যদুনাথ সরকারের অনুবাদ
এতক্ষণ মনে হচ্ছিল যে যুদ্ধে আওরঙ্গজেবের জিত হচ্ছে, আদতে তার হারই লেখা শুরু চলেছে। এটা তার শেষের শুরু। এরপরেই আশাহীন এবং হতাশাজনক সময় শুরু হবে। মুঘল সাম্রাজ্য এতই বড় হয়ে গিয়েছে যে এটি কোন একজনের পক্ষে এক জায়গায় বসে থেকে শাসন করা অসম্ভব। আওরঙ্গজেব তার ক্ষমতার থেকে অনেক বেশি খাদ্য গলার্ধকরণ করে ফেলেছেন। তার পূর্বপুরুষদের অর্জিত সব কটি সুবা, নতুন বিজিত রাজ্যগুলি এবং একই সঙ্গে মারাঠাদের সঙ্গে যুদ্ধ চালানো অবাস্তব কাজ হয়ে উঠল। তার চারপাশে শত্রুদের ব্যুহ তৈরি হয়ে গেল, তিনি শত্রুদের হারাতে পারেন ঠিকই, তাদের ধ্বংস করতে পারেন না। তার বাহিনী এক জায়গা থেকে অন্য যায়গায় সরে গেলে সেই শূন্যস্থান স্থানীয় রাজার বাহিনী দখল করে নেয় এবং আওরঙ্গজেবের আরব্ধ কাজ আবার শূন্যে পর্যবসিত হয়।
রাজধানী থেকে বহুদূরে সম্রাট যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় হিন্দুস্থানের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ছিল। স্থানীয় রাজা, জমিদারেরা আস্তে আস্তে নিজেদের নামিয়ে রাখা মাথা তুলতে থাকে। আমলারা দুর্নীতিপরায়ণ হতে থাকে, প্রশাসন স্লথগতি হয়। আগ্রা সুবায় নিয়মিত বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে শুরু করল। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষণা কমে যাওয়ায় শিল্পকলা আর জ্ঞানচর্চা ব্যহত হতে লাগল। আওরঙ্গজেবের আমলে তার সময়কে বিবৃত করে কোন একটি মহৎ প্রাসাদ, সুন্দর লিখিত পাণ্ডুলিপি বা ছবি পাওয়া যায় না। দক্ষিণে শেষহীন যুদ্ধ মুঘল সিন্দুকে টান ধরায়। সরকার দেউলিয়া হতে চল্ল। সেনাবাহিনীর বেতন বহু কাল বাকি থেকেই যায়। বিদ্রোহ অবস্থা তৈরি হয়। তার রাজত্বের শেষ বছরগুলিতে তার বিশ্বস্ত দেওয়ান মুর্শিদ কুলি খানের পাঠানো রাজস্বে সম্রাটের পরিবার এবং সেনাবাহিনীর বেতন হত। সম্রাট তার পাঠানোর রাজস্বের দিকে পথ চেয়ে বসে থাকতেন। প্রথম নেপোলিয়ান বলতেন স্পেনের ক্ষত আমায় ধ্বংস করল, তেমনি দাক্ষিনাত্য ক্ষত আওরঙ্গজেবকে শেষ করল।
আবার ফিরে আসি নির্ঘন্টে। প্রথমে কানাড়ার আদিবাসী, যাদের কথা কর্নেল মিডো টেলর লিখেছেন মনকাড়া স্টোরি অব মাই লাইফ গ্রন্থে, সেই বেরাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্থানীয় সেনানায়কদের পাঠানো হল। বিজাপুর আর গোলকুণ্ডার মধ্যে এদের রাজধানী সাগর দখল করল মুঘল বাহিনী(২৮ নভেম্বর ১৬৮৭)। আদিবাসী প্রধান ঘন কালো পশুর মত দেখতে পিদ নায়েককে দরবারে আনা হল। ততক্ষণে সেই সমাজের অন্য আদিবাসী বিদ্রোহ শুরু করে দিয়েছে। মুঘলদের তাদের বিরুদ্ধে আরও দুটো বাহিনী পাঠাতে হল।
No comments:
Post a Comment