আধুনিক ইওরোপিয় বনাম অনুগামী মেকলের নাতিনাতনিরা -
ইওরোপের নকল করেই চিত্তির
ইওরোপের নকল করেই চিত্তির
পশ্চিম নিয়ে আগাপাছতলা জ্ঞানওয়ালা ভদ্রবিত্তরা সক্কলে মনে করি এদেশে জন্মে পদাঘাতই শুধু পেলাম। ইওরোপে জন্মালে কিছু না কিছু হতাম। ইংরেজি শিক্ষিতরা মনে করে প্রত্যেক ইওরোপিয় বা আমেরিকিয় আদ্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী, তথাকথিত সুস্থ সংস্কৃতি চর্চক, দুষ্টের যম শিষ্টের পালক ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। তারা যা বলেন তা আদতে হয় গীতা, বা কুরান বা বাইবেলের বার্তার সামিল। তাদের তৈরি তৃতীয় বিশ্বের মধ্যবিত্ত-ভদ্রদের কাজ হল ইওরোপের তৈরি নানান বিকাশের ধারণাকে সযত্নে সারা বিশ্বে প্রয়োগ করা - এবং সেই জন্য নানান বিশ্ববিদ্যালয়, নানান কারখানা, নানান স্বেচ্ছাসেবী-কর্পোরেট সংস্থায় ইংরেজি শিক্ষিত ভদ্রদের কাজ দিয়ে, দাসত্ব কনে নিয়ে যায় পশ্চিমিরা।
এই তত্ত্ব ভাবতে ভাবতে এক্ষুনি কবীর সুমনএর ফ্রান্স নিয়ে পোস্ট দেখলাম। তিনি বলছেন, হোলি গ্রেইল দখল করা নিয়ে ক্রুসেড শুরু। এই প্রবন্ধে অন্য সব কিছু নিয়ে সহমত হলেও আদতে জনাব সুমন ক্রুসেড নিয়ে যা বছেন তা পশ্চিমী জ্ঞানচর্চকদের তৈরি করা ইতিহাস। তিনি স্থিতধী মানুষ। তিনি হয়ত এই তুচ্ছ কথায় কান দেবেন না। তবুও বলা।
তাহলে সত্য কি?
আদিতে অসভ্য বর্বর ইওরোপিয়রা(আজও তাই লেভন্ট এলাকা দেখুন কিভাবে তারা বোমা ফেলছে, বিশ্বযুদ্ধগুলো দেখুন, কিভাবে মানুষ মেরেছে, - আজও তারা বর্বর কিন্তু দেখতে চকচকেমাত্র) এমন কিছুই উতপাদন করতে পারত না, যা তারা বিশ্ব বাজারে বিক্রি করতে পারে। এমন কোনো জ্ঞান ছিল না যা দিয়ে তারা সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করতে পারত। ফলে কয়েক হাজার বছর ধরে তারা ভারত, পারস্য আর চীনের সমাজ-অর্থনীতির কাছে অধমর্ণ হয়েই ছিল।
আদিতে অসভ্য বর্বর ইওরোপিয়রা(আজও তাই লেভন্ট এলাকা দেখুন কিভাবে তারা বোমা ফেলছে, বিশ্বযুদ্ধগুলো দেখুন, কিভাবে মানুষ মেরেছে, - আজও তারা বর্বর কিন্তু দেখতে চকচকেমাত্র) এমন কিছুই উতপাদন করতে পারত না, যা তারা বিশ্ব বাজারে বিক্রি করতে পারে। এমন কোনো জ্ঞান ছিল না যা দিয়ে তারা সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করতে পারত। ফলে কয়েক হাজার বছর ধরে তারা ভারত, পারস্য আর চীনের সমাজ-অর্থনীতির কাছে অধমর্ণ হয়েই ছিল।
সেই বাণিজ্য প্রবাহ ঘোরাতে ধর্মের নামে, মহান খ্রিস্টের নামে শুরু করেছিল ধর্ম যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আরবে, পারস্যে প্রচুর গ্রন্থাগার পোড়ায়, প্রচুর বই লুঠ করে নিয়ে যায় ইওরোপে। ভারত, চিন থেকে, পারস্য থেকে ইওরোপ থেকে হঠিয়ে দেওয়া জেসুইট পাদ্রিরা ইওরোপের হয়ে জ্ঞান নকল করতে থাকেন।
ঠিক কাজটি চীনে করেছিলেন তার অনেক পরে ঘোমটা পরা সামাম্রাজ্যবাদী নিডহ্যাম - যিনি চিনের নানান প্রযুক্তি, নানান পরম্পরার কিছু নথিকরণ করেন। তাঁর প্রশ্ন ছিল, চিন(আমরা ধরেই নিচ্ছি তার সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশ, পারস্য, আরব ইত্যাদি অঞ্চল) যদি এতই উন্নত হবে, তাহলে আধুনিক কালে এশিয়া ইওরোপের থেকে পিছিয়ে কেন?
তিনি হয়ত জানতেন না কোপার্নিকাসের বিশ্ব মডেল আরব থেকে নেওয়া, যা আরব-ভারতের জ্ঞানীরা বহু হাজার বছর ধরে বিকশিত করেছিল, কলণবিদ্যা গিয়েছিল কেরল থেকে যা পরে ইওরোপে গিয়ে নিউটনিয়ন অঙ্ক হয়েছে, শূন্য সহ সংখ্যা বীজগণিত পাটিগণিত আর ত্রিকোনোমিতি গিয়েছিল এশিয়া থেকে - বর্বর ইওরপিয়রা শূন্যের প্রয়োগ শুরু করেছে শতিনেক বছর আগে মাত্র - চার্চ একে বলত শয়তানের দোসর - তারা বড় অঙ্ক করবে কি করে।
আমরা যেন মনে রাখি ক্রুসেডের সময় বা পলাশীর কিছু সময় পর্যন্ত বিশ্বকেন্দ্র ছিল এশিয়া, বলা দরকার বাংলা।তার নিজস্ব ছিল উৎপাদন প্রক্রিয়া। ফলে নিজের জ্ঞান, নিজেদের দক্ষতা, নিজেদের প্রযুক্তি আর বাজার। কেন এশিয়ার নানান দেশে শিল্প বিপ্লব হল না, তাই নিয়ে শিক্ষিতদের প্রচণ্ড মাথা ব্যথা - আমরা বলি আমরা লুঠেরা এই উতপাদন ব্যবস্থা তৈরি করতে চাই নি, যে উৎপাদন ব্যবস্থার রেশ আমরা আজও গ্রামীন অর্থনীতিতে খুঁজেপাই। এশিয়া ইওরোপিয় উৎপাদন ব্যবস্থার বাইরে দাঁড়িয়ে একদা বিকশিত হয়েছে। আজ নকল করতে গিয়েই চিত্তির।
ধর্মযুদ্ধ ইওরোপকে দেখাল তারা বিশ্বে একটা প্রান্তিক শক্তি - জ্ঞানে আর সম্পদেও - তাই বিশ্ব লুঠের ছক। সেই থেকে শুরু আমেরিকা আফ্রিকা এশিয়াকে পদানত করার উদ্যম। এশিয়ায় প্রথমে পর্তুগিজরা করেছে, ফরাসীরা চেষ্টা করেছে, ডাচেরা করেছে পারেনি, সেই কাজটি ইওরোপের হয়ে পলাশীতে সম্পাদন করল ব্রিটিশরা। ধর্মযুদ্ধে যে প্রবণতা শুরু সেই প্রবণতাটি রূপ পেল পলাশীর পর। অধমর্ণ ইওরোপ এশিয় লুঠের সম্পদে আজকের চকচকে রূপ ধারণ করেছে।
ফলে বন্ধুরা আমরা কারিগরেরা বিশ্বাস করি চাষে এই বিষ খাওয়ানো, আকাশ বাতাসে বিষাক্ত ধোঁয়া ছাড়া কারখানাগুলোমানুষের অচাহিদার কাছে পরাস্ত হতে বাধ্য।
নিডহ্যাম জানতেন না, এশিয়রা একটু ল্যাদ খাওয়া সমাজ। তারা খরগোস আর কচ্ছপের দৌড়ে কচ্ছপের দৃষ্টিতেই জীবন দ্যাখে। শেষ পর্যন্ত জিতেই যায়। আগের হাজার হাজার বছর আমরাই ঢিমেতালে বিশ্বকে চালিয়েছি, আগামী বছরগুলোকেও সেই ভাবে চালাব।
লুঠেরা শিল্পবিপ্লব মাত্র আড়াইশ বছরের গল্প - এই সময়টা তাদের দৌড়ে বেড়াবার।
তারপরের সময় আমাদের, বাংলার।
এটাই বাস্তব।
জয় বাংলা!
এটাই বাস্তব।
জয় বাংলা!
No comments:
Post a Comment