Saturday, September 15, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং৩২ - অড্রে ট্রুস্কে

(ছবি - মুঘল প্রশাসনে তখন মারাঠা আমলাদের রমরমা)
রাজা রঘুনাথ যদিও আওরঙ্গজেবের প্রশাসনে মাত্র পাঁচ বছর কাজ করেছেন, কিন্তু তিনি ছিলেন আওরঙ্গজেবের খুব কাছের মানুষদের মধ্যে অন্যতম। রঘুনাথের আমলা হিসেবে জীবন শুরু হয় শাহজাহানের আমলে। সদেই প্রশাসনে তিনি অর্থমন্ত্রী হন। সমুগড়ে দারার হারের পরে রঘুনাথ আওরঙ্গজেবের প্রতি নিজের আনুগত্য নিবেদন করেন। আওরঙ্গজেব তাকে দেওয়ানির প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন। তিনি হন সাম্রাজ্যের প্রধান আর্থ বিষয়ক আমলা। তাঁর দ্বিতীয় সিংহাসনে আরোহনের উৎসবে আওরঙ্গজেব রখুনাথকে রাজা উপাধি দান করেন। উচ্চপদে (বিশেষ করে অর্থমন্ত্রকের সর্বোচ্চ পদে হিন্দু নিয়োগের) এই ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। একশ বছর আগে আকবর টোডরমল্লকে ঠিক এই কাজে নিযুক্ত করেন। আওরঙ্গজেব রাজার সম্মান রাখতে রঘুনাথকে ২৫০০ মনসবদার হিসেবে নিযুক্ত করেন। ইতিহাস প্রমান সাম্রাজ্যের সিন্দুকের ব্যবস্থাপনা একটি অভিজ্ঞ হাতে ন্যস্ত হল।
কয়েক বছরের মধ্যে তাঁর নানান সঠিক সিদ্ধান্ত দরবারি রাজনীতিতে তাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলে উচ্চতম পদাধিকারীকেও কার্যত সিংহাসন চ্যুত করে দেয়। বার্নিয়ের অভিজ্ঞতা বলছে তিনি সাম্রাজ্যের উচ্চতম আধিকারিক পদ উজিরের সমকক্ষ হয়ে ওঠেন। চন্দ্রভান ব্রাহ্মণও বার্নিয়ের এই মত সমর্থন করছেন, frontispiece in the book of the men of the pen of Hindustan। ১৬৬৩ সালে কাশ্মীরে সম্রাটের সঙ্গে ছুটি কাটাতে গিয়ে রঘুনাথের মৃত্যু ঘটে। আওরঙ্গজেব তাঁর প্রিয় আমলাকে বহুদিন ভোলেন নি।
তিনি শেষ জীবনে যখন মৃত্যুর প্রহর গুণছেন তখন তার জীবনের প্রথম অর্থমন্ত্রীর ভূমিকা নতুন করে স্মরণ করছেন। শেষ জীবনে অন্যান্য আমলাকে চিঠি লিখে স্মৃতি কণ্ডুয়ন করে বলছেন, কিভাবে রঘুনাথ দক্ষ হাতে সাম্রেয়াজ্যের প্রশাসন চালাতেন এবং এ সম্বন্ধে তিনি কি কি কথা বলতেন। উজির আসদ খাঁকে চিঠি লিখে আওরঙ্গজেব রঘুনাথের পথ নির্দেশিকা সম্বন্ধে বলছেন, the work of government should be entrusted to people with prized experience and a head for business, not to those weak with greed। মৃত্যুর চল্লিশ বছর পরেও রঘুনাথ তার পৃষ্ঠপোষকের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছেন শুধু অর্থমন্ত্রী হিসেবে নয় রাজ্য চালানো আর ন্যায় বিচার দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন দক্ষ আমলা হিসেবে। আওরঙ্গজেবের পরিণত বয়সেও রঘুনাথের ধর্মীয় চরিত্র বিন্দুমাত্র তার পৃষ্ঠপোষকের মনে ছায়া ফেলে নি।
---
তার জীবনের শেষ দিকে আওরঙ্গজেব আরও প্রবল গতিতে মুঘল প্রশাসনে হিন্দু আমলা নিয়োগ করতে থাকেন দ্বিধাহীনভাবে, যদিও তার কাজে বাধা আসতে থাকে।
আমি আগেই বলেছি ১৬৭৯ থেকে ১৭০৭এর মধ্যে মুঘল আমলা বাহিনীতে হিন্দুদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। কিছু কিছু গোষ্ঠী হিন্দুদের সংখ্যা বেড়ে চলা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। উদাহরণ স্বরূপ ভীমসেন সাক্সেনা আওরঙ্গজেবের বাহিনীতে সেনা আমলা হিসেবে কাজ করে শেষ বয়সে ফারসিতে সেই সময়ের ইতিহাস লেখেন। তিনি বলছেন, it was a practice in those days that the names of the Hindus were never recommended [for promotion]। এটা হতেই পারে আওরঙ্গজেব যেভাবে মারাঠাদের আমলাতন্ত্রে অন্তর্ভূক্ত করছেন অপ্রতিহত গতিতে, সেই উদাহরণ দেখে অন্যান্য রাজপুত মুঘল অভিজাত আমলারা শঙ্কিত বোধ করতে থাকবেন – শুধু রাজপুত নয়, অন্যান্য অভিজাত গোষ্ঠীরও মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে এবং তারা চেষ্টা করতে থাকে(যদিও ব্যর্থ হয়) আমলাতন্ত্রে সামগ্রিক হিন্দুদের সংখ্যা কমিয়ে রাখতে।

No comments: