(ছবি - সাদা ঘোড়ায় দারা শুকো)
আবু তালিব কালিম, শাহজাহানের দরবারের রাজকীয় কবি আওরঙ্গজেবের বীরত্বকে স্মরণীয় করতে একটি কবিতা লেখেন, সেখানে তিনি বলেন, আওরঙ্গজেব যেভাবে চকিতে হাতে ধরা বল্লমটি সুধাকরের মাথায় ছুঁড়ে দিয়েছিলেন, তাতেই তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। তিনি লেখেন “Out of the gouge inflicted by the prince’s spear / gushed the elephant’s mind-poisoning madness। শাহজাহান আওরঙ্গজেবের বীরত্ব স্বীকার করেন, হয়ত তিনি তার এই সন্তানকে নতুন আলোয় দেখলেন। শাহজাহানের দরবারের ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেবের বীরত্ব স্বীকার করে এই ঘটনার সঙ্গে জাহাঙ্গিরের চোখের সামনে শাহজাহানের এক মত্ত সিংহের বিরুদ্ধে প্রখ্যাত লড়ায়ের তুলনা করেছেন।
---
কয়েক বছর পরেই শাহজাহান, ষোড়শ বর্ষের আওরঙ্গজেবকে সাম্রাজ্যের কাজে পাঠানো শুরু করেন। এর পর দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ১৬৩৫ থেকে ১৬৫৭ পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়িয়ে বলখ, বুন্দেলখণ্ড এবং কান্দাহারে যুদ্ধ করেছেন, গুজরাট, মুলতান এবং দাক্ষিণাত্যে প্রশাসন চালিয়েছেন।
---
কয়েক বছর পরেই শাহজাহান, ষোড়শ বর্ষের আওরঙ্গজেবকে সাম্রাজ্যের কাজে পাঠানো শুরু করেন। এর পর দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ১৬৩৫ থেকে ১৬৫৭ পর্যন্ত মুঘল সাম্রাজ্যের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়িয়ে বলখ, বুন্দেলখণ্ড এবং কান্দাহারে যুদ্ধ করেছেন, গুজরাট, মুলতান এবং দাক্ষিণাত্যে প্রশাসন চালিয়েছেন।
এত লড়াই রাজকীয় দায়িত্বের মধ্যেও আওরঙ্গজেবের জীবনের প্রেমোদ্গম ঘটেছিল হীরাবাঈ জয়নাবাদীর সঙ্গে আলাপের পর। ১৬৫৩ সালে শাহজাদা বুরহানপুরে মামির বাড়িতে আম পাড়তে থাকা হীরা বাঈকে দেখে আওরঙ্গজেবের বিশ্ব হেঁটমুণ্ডূর্ধ্বপদ হয়ে গিয়েছিল। দুজনে দুজনের প্রেমে পড়েন। শোনা যায় তিনি হীরা বাঈএর প্রেমে এতই মোহিত হয়ে পড়েন যে, সারাজীবন ধরে মদ্যপান না করার যে সঙ্কল্প তিনি নিয়েছিলেন, সেটি ভঙ্গ করেন(তাঁর অনুরোধে মদ্য পান কপ্রতে শুরু করলে প্রথম ফোঁটা খাওয়ার পরে হীরা বাঈ তাকে নিবৃত্ত করেন)। দুঃখজনকভাবে হীরাবাঈ পরের বছরই মারা যান এবং তাঁকে আওরঙ্গাবাদে দফন করা হয়। এরকম কিছু ছুটকোছাটকা ব্যতক্রমী ঘটনা বাদ দিলে আওরঙ্গজেব তার জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন রাজকীয় দায়িত্ব পালনে।
রাজ দরবার থেকে দূরে রাজকীয় কর্মে ডুবে থাকলেও আওরঙ্গজেবের প্রতি পাদশা কোনোদিনই সুনজরপাত করেন নি। কিছু কিছু অত্যবশ্যকীয় কাজ বা উৎসব যেমন ১৬৩৭ সালে তাঁর প্রথম বিয়ে উপলক্ষ্যে কয়েক দিনের জন্যে রাজ দরবারে আসা ছাড়া তিনি কোনদিনই দীর্ঘ সময় রাজধানীতে/রাজদরবারে কাটান নি। খুব দ্রুত তিনি যুদ্ধ কৌশল এবং প্রশাসনিক নানা বিষয়বিধি শিখে নিয়ে সেগুলির সফল প্রয়োগ করলেও, দিল্লি থেকে যেভাবে বার বার তার সাফল্যকে ছোটকরে দ্যাখার চেষ্টা করা হয়েছে, এবং সে দিকে লক্ষ্য রেখে বেশ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে, তাতে তারে ক্ষোভ নিরন্তর বেড়েছে বই কমে নি। উদাহরণস্বরূপ, ১৬৫০ সালে দাক্ষিণাত্যে কয়েকটি যুদ্ধে জয়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা মুঘল বাহিনীকে দারার প্রভাবে শাহজাহান যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তুলে নিতে নির্দেশ দ্যান।
যে সময় আওরঙ্গজেব তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় তার ২০ এবং ৩০ বছর যুদ্ধের মাঠে প্রশাসনিক সেবায় কাটিয়ে নিজের নাম উজ্জ্বল করছেন, সে সময় দারা শুকো দরবারে পিতার পাশে আরামে আয়েসে জ্ঞানচর্চায় কাটাচ্ছেন। শাহজাহানের বড় ছেলের দর্শনের আগ্রহ অদম্য ছিল এবং তিনি এ বিষয়ে হিন্দু মুসলমান জ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনায় সময় বয়্য করতেন। শাহজাহানের প্রশ্রয়ে এবং বরাবরই দরবারে কাটানোর সুবাদে প্রথম থেকেই দারা আওরঙ্গজেবের থেকে বেশ কয়েক কদম এগিয়েছিলেন। এছাড়াও বড় পুত্র হওয়ার সুবাদে তিনি মনসদে ভাইদের তুলনায় সব থেকে বড় পদটি অলঙ্কৃত করতেন। আমলারা মনে করতেন দারা শুকো আগামী দিনে সিংহাসন আরোহনে শাহজাহানের স্বাভাবিক চয়েস। কিন্তু দারার দরবারের পিতা এবং আমলা আর সেনা ঘেরা নিরাপত্তা ছাড়া বাস্তবভূমির বিন্দুমাত্র অভিজ্ঞতা ছিল না – যা তার ভবিষ্যতে প্রধান দুর্বলতা হয়ে দাঁড়ায়।
No comments:
Post a Comment