির্দেশনামা দ্বারা(Riyaz, p.248)।

কিন্তু দ্বৈত প্রশাসনে, পরস্পরের ওপর নজদারি আর ভারসাম্য রাখার দীর্ঘকালীন মুঘল প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা এই সুবায় অষ্টাদশ শতকে বাংলা সুবায় ভেঙ্গে পড়ল দুটো কারণে। প্রথমটা হল ১৭০০ সালে মুর্শিদকুলিখানকে দেওয়ান হিসেবে বাংলায় পাঠানোয়। আওরঙ্গজেব জানতেন মুর্শিদকুলি যোগ্য প্রশাসক, তাঁর আশা মুর্শিদকুলি তাঁকে নিয়মিত এবং প্রয়োজনীয় রাজস্ব বাংলা থেকে পাঠাবেন। দাক্ষিণাত্যের যুদ্ধে যুদ্ধে জেরবার আওরঙ্গজেবের যেহেতু অন্যান্য সুবার রাজস্ব আদায় সূত্র প্রায় শুকিয়েই গিয়েছিল, তিনি মুর্শিদকুলিকে নিযুক্ত করে নির্দিষ্ট পরিমান রাজস্ব দাবি করলেন। মুর্শিদকুলি তার নিয়োগকর্তাকে নিরাশ করেন নি, প্রথম বছরেই তিনি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সুবায় রাজস্ব গণনা এবং আদায় করে ১ কোটি টাকা(যা পরের বছরগুলিতে বাড়বে) রাজস্ব পাঠালেন কেন্দ্রিয় তোষাগারে। দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধে যুদ্ধে জর্জরিত বৃদ্ধ আওরঙ্গজেবের কাছে নিয়মিত যাওয়া এই অর্থ আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে দাঁড়াল এবং তিনি তার কর্মচারীকে বাংলায় মুঘল প্রশাসনিক রীতিনীতি উল্লঙ্ঘন করে যা খুশি করার ছাড়পত্র দিলেন। মুর্শিদকুলি সুবায় তাঁর অবস্থান জোরদার করলেন ১৭০৪ সালে ঢাকা থেকে দেওয়ানি মুকসুদাবাদে(যা পরে মুর্শিদাবাদ রূপে পরিচিত হবে আগামী দিনে) স্থানান্তরিত করে।  এই কাজটা তিনি করলেন সুবাদার শাহজাদা আজিমউশ্বানকে উপেক্ষা(ঐ) করেই। সময়ক্রমে দেওয়ানের ক্ষমতায় আরোহন এবং তাঁর সম্মান আরও বাড়ল ১৭১৭ সালের ফরমানে তিনি সুবাদার নিযুক্ত হওয়ায়। মুঘল সুবায় এই প্রথম এই দুটি পদ একজনকেই অর্পন করা হল। সপ্তদশ শতকে বাংলায় যে ধরণের প্রশাসনিক কাঠামো ছিল, সেটির বিপুলাকার পরিবর্তন ঘটেগেল অষ্টাদশ শতকের প্রথমপাদেই।  এটই মুঘল প্রশাসনিক প্রথার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান। 

No comments: