ভারতে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ(কোম্পানি এবং রাণীর সাম্রাজ্য) টিকেছিল দুটি উপাযে - প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তি নতুন এলাকা দখল করার ক্ষমতা তৈরি করে দিয়েছিল, দ্বিতীয়ত বিজ্ঞান নামক সর্বরোগহর একটি শব্দ নতুন ধরণের ইওরোপিয় ভদ্রবিত্তকে গ্লানিহীন স্বেচ্ছা দাসত্ব তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছে। তারা প্রথম থেকেই মনে করেছে আধুনিক ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানের ধারা উদ্ভাবনের ফলে ইওরোপ বিশ্ব বিকাশে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে। এই প্রযুক্তি আর বিজ্ঞানই আদতে আগ্রগতির মূল হাতিয়ার। এটাই ভদ্রত্তিক ধারণায় তথাকথিত অবৈজ্ঞানিক উপনিবেশে মেট্রোপলিটনের শাস-বৈধতার একমাত্র যৌক্তকতা। বিদ্যাসাগর থেকে বর্তমান-বাম সক্কলেই এই বৈধতার মধ্যে খুঁজেছে ঔপনিবেশিক দাসত্ব করার ছল।
পুঁজির হাতে উঠে আসা নতুন জ্ঞান পাঁচশ বছর ধরে উপনিবেশ তৈরিতে সাহায্য করেছে। ইসলামের সঙ্গে যুদ্ধের অভিজ্ঞতায়, ইসলামি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে না এসে পঞ্চদশ শতে ইওরোপের দুই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, স্পেন আর পর্তুগাল ভারতের মশলা অঞ্চলে পৌঁছতে চাইল আফ্রিকার উপকূল হয়ে। পুঁজি দিল ইহুদিরা আর নতুন সমুদ্র বাণিজ্যের জ্ঞান এল ভারত-আরব-পারস্য সূত্র চুরি করে,।
এই যাত্রায় উঠে আসা বিপুল কপালে চোখ তুলে দেওয়া লাভের অঙ্ক ইওরোপের দীর্ঘকালীন অধমর্ণতা কাটানোর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠল ইওরোপের অন্যান্য দেশের কাছে। উনবিংশ শতকে তথাকথিত আধুনিক শিল্পোদ্যোগের প্রাথমিক মুখড়া সারা হয়ে গেল ইওরোপের সমুদ্র বাণিজ্য আর উপনিবেশিক লুঠের মাধ্যমে। একদিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নানান দেশকে জয় করা, অন্যদিকে এই প্রযুক্তির বৌদ্ধিক উল্লম্ফন দেখিয়ে উপনিবেশের বুদ্ধিবৃত্তিকে কিনে নেওয়ার পরিকল্পনা ছকা হয়ে গেল।
ইওরোপ তার অধমর্ণতার জন্যে বহুকাল ধরেই প্রকৃতিকে দুষছিল। কিন্তু এশিয় থেকে চুরি করে আনা জ্ঞান প্রযুক্তি এবং সেই প্রযুক্তি বলে নব্য প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান নতুন নতুন দেশ জয় করে সেই উপনিবেশের ‘কিম্ভুতকিমাকার’ মানুষকে মেট্রোপলিটনে নিয়ে এসে জাদুঘর/চিড়িয়াখানার মত করে দেখানোর কাজ পেল আর তাদের হাজার হাজার বছরের অকেন্দ্রিভূত উৎপাদন ব্যবস্থায় বিকশিত পণ্য সারা বিশ্ব(মূলত ইওরোপে) সওদা করার সুযোগ পেল। লুঠেরা প্রযুক্তির বলে অধমর্ণ ইওরোপ আর প্রকৃতিকে দোষ দেয় না। সে তাকে দাস বানাবার স্বপ্ন দেখে। সে শুধু যে বিদেশেই উপনিবেশ স্থাপন করছে না, সে নিজের দেশেই কৃষক আর পশুপালকদের ওপর ঔপনিবেশিক নিগড় চালিয়ে দেয়। বিপুল সংখ্যার এই মানুষদের সে জীবিকা থেকে উচ্ছেদ করে, দাস বানিয়ে বিনামূল্যে বা ন্যুনতম মূল্যে, তাদের শ্রম লুঠ করে, দক্কগতা, জ্ঞান ধ্বংস করে নবাকার বিপুল বিশাল কেন্দ্রিভূত কারখানাতে শ্রমিক হিসেবে জুড়তে থাকে। এই সময়ের ঔপনিবেশিক লুঠেরা অত্যাচারী বৈজ্ঞানিকতার মনোভাব অভিজাত লুঠেরা বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক বেকনের লেখায় ফুটে উঠেছে।
বেকন অভিযাত্রী(আদিতে লুঠেরা, কিন্তু ঔপনিবেশিক ভদ্রবৃত্তিক ভাষ্য হিসেবে বৈজ্ঞনিক, পর্যটক)দের সাহস দিয়ে বললেন প্রকৃতির একমাত্র কাজ হল, to serve the business and conveniences of man... I am come in very truth leading to you Nature with all her children to bind her to your service and make her your slave। বেকনের বুদ্ধিবৃত্তিতে তৈরি হল সেই ঔপনিবেশিক যুগের বৈজ্ঞানিক সত্য।
ইওরোপিয়দের হাতে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি নামক শব্দ(আদতে প্রযুক্তি) ব্যবহারের ইতিহাস, সরাসরি বা পরোক্ষ মানসিক উপনিবেশ তৈরির ইতিহাস।
No comments:
Post a Comment