Wednesday, September 12, 2018

আওরঙ্গজেবঃ দ্য লাইফ এন্ড লেগাসি অব ইন্ডিয়াজ মোস্ট কন্ট্রোভার্সিয়াল কিং২০ অড্রে ট্রুস্কে

(ছবিতে শাহজানাবাদের পরিকল্পনা)
মুঘল সাম্রাজ্যে সিংহাসনের দখলের জন্যে ভায়ে ভায়ে লড়াই খুন সাধারণ, জনগ্রাহ্য প্রথা। কিন্তু সিংহাসনরূঢ় সম্রাটকে সিংহাসন চ্যুত করে সেই সিংহাসনে তার পুত্রের আরোহন সমস্যার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে আওরঙ্গজেব যখন সিংহাসনে আরুঢ় হচ্ছেন তখন শাহজাহান সুস্থ হয়ে উঠেছেন প্রায়। সুস্থ সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া সম্রাটকে দুর্গে বন্দী করে রাখা সমস্যার। মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধান কাজী এই ঘটনায় এত ক্ষুব্ধ হলেন যে আওরঙ্গজেবের বিরাগভাজন হবার আশঙ্কা উপেক্ষা করেই তিনি শাহজাহানকে বন্দী রেখে আওরঙ্গজেব নিজেকে সম্রাট ঘোষণা করে দেওয়াকে মান্যতা দিতে অস্বীকার করলেন। আওরঙ্গজেব তাকে পদচ্যুত করলেন এবং তার মনের মত কাজি আবদুল ওয়াহাবকে নিয়োগ করলেন।
ভারত থেকে দূরে আওরঙ্গজেবের এই কর্ম গভীর ভাবে দেখা হচ্ছিল। আওরঙ্গজেব হিংসার আশ্রয় নেওয়ার জন্যে মক্কার শরিফ আওরঙ্গজেবকে হিন্দুস্থানের বৈধ শাসক হিসেবে গণ্য করতে আস্বীকার করেন এবং পুত্র যেভাবে শাহজাহানকে বেইজ্জত করেন, তার জন্যে বহু কাল তিনি পাদশাহ আওরঙ্গজেবের পাঠানো উপঢৌকন গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। আওরঙ্গজেবের নেওয়া রাজকীয় আলমগির উপাধিকে ব্যঙ্গ করে সাফাভি সুলতান শাহ সুলেইমান(রাজত্ব ১৬৬৬-৯৪) একটি চিঠি লিখে জানান তিনি ভুল করে আলম-গিরি শব্দটি বেছে নিয়েছন কেননা তিনি তার পিতাকে বন্দী বানিয়েছেন(পিদার-গিরি)। আওরঙ্গজেব জানান তিনি সিংহাসনে আরোহন করে বহু কর বাতিল করেছেন(শোনা যায় আশির কাছাকাছি)। তিনি যে বাবাকে বন্দী করে রেখেছেন এ তথ্য অস্বীকার করে শাহ সুলেইমানের চিঠির উত্তরে মিথ্যা করে লিখলেন যে তাঁর পিতা স্বেচ্ছেয় সিংহাসন তার জন্যে ছেড়ে ভারতেশ্বরের মুকুট তার মাথায় পরিয়ে দিয়েছেন।
আওরঙ্গজেব তার পিতাকে অবৈধভাবে বন্দীকরার পরবর্তী কালে উদ্ভুত বহু সমস্যাই সামলে উঠতে পারেন নি। এই ঝামেলাদার শুরু সারাজীবন তাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে এমন কি আমরা দেখব এই কাজ তার আগামী দিনের ধার্মিকতার ওপর বিপুল প্রভাব ফেলবে। এই শুরুর ঘটনা আগামী দিনের ন্যায় বিচারের ধারণাও তৈরি করবে, যা উচ্চাশার ওপর নির্ভর নয়। তাঁর দীর্ঘ শাসনকালে আওরঙ্গজেব বার বার নৈতিকতা এবং তার রাজনীতির মধ্যে বৈপরীত্যের হামেসাই সম্মুখীন হবেন।
---
তার বিরোধীপক্ষ এবং সিংহাসনের শুরুর দিকের ঝামেলা ছাড়াই আওরঙ্গজেব মুঘল সাম্রাজ্য দীর্ঘ উনপঞ্চাশ বছর শাসন করেন আমৃত্যু ১৭০৭ পর্যন্ত। তিনি এই সময়ে প্রত্যেক সম্রাটের মতই নিয়মিত বিদ্রোহের মুখোমুখি হন। তা সত্ত্বেও তিনি প্রাণোচ্ছল শাসক ছিলেন।
তৃতীয় অধ্যায়
আওরঙ্গজেবের শাসন কালের সুসময়
সম্প্রসারণ এবং ন্যয় বিচার
আশাকরি আপনি স্বীকার করবেন বিখ্যাত দিগবিজয়ীরা সব সময় সফল সম্রাট হতেন না। বিশ্বের নানান দেশ বিভিন্ন অসভ্য বর্বরদের দ্বারা শাসিত হয়েছে এবং খুব বড় বিজয়ীর রাজ্যও মাত্র কিছু বছরে চুর চুর হয়ে খণ্ড বিখণ্ড হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে। সেই সব থেকে বড় শাসক, যিনি তার প্রজাদের ন্যায় বিচার দেওয়ার লক্ষ্য রেখে তার সারা জীবন গড়ে তোলেন – আওরঙ্গজেবের সদ্য সিংহাসনচ্যুত বাবাকে লেখা চিঠির অংশ
আওরঙ্গজেব একটি ধনশালী, উন্নতিশীল, সম্প্রসারনবাদনির্ভর সাম্রাজ্য উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিলেন। মুঘল রাষ্ট্রের রাজস্ব তার পিতা বেশ বাড়িয়েছিলেন। শাহজাহান প্রখ্যাত হয়েছিলেন আগরায় তাজমহল আর দিল্লিতে শাহজানাবাদ তৈরি করে। আওরঙ্গজেবের অর্জন ছিল সাম্রাজ্যের সীমান্ত ছড়িয়ে দেওয়া।

No comments: