অধ্যায়২
গিলক্রিস্ট আর হিন্দুস্তানির সংজ্ঞা
তিনি বললেন ইওরোপিয়দের, উচ্চচাকুরে ভারতীয়দের সামাজিক প্রথা ও মৌখিক
আলাপচারিতার চরিত্র সম্বন্ধে গভীরভাবে জানতে বুঝতে হবে। বিপরীতে কোন ভারতীয় অধস্তন
যদি কোন ইওরোপিয়, এমন কি দেশিয় উচ্চপদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বা
খারাপ কথা বলে, তাহলে তাদের কোনোভাবেই ছেড়ে কথা বলা যাবে না। ভারতে বসবাসকারী
অধিকাংশ ইওরোপিয়র মতই গিলক্রিস্টও পা ঢাকার নানান ইঙ্গিতময় পরিধেয় আর প্রথা
আবশ্যিক জানার বিষয়ে তার ছাত্রদের বলেছেন। তিনি লিখছেন, ইওরোপিয়রা মাথার আবরণ খুলে
সম্মান জানায়, সেখানে মন্দির মসজিদে পুজো আর সম্মান জানাতে বা বাড়িতে বা দপ্তরে ঢুকতে
ভারতীয়রা পায়ের জুতো খোলে। তবুও তিনি লিখছেন, ইন্ট্রুড অন দ্য ব্রিটিশ
ইনহ্যাবিট্যান্টস অব ক্যালকাটা এন্ড এনভায়রনস, উইদাউট দ্য স্লাইটেস্ট আটেনশন টু
দিজ এক্ট অব পোলাইটনেস, মোস্ট ক্রুপুলাসলি অবজার্ভড অলমোস্ট দেমসেলভস, এজ ইফ দে
ওয়ার ডিটারমাইনড টু ট্রামপ্ল আস আন্ডার দ্য প্রাইড অব কাস্ট, বাই এভিন্সিং, দ্যাট
টু আ হিন্দু অর মুসলমান এলোন, ইট ওয়াজ নেসেসারি টু পে দ্য কমন মার্কস অব সিভিলিটি
অর রেস্পেক্ট।
ইওরোপিয়দের বাড়িতে ভারতীয়দের জুতো পরে বিচরণকে দেখা হল বৃহত্তর ভারতীয়
জনসমষ্টির পক্ষে ইওরপিয়দের সমকক্ষ বা উচ্চশ্রেণীর হওয়ার বাসনা হিসেবে, শুধু
ইওরোপিয়দের সম্বন্ধ সূত্রে নয়, অনান্য ভারতীয়দের তুলনাতেও, যেন জুতো পরে
ইওরোপিয়দের সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা।
ভারতীয় ভাষাগুলির শালীন আকারের ক্রমবিভক্ত ব্যকরণ ব্যবস্থা, এবং বিভিন্ন ধাপের
পরিচিতি আর সম্মানের ব্যবস্থা, ইওরোপিয়দের কাছে অসম্মান বলে মনে হতে লাগল। ভারতে
আসা অসতর্ক(আনউইটিং) ইওরোপিয়দের সম্বোধনে ভৃত্যরা সাধারণত একবাচনিক বিশেষণ ব্যবহার
করত ...ইট ইজ র্যাদার সারপ্রাইজিং দ্যাট সার্ভ্যান্টস এন্ড সিপাহিজ ইটিসি, শুড বি
এলাউড টু টেক সাচ এডভান্টেজ অব মাস্টার্স ইগ্নোর্যান্স অব দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড
কাস্টমস অব দ্য কান্ট্রি, এস টু ‘তু’ এন্ড ‘তেরা’ দেম অন এভ্রি অকেশনস; আ লিবার্টি
দে ডেয়ার নট টেক উইথ ওয়ান এনাদার। ভৃত্যরা সাহেবদের যে অসম্মানসূচক সম্বোধন করে
সেটা যে শুধু ব্যক্তিগত অসম্মানই নয়, এতে দেশেরও সম্মান হানি হয়। গিলক্রিস্টের
বক্তব্য ছিল, দেশিয় ভাষা আর প্রথার প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণ শুধু যে সাহেবদের সম্মান
আদায়ের পক্ষে যথেষ্ট তো বটেই, একই সঙ্গে সাহেবের পক্ষে অবাঞ্ছিত অবস্থাও এড়ানোর
চেষ্টা হতে পারত।
গিলক্রিস্ট নির্দেশিত ব্রিটিশদের ভারতীয়(মূলতঃ হিন্দুস্থানী) ভাষা শিক্ষার যে
নিদান দিয়েছেন প্রথমতঃ তা কতটা ভালভাবে তারা করতে পেরেছে, দ্বিতীয়তঃ গিলক্রিস্ট সে
মাপদণ্ডটা তৈরি করে গিয়েছেন তা কতটা স্থায়ী হয়েছে? সেই শতকের মধ্যপথ পর্যন্ত
অভিযোগ উঠছিল, ব্রিটিশেরা হিন্দুস্থানী বা সাধারণত যাকে উর্দু বলে, সেটি ভালভাবে
শিখছে না। এফ জে শোর, যাকে মনে করা হয় ভারতীয়দের বন্ধুভাবাপন্ন এবং ভারত আর
ভারতবাসী সম্বন্ধে কোম্পানি আর তাদের আমলাদের নীতিসমূহের বিরোধী, তিনি বেশ কয়েক
বছর ভারতে চাকরি করা বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট আর সেনা আধিকারিকদের হিন্দুস্থানী
শিক্ষার মান আর জ্ঞান নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করেছেন। ফরাসী আর ইটালিয়রা যেভাবে ভাঙ্গা
ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলে, তেমনি তার স্বদেশিয়দের ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দুস্থানী জানা
নিয়েও ঠাট্টা মস্করা করেছেন। তার মনে হয়েছে, ইওরোপিয়দের এই ভাষাটি সঠিকভাবে না
বলতে পারায় ইওরোপিয়দের সঙ্গে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতীয়রা রীতিনীতি বহির্ভূত আচরণ
করছে। তিনি একটি কাল্পনিক ঘটনা আলোচনা করেছেন – দুতিনজন ব্রিটিশ শিকারে বেরোল এদের
মধ্যে একজন ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দুস্থানী বলতে পারে, একজন ভারতীয়কে সে শিকার
সম্বন্ধে কোন এক প্রশ্ন করল, দেশিয় ব্যক্তিটি আগ্রহহীনভাবে উত্তর দিল, তার কাজ
বন্ধ না করেই; অনেক সময় তার মুখের দিকে না তাকিয়েই, অসম্মান্সূচকভাবেই। আরেকজন যিনি
ভালকরে দেশিয় ভাষায় কথা বলতে পারেন, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মান দিয়ে ভাষাটি বললেন
একজন চাষীর সঙ্গে, তাতে চাষীটি সম্মান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল, তার কাজ বন্ধ করে, সালাম
দিল, এবং সব থেকে সাম্মানসূচক ভাষায় তার উত্তরটি প্রদান করল। কেন দুজনের ক্ষেত্রে
ব্যবহারটা আলাদা হল, আমি যদি কোন একজন ভারতীয়কে এই প্রশ্নটা করি তাহলে হয়ত উত্তরটা
হবে, দুজন ভদ্রলোক? আপনি প্রথমজনকে ভদ্রলোক আখ্যা দিচ্ছেন? যদি তাই হয়, তাহলে তিনি
কেন আমার মত সহজভাবে কথা বলতে পারেন না? দ্বিতীয়জন অবশ্যই ভদ্রলোক। আমি শপথ নিয়ে
বলতে পারি একথা।
No comments:
Post a Comment