কি কি বই – একটি প্রবন্ধ২
তার লেখা বিপুল চিঠিই তাঁর নিজের চরিত্র চিত্রণ – আমি সেই সূত্রধরে তাঁর বক্তব্য অনুসরণ করে, অধিকাংশ মুঘল সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিকদের তৈরি করা আওরঙ্গজেবের চরিত্রর বাইরে নতুনভাবে তাঁকে খুঁজে পেয়েছি। আজ আওরঙ্গজেবের দুহাজার চিঠি আমরা পড়তে পাই ফারসিতে। চিঠির যে সব সংকলন বার হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আদাবইআলমগিরি, কালিমাতইতাইয়াইবাত, রাকিমইকারামি এবং রুকাতইআলমগিরি (আমি মূলত বিলমোরিয়ার অনুবাদ ব্যবহার করেছি, তবে মাঝে মধ্যে মূলের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে)। এছাড়াও ছাপা না হওয়া দস্তুরঅলআলমাঘহায়ি এবং আহকমইআলমগিরি(যদুনাথ যে এনেকডোটস অব আওরঙ্গজেব অনুবাদ করেছেন, এটা সেটা নয় চিঠির সঙ্কলন)। যদুনাথ সরকারের এনেকডোটস অব আওরঙ্গজেব (কলকাতা ১৯১৭)তে আওরঙ্গজেবকে নিয়ে বেশ চালু, মনোহরণ, চটপটে কিছু গপ্প আছে, কিন্তু অনেকগুলোর ঐতিহাসিক ভিত্তি গণ্ডগোলের। যদুনাথ জানতেন বলেই নিজেই প্রতিটা গল্পের টিকায় সঠিক তথ্য উল্লেখ করেছেন। আমি যদুনাথের এনেকডোট...টা সন্তর্পনে ব্যবহার করেছি, বিশেষ করে তার কথিত দ্বিতীয় ইচ্ছের(উইল) কথা আমি স্বীকার করিনি(Anecdotes, 51–55)।
আওরঙ্গজেব নিজের কথা বলেছেন বেশ কিছু ফরমানে এবং নিশানে। আমি জ্ঞান চন্দ্রের আওরঙ্গজেবের ফরমান বিষয়ে প্রবন্ধ ব্যবহার করেছি – ঐ, আবার সন্তর্পণে তথ্য তুলেছি, বিশেষ করে হিন্দু মন্দির ধ্বংস বিষয়ে এবং S. A. I. Tirmizi’s Mughal Documents (Delhi, 1995)ও ব্যবহার করেছি।
আওরঙ্গজেবের সময়ের খবর সমীক্ষা(নিউজ রিপোর্ট বা akhbarat) বেশ কিছু মহাফেজখানায় থেকে গিয়েছে, আমি সেগুলোর পরোক্ষ সূত্র থেকেই ব্যবহার করেছি। মুনিস ফারুকির প্রিন্সেস অব দ্য মুঘল এম্পায়ার বইতে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রাখা আখবারাতইদরবারইমুয়াল্লার তথ্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেছেন।
---
আওরঙ্গজেবকে নিয়ে পরোক্ষ তথ্য প্রচুর কিন্তু আশংকার হল সেগুলি গভীরতাহীন। উনিবিংশ শতকে এলফিনস্টোনের(১৮৪১) এবং স্ট্যানলি লেন-পুল(১৮৯৩)এর ছাপার সংস্করণ পাওয়া যায় কিন্তু তথ্যে গন্ডোগোল আছে। আমি এই বই ব্যবহার করি নি। স্বশিক্ষিত ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার(১৮৭০-১৯৫৮)। বিংশ শতকে আওরঙ্গজেবকে নিয়ে যত কাজ হয়েছে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনিই করেছেন। তিনি ইংরেজিতে আওরঙ্গজেবের চিঠি অনুবাদ করেছেন, এবং অবশ্যপাঠ্য পাঁচ খণ্ডে হিওস্ট্রি অব আওরঙ্গজেব লিখেছেন। বহুকাল ধরে যদুনাথ আওরঙ্গজেব বিষয়ে শেষ কথা বলতেন। কারণ তাঁর আগে আওরঙ্গজেবকে নিয়ে বিশদ গবেষণা কেউই করেন নি প্রায়। আস্তে আস্তে যখন গবেষকেরা আওরঙ্গজেবের সময় জানতে বুঝতে শুরু করলেন, তখন দেখলেন আওরঙ্গজেবকে যদুনাথ যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, মানুষটা তার থেকে অনেকটা আলাদা। তার প্রতি সম্মান জানিয়েই বলা দরকার তার তৈরি করা আওরঙ্গজেবের চরিত্র সাম্প্রদায়িক রঙ্গে রাঙ্গানো এবং কিছু কিছু জায়গায় খুব বড় ঐতিহাসিক ভ্রান্তি আছে। যারা যদুনাথ সরকারের কাজের পদ্ধতি এবং ভাবনা বিষয়ে বিশদে জানতে চান তাদের অবশ্যই দীপেশ সরকারের The Calling of History: Sir Jadunath Sarkar and His Empire of Truth (Chicago, 2015) পড়তে হবে।
---
আওরঙ্গজেবকে নিয়ে পরোক্ষ তথ্য প্রচুর কিন্তু আশংকার হল সেগুলি গভীরতাহীন। উনিবিংশ শতকে এলফিনস্টোনের(১৮৪১) এবং স্ট্যানলি লেন-পুল(১৮৯৩)এর ছাপার সংস্করণ পাওয়া যায় কিন্তু তথ্যে গন্ডোগোল আছে। আমি এই বই ব্যবহার করি নি। স্বশিক্ষিত ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার(১৮৭০-১৯৫৮)। বিংশ শতকে আওরঙ্গজেবকে নিয়ে যত কাজ হয়েছে, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনিই করেছেন। তিনি ইংরেজিতে আওরঙ্গজেবের চিঠি অনুবাদ করেছেন, এবং অবশ্যপাঠ্য পাঁচ খণ্ডে হিওস্ট্রি অব আওরঙ্গজেব লিখেছেন। বহুকাল ধরে যদুনাথ আওরঙ্গজেব বিষয়ে শেষ কথা বলতেন। কারণ তাঁর আগে আওরঙ্গজেবকে নিয়ে বিশদ গবেষণা কেউই করেন নি প্রায়। আস্তে আস্তে যখন গবেষকেরা আওরঙ্গজেবের সময় জানতে বুঝতে শুরু করলেন, তখন দেখলেন আওরঙ্গজেবকে যদুনাথ যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, মানুষটা তার থেকে অনেকটা আলাদা। তার প্রতি সম্মান জানিয়েই বলা দরকার তার তৈরি করা আওরঙ্গজেবের চরিত্র সাম্প্রদায়িক রঙ্গে রাঙ্গানো এবং কিছু কিছু জায়গায় খুব বড় ঐতিহাসিক ভ্রান্তি আছে। যারা যদুনাথ সরকারের কাজের পদ্ধতি এবং ভাবনা বিষয়ে বিশদে জানতে চান তাদের অবশ্যই দীপেশ সরকারের The Calling of History: Sir Jadunath Sarkar and His Empire of Truth (Chicago, 2015) পড়তে হবে।
খুব সম্প্রতি আওরঙ্গজেবকে নিয়ে গবেষণা অনেকদূর এগিয়েছে। আগে যাদের নাম করেছি, তাদের সঙ্গে অবশ্যই পড়তে হবে M. Athar Ali, Satish Chandra, S. M. Azizuddin Husain, Irfan Habib, Harbans Mukhia, and John Richards কে। বহু গবেষক আওরঙ্গজেবের সময়ের নানান বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন যেমন, Catherine Asher (architecture), Richard M. Eaton (temple desecration), Louis Fenech (relations with Sikhs), Yohanan Friedmann (banning of Sirhindi), Jos Gommans (battles and Deccan years), Stewart Gordon (Mughal-Maratha conflict), B. N. Goswamy (Hindu ascetics), J. S. Grewal (Hindu ascetics and Sikhs), Alan Guenther (Fatawa-i Alamgiri), Robert Hallissey (relations with Rajputs), Shalin Jain (relations with Jains), Heidi Pauwels (Keshava Deva Temple), Katherine Butler Schofield (née Brown) (music), and Taymiya Zaman (Bhimsen Saxena)। বিনয় লালের ওয়েবসাইট মানস ((www.sscnet.ucla.edu/southasia/)) আওরঙ্গজেবের সময়ের নানান বিতর্কিত বিষয় নিয়ে নানা প্রবন্ধ সঙ্কলন করেছে। এছাড়াও আওরঙ্গজেবকে কিভাবে বৃহত্তর মুঘল সাম্রাজ্যের পরিসরে দেখা যায় সেই বিষয় নিয়ে বেশ কিছু কাজ হয়েছে, Michael H. Fisher, A Short History of the Mughal Empire (London, 2016); John F. Richards, The Mughal Empire (Cambridge, 1993); and Francis Robinson, The Mughal Emperors and the Islamic Dynasties of India, Iran, and Central Asia, 1206–1925 (New York, 2007)।
এই বইটি লিখছি লেখার সময় বেশ কিছু অগ্রন্থিত বন্ধু-সহকর্মী কাজ যেমন, Supriya Gandhi (Dara Shukoh), Yael Rice (painting) ইত্যাদি দেখি। এছাড়াও জুরিখে আয়োজিত European Association for South-Asian Studies Conference সম্মেলনের আওরঙ্গজেব বিষয়ে প্যানেলের বহু গবেষকের কাজ দেখেছি। আজ আমরা অনেকে নতুন করে আওরঙ্গজেবকে খুঁজে বার করার চেষ্টা করছি, বহু গবেষক বর্তমানের বহু পরোক্ষ তথ্য অবলম্বন করে সেই সময়ের এই মানুষটাকে জানতে উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছেন।
---
শেষে আওরঙ্গজেব বিষয়ে কিছু কাজ এবং দুর্বলতা উল্লেখ করা যাক। আজকে হয়ত আওরঙ্গজেবের ওপরে মুঘল পরিবারের সদস্যদের তুলনায় সব থেকে বেশি কাজ হয়েছে, কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র অবলম্বনে লিখিত হয়েছে যেমন আখবারাত, যা সাধারণত গবেষকদের আওতার বাইরেই থেকে যায়। এছাড়াও নিয়মিত বেশ কিছু নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে আওরঙ্গজেব বিষয়ে। উদাহরণস্বরূপ ২০১১ সালে আলিগড় মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আলমারি থেকে তাঁর একটি তরোয়াল টপকে এ সময়ে নেমে পড়েছে। ক্রিস্টিজে নিলামে ওঠা ফরমান ২৭৫০০ ডলারে পাওয়া গিয়েছে। যারা আওরঙ্গজেবকে নিয়ে গভীর গবেষণা করতে চান তাদের তথ্য সম্পদ নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
---
শেষে আওরঙ্গজেব বিষয়ে কিছু কাজ এবং দুর্বলতা উল্লেখ করা যাক। আজকে হয়ত আওরঙ্গজেবের ওপরে মুঘল পরিবারের সদস্যদের তুলনায় সব থেকে বেশি কাজ হয়েছে, কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র অবলম্বনে লিখিত হয়েছে যেমন আখবারাত, যা সাধারণত গবেষকদের আওতার বাইরেই থেকে যায়। এছাড়াও নিয়মিত বেশ কিছু নতুন নতুন তথ্য উঠে আসছে আওরঙ্গজেব বিষয়ে। উদাহরণস্বরূপ ২০১১ সালে আলিগড় মুসলমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আলমারি থেকে তাঁর একটি তরোয়াল টপকে এ সময়ে নেমে পড়েছে। ক্রিস্টিজে নিলামে ওঠা ফরমান ২৭৫০০ ডলারে পাওয়া গিয়েছে। যারা আওরঙ্গজেবকে নিয়ে গভীর গবেষণা করতে চান তাদের তথ্য সম্পদ নিয়ে কোন সমস্যা নেই।
সাধারণ পাঠক এবং গবেষক উভয়কেই ভাবতে হবে ঐতিহাসিক তথ্য আর বৈধ ঐতিহাসিক দাবি কাকে বলে। যারা আওঙ্গজেবের বর্বরতা্র ‘নিদর্শন’ দিয়ে থাকেন, তারা আদতে আধুনিক সময়ে হিন্দু-মুসলমান দ্বন্দ্বের মধ্যে ঢুকে পড়ে মিথ্যা প্রচারে খুবই উৎসাহী হন এবং নির্ভর করেন ভুল অনুবাদে এবং মিথ্যা তথ্যে। যারা আওরঙ্গজেবকে দোষ দ্যান তাদের অধিকাংশেরই ইতিহাসকে কিভাবে দেখতে হবে সে বিষয়ে কোন প্রশিক্ষণ নেই এবং আধুনিকপূর্ব ফারসি বিষয়ে তাদের জ্ঞান শুন্যের কোঠায়। জনগণতান্ত্রিকভাবে লিখিত জনপাঠ্যগুলি বর্জন করুণ চোখবুজে, যেগুলি বাজারে ছেয়ে গিয়েছে বিপুলভাবে। এই বই পরিচিতিটি লিখলাম, বিপুল বিশাল তথ্য পরিসরে খুব কম সত্যভিত্তিক চরিত্র চিত্রিত সম্রাট আওরঙ্গজেব আলমগিরকে উদ্দেশ্য করে।
No comments:
Post a Comment