Saturday, March 17, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৩ - ঔপনিবেশিকতাবাদের জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান ।। বারনার্ড কোহন

ইতিহাসলেখন পদ্ধতি
ব্রিটিশ ভারত তৈরিতে এই পদ্ধতিটি অন্যান্য সবকটি পদ্ধতির থেকে সব থেকে জটিল, পরিব্যপ্ত, ক্ষমতাশালী। ব্রিটিশদের ক্ষেত্রে ইতিহাস একটি তত্ত্বতাত্ত্বিক(অন্টোলজিক্যাল) ক্ষমতা যা শিক্ষিতদের বোঝাতে চেষ্টা করে কোনটা বাস্তব এবং সামাজিক বিশ্ব কিভাবে তৈরি হয়েছে তার পদ্ধিতিগুলি। ভারত শাসনে ইতিহাসের লক্ষ্য এবং তাকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক আজও থামে নি। ভারতের বিপুল এলাকা দখল এবং সার্বভৌমত্বের বিতর্কের সময় থেকেই ব্রিটিশেরা তাদের শাসন পদ্ধতি কি হবে তার নিয়ম তৈরি করেছিল তাদের আগের রাষ্ট্র আর শাসকদের আইন আর শাসন নিজেদের মত বিশ্লেষণ করে। পুরনো শাসন ব্যবস্থার অধিকাংশ আমলাকে তারা নিজেদের শাসনে নিতে চাইল। ভারতের রাষ্ট্রের ইতিহাস আর প্রথার জ্ঞান, ঔপনিবেশিক সরকারের কাছে ভারত শাসনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে।

বাংলায় ১৭৭০ সালে তারা শুরু করল এক ধরণের পদ্ধতি যার নাম এনকুয়ারি – কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের তালিকা যার মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে অতীতে কিভাবে রাজস্ব নির্ধারণ এবং আদায় হত। হাতেগোণা এই প্রশ্নতালিকার মাধ্যমেই শুরু হল ভারতজুড়ে সর্ববিস্তৃত এবং প্রসারণশীল প্রশাসনিক কাজকর্ম যাকে উপনিবেশ ভূমি-বন্দোবস্ত নামে অভিহিত করছে। এই উদ্যমকে ‘প্রথা এবং স্থানীয় ইতিহাস’এর সংকলন হিসেবে নাম দিয়ে জমিসত্ত্বের ব্রিটিশ বিতর্ক শুরু হল। এই পদ্ধতিটা শেষ হল জেলা ভিত্তিক জমি সেটলমেন্ট সমীক্ষায়।

ইতিহাস লেখার পদ্ধতির দ্বিতীয় উদ্যমটি হল, আলেকজান্ডার ডাও, রবার্ট ওরমে, চার্লস গ্রান্ট, মার্কস উইলকস, জেমস মিল এবং জেমস টডকে দিয়ে ভারত সভ্যতার চরিত্র নির্ধারণ করানোর প্রক্রিয়ায়। এই ইতিহাসলেখন প্রক্রিয়া এবং ইতিহাস বর্ণনার আঙ্গিক বা রীতি অবশ্যই বিশদে আলোচনা যোগ্য, কিন্তু সার্বিকভাবে একটা বিষয় বলা যায়, সবকটি ইতিহাস লেখনের কেন্দ্রে রয়েছে ভারতে এসে ব্রিটিশদের সভ্যতা ছড়ানোর প্রক্রিয়ার বৈধতা দান এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন।



তৃতীয় ইতিহাসলেখন পদ্ধতিটি হল ভারতে ব্রিটিশ ইতিহাস। আদতে এটিকে ‘জনপ্রিয়’(পপুলার) ইতিহাস নাম দেওয়া হল – ভারতে বা ব্রিটেনে ঘটা কিছু ঘটনার সমাহার করে - কলকাতার ব্ল্যাকহোল, টিপুর হার, লক্ষ্ণৌ দখলে কিছু প্রতীকী ব্যক্তি এবং বিষয়ী নায়ক আর খলনায়কের জন্ম, নানান ‘জনপ্রিয়’ নাটক এবং কবিতা; বিভিন্ন স্মারক এবং গম্ভীরতম পবিত্র ক্ষেত্র তৈরি করে তাদের ইতিহাসের পার্থিব ভিত্তি তৈরি করা হল।

No comments: