যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
(ছবি - আওরঙ্গজেবএর খুব সাধারণ কবর)
(ছবি - আওরঙ্গজেবএর খুব সাধারণ কবর)
তাঁর শেষ বয়সের বাড়তে থাকা রোগএর প্রকোপ ফেব্রুয়ারিতে তাকে আহমদনগরে আরও পেড়ে ফেলে, তিনি ৫-৬ দিন আরও যাত্রা করেন, পুত্রদের তাদের দায়িত্ব সামলাতে সুবায় পাঠিয়ে দেন। এর সঙ্গে প্রতিদিনের নামাজ এবং সাম্রাজ্যের নির্দেশ দেওয়ার কাজ চলছিল। কিন্তু ৯১ বছরের ভারাক্রান্ত জীবন অনেক ভার বয়েছে। এক দিন তাকে বিপুল জ্বর কাবু করে ফেলল। ২০ ফেব্রুয়ারি ১৭০৭ সালে কোরান পাঠ করতে করতে হাতে মালা ঘোরাতে ঘোরাতে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তার মৃতদেহ দৌলতাবাদ থেকে ছয় মাইল দূরে খুলদাবাদে পীর শেখ জইনুদ্দিনের সমাধির পাশে কবর দেওয়া হয়। খুব সাধারণ সমাধির ইচ্ছে তার ছিল। তাই হয়। ঔরঙ্গজেবের স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে ৮ অক্টোবর ১৬৫৭ সাল জেবুন্নেসা, আজম এবং আকবরের সন্তান ধারণ করার পর। তার দ্বিতীয় স্ত্রী, মহল, নবাব বাঈ, সুলতান আর মুয়াজ্জমের মা, কোনদিন আওরঙ্গজেবের স্নেহ পান নি, সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি কোন দিন তাঁকে নিয়ে পাশে বসান নি। তাঁর তিন স্ত্রীর(পরস্তার) মধ্যে হীরাবাঈ, যিনি তার যৌবনেই মারা যান, তাঁকে পাগলের মত ভালবেসেছিলেন। মেহেরুন্নিসার মা আওরঙ্গাবাদী ১৬৮৮এ প্লেগে মারা যান। কাম বক্সের মা এবং সম্রাটের শেষ বয়সের সাথী উদয়পুরী তার সিংহাসনে আরোহন করার পরে তার হারেমে ঢোকেন। শোনা যায় তিনি ককেসাসিয় দাস কন্যা – দারার উপপত্নী ছিলেন। দারার বিরুদ্ধে গিয়ে যুদ্ধর অবশেষ হিসেবে আওরঙ্গজেব তাঁকে পান। অন্য সূত্রে জানা যায় তিনি কাশ্মীরি ছিলেন। সেটাই হয়ত সত্য। কারণ মাশিরইআলমগিরিতে তাকে বাঈ রূপে সম্বোধন করা হয়েছে, যা হিন্দু মহিলার ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে। তাঁকে আধুনিক লেখকেরা মেওয়ারের কন্যা হিসেবে কষ্ট কল্পনা করেছেন, যা সত্যি নয়।
সিংহাসনের লড়াই চলতে চলতে আওরঙ্গজেবের জৈষ্ঠপুত্র সুলতান, তার পিতার প্রিয় আমলাদের অধীনে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে সুজার কাছে পালিয়ে গিয়ে তার কন্যাকে বিয়ে করেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে বাবার কাছে ফিরে আসেন। সে ভাগ্যহীন সেই সময় ২০ বছর বয়সী। বাবা তাকে সারাজীবন কায়েদ করেই রাখেন(মৃ ৩ ডিসে ১৬৭৫)।
দ্বিতীয় পুত্র মুয়াজ্জম/শাহ আলম, তার মৃত্যুর পর প্রথম বাহাদুর শাহ নাম নিয়ে সিংহাসনে আরোহন করেন ১৭০৭ সালে, বিজাপুর গোলকুণ্ডা অবরোধের সময় পিতাকে কুপিত করে নজরবন্দী হয়ে থাকে, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৬৮৭তে। তার উৎসাহ লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে গেলে, তাকে বন্দীত্ব থেকে আস্তে আস্তে মুক্ত করা হতে থাকে মজাদারভাবে, এবং তাকে ১৬৯৫ সালের ৯ মে মুক্তি দেওয়া হয়। প্রথমে পাঞ্জাবেরে সুবাদার পরে আফগানিস্তানেরও সুবাদার হন।
তৃতীয় শাহজাদা আজম মুয়াজ্জমের আসম্মানের সময় নিজেকে উত্তরাধিকারী(শাহইআলিজা) হিসেবে নিজেকে উপস্থিত করান, কিছুট পিতার সম্মতিও পান। কিন্তু তিনি ছিলেন রগচটা, বেদম রাগী, নিজেকে সামলাতে পারতেন না।
চতুর্থ আকবর ১৬৮১তে বাবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। পারস্যে পালিয়ে গিয়ে ১৭০৪ সালে মারা যান। ভারতের খোরাসান সীমান্তে তার অবস্থান বহুকাল প্রসাসনের অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শেষতমটি কাম বক্স, বাবার শেষ বয়সের উন্মার্গগামী, কাপুরুষ, বুদ্ধিহীন, সন্তান। জিঞ্জিতে খারাপ ব্যবহারের জন্যে তাকে আন্তরীণ করে রাখা হয়। তার সতভায়ের সঙ্গে দহরম মহরম করতে গিয়ে এবং এক নিবেদিত সেনানায়ককে হত্যা করতে গিয়ে আবার বন্দী হন। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর তৃতীয় এবং চতুর্থ সন্তান পরস্পরের মারপিট করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হন।
No comments:
Post a Comment