Tuesday, March 6, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা৩ - উপনিবেশের জ্ঞান চুরি এবং প্রকৃতির ওপর প্রভুত্ব - ভারতের গুটি বসন্তর টিকার জ্ঞান হরণ

লন্ডনের ভদ্রশিক্ষিত পেশাদার অভিজাত মহল তখনও নির্বিকার। ১৭২১এর বসন্তে লন্ডন দেখল বসন্তের মড়ক। ঐ বছরই পর্তুগিজ ইহুদি ডাক্তার জেকব দা ক্যাস্ত্রো সারমেন্তো ল্যাটিনে ভাইরোলেশন বিষয়ে প্রবন্ধ প্রকাশ করলেন। একটি জোড়াপাতা নিয়ে পরের বছর জার্মানে অনুদিত হল। সারমেন্তো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিলেন। যে মানুষটার স্বাভাবিকভাবে গুটি বসন্ত হয়েছে, তাঁর থেকে না নিয়ে, বীজানুটা নেওয়া দরকার যার ভাইরলেশন করা হয়েছে, তাঁর দেহ থেকে।
মন্তেগু লন্ডনে ফিরে এসে, ১৭২১ সালের এপ্রিলে, চিকিৎসক মেইটল্যান্ডকে দিয়ে তিন বছরের কন্যাকে ভাইরোলেট করালেন। এই প্রথম লন্ডনের মাটিতে ভাইরোলেশনের কাজ হল। তাঁর মেয়েকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন গুটি বসন্ত হওয়া মানুষের বাড়ি গিয়ে মেয়ের ইমিউনিটি প্রমান করতে লাগলেন। তবুও অভিজাতরা এগোতে চায় না। তারা আরও প্রমান চায়। নিজেরা মরতে চায় না। মরে তো মরুক গরীবেরা।
১৭২৭ সালে সিংহাসনে বসা দ্বিতীয় জর্জের প্রভাবশালী স্ত্রী, প্রিন্সেস অব ওয়েলস, ক্যারোলিন এগিয়ে এসে, ছয়জন নিউগেট জেলের মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা প্রাপ্ত ১৯ থেকে ৩৬ বছরের বন্দীকে বাছলেন, যার মধ্যে তিন জন মহিলা, তাদের ভাইরোলেশন দেওয়াবার ব্যবস্থা করেন। শর্ত ছিল, তারা যদি বেঁচে যায় তাহলে তারা মুক্তি পাবে। তারা মুক্তি পেল। রাজা-রানীর ডাক্তার রিচার্ড মিড সপ্তম একজন মহিলা বন্দীকে চিনা পদ্ধতিতে ভাইরোলেশন করান। তারও গুটি বসন্ত হল না। সেও মুক্তি পেল।
তবুও সাধারণের ওপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতেই থাকল। এবারে রাণী আবদার করলেন শিশুদের দেহে জীবানু প্রবেশ করানো হোক। ১৭২২এ ওয়েস্টমিনিস্টারের সেন্ট জেমস প্যারিসের ছটি অনাথ বাচ্চার ওপরে ভাইরোলেশন করা হল। বলা হল তারা সুস্থই আছে। প্রয়োজনে জনগনকে দেখে যাওয়ার অনুরোধ করা হল। ১৭২২এ রাজার দুটি নাতনিকে ভাইরোলেশন করানো হয়।
লন্ডনে আলোচনা চলতেই থাকে ভাইরোলেশন নিয়ে। একটা বিষয় পরিষ্কার যে মানুষ জানল যে এই ধরণের চিকিতসা দূর দেশে অশিক্ষিতদের মধ্যে হয় - amongst an Illiterate Sort of People। ভাওরোলেশনের কড়া বিরোধী ডাক্তার উইলিয়াম ওয়াগস্টাফে জানালেন Posterity perhaps will scarcely be brought to believe that a method practised only by a few Ignorant Women, amongst an illiterate and unthinking People should on a sudden, and upon a slender Experience, so far obtain in one of the Politest Nations in the World as to be received into the Royal Palace।
এশিয় ভাইরোলেশনের সুফল পেতে শুরু করল কিন্তু সমাজের এক্কেবারে ওপরে স্তরের হাতেগোণা আর এক্কেবারে নিচের স্তরের অনেক মানুষ, যাদের ওপর গবেষণা চলতে থাকল। মধ্যবিত্ত বরাবরের মতই একটু দূরে থেকেঘটনাবলী দেখতে লাগল। ১৭৪৬ সালে একটি দাতব্য গুটি বসন্ত এবং টিকার হাসপাতাল খুলল লন্ডনে। কিন্তু মানুষ খুবে বেশি কাছে ঘেঁসে নি For a long time, however, the prejudices against the hospital were so great, that the patients on leaving it were abused and insulted in the street; wherefore they were not suffered to depart until the darkness of the night enabled them to do it unobserved by the populace।
১৭৪৭এ প্রখ্যাত ডাক্তার মিড ল্যাটিনে গুটিবসন্ত আর হাম নিয়ে একটা প্রবন্ধ De Variolis et Morbillis Liber ছাপলেন। এতে তিনি ভাইরোলেশনের পক্ষে দাঁড়ালেন। ১৭৪৮এ এটি ইংরেজিতে অনুবাদ হয়। ১৭৫৫তে কলেজ অব ফিজিশিয়ান ভাইরোলেশন করা নিয়ে একমত হয়। গোটা ইওরোপ লন্ডনের দিকে চেয়ে থাকে।

RAJESH KOCHHAR এর Smallpox in the modern scientific and colonial contexts 1721–1840
এবং
আশিস নন্দী সম্পাদিত SCIENCE, HEGEMONY & VIOLENCE A REQUIEM FOR MODERNITY
থেকে

No comments: