Thursday, March 8, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা২ - ইওরোপের এশিয় মানচিত্র উদ্যম - মানচিত্র তৈরির দেশিয় জ্ঞান স্রেফ চুরি করেছে

একই ঘটনা ঘটেছে এশিয়ায় মানচিত্র তৈরি করার ক্ষেত্রেও। আজও মানচিত্র তৈরি যে পশ্চিমি উদ্যম সেটা তারা কম্বুকণ্ঠে বলে থাকে। তাদের আগে কোন অইওরোপিয় দেশেই এ ধরণের কোন উদ্যম নেওয়া হয় নি এমন দাবিও বৌদ্ধিক স্তরে করা হয়। ম্যাথু এডনি Mapping an Empire: The Geographical Construction of British India, 1765-1843, নামে একটা বই লিখেছেন, সেখানে তার দাবি cartographic culture ভারতে ব্রিটিশ অভিজাতরা আমদানি করেছে কেননা, তার ভাষায় spatial architecture rooted in non-Indian mathematics and structures। তিনি লিখছেন ঔপনিবেশিক ভারতে the measurement and observation inherent to each act of surveying represented science. By measuring the land, by imposing European science and rationality on the Indian landscape, the British distinguished themselves from the Indians: they did science, the Indians did not, unless in a limited way and then only at the express request of a British official . . . The practising of cartography—the making of surveys and the compilation of maps—was quintessentially at once a scientific and a British activity।
এই লেখায় স্পষ্টভাবে ভারতীয় ভূমির ওপর ঔপনিবেশিক ক্ষমতার কব্জাকে আইনি ও কৃষ্টিগত বৈধতা দিতে বলা হল দেশিয় জ্ঞানচর্চাকে ইওরোপিয় উন্নত জ্ঞানচর্চার অধীন হতে হবে, যে দাবি করেছিলেন বিদ্যাসাগর থেকে রামমোহন থেকে আজকের জ্ঞানচর্চও কেননা mystical, religious, Hindu space of India কে ইওরোপিয় rational, scientific, imperial structure of spaceএ আত্মনিবেদনই করতে হবে, এটা যেন স্বতঃসিদ্ধান্ত হিসেবে স্বীকৃত হল। বলে দেওয়া হল ইওরোপিয় উপনিবেশ দেশিয় শিক্ষিত ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষদের হাতে এমন একটা অস্ত্র তুলে দিল, যার দিয়ে সে বিপুল বিশাল দেশের মানুষ, সম্পদ এবং প্রকৃতির ওপর নজরদারি করতে পারবে।
এবং আমরাও যারা সেই ইতিহাস পড়ে সমৃদ্ধ হই, পড়াই, গবেষণা করি, তারা হয় না জেনে, অথবা না জানার ভান করে সেই ইওরোপমুখ্যতার ধুনোয় ধোঁয়াদিয়ে সেই ধারনাকে বিনা বাক্যব্যয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ঔপনিবেশিক অনৃতকর দাবিগুলি মানিয়ে নিতে বাধ্যকরি – একবারও ইতিহাস খুঁড়ে দেখতে বলিনা বাস্তব কি। খুব সম্প্রতি কালেও এই বিশেষজ্ঞমূলক ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানচর্চা আর ক্ষমতার মিশ্রণ অপশ্চিমি বিজ্ঞান বিশ্বের ওপরে আধিপত্য বিস্তার করার দাবি করেছে – এবং তাদের মতে ইওরোপিয়দের সভ্যতা বিস্তারের দায় থেকেই এও উদ্যমগুলি নেওয়া হয়েছে। ভিক্টোরিয় বিজ্ঞানের ইতিহাসকার Susan Faye Cannon, তার Science in Culture: The Early Victorian Period বইতে লিখছেন, The Great Trigonometrical Survey of India shows the workings of British policy better than still another study of Macaulay’s education minute . . .।


বলা দরকার যে এই মানচিত্র তৈরির উদ্যমের আরেকটি উদ্দেশ্য হল দেশের রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে যে লুঠ চলছিল ইওরোপিয় অত্যাচারি দখলদারি লুঠেরা শিল্পবিপ্লব গড়ে উঠছিল সেই কাজে ভর্তুকি দেওয়া। আলবর্দি বা সিরাজ বাংলা সুবা থেকে যে কর তুলত, সেই করের বোঝা নতুন জমাকালেমতুমারি করে বিপুলাকারে বাড়িয়ে দিল মীরজাফরের বাংলা সরকার। পলাশীর পরের লুঠ আর তার পরের মীর জাফর আর মীর কাশিমের সময়ের দ্বৈত শাসন ব্যবস্থায় লুটেপুটে খাওয়া কোম্পানি বহুকাল ধরেই জানত বাংলা দুধেলা গাই, তাকে যতটা পারা যায় দোহন করা দরকার। এই দোহনের কাজে দেশিয় বানিয়া আলালেরা তাদের সহায়ক হয়েছে। পলাশীর ৮০ বছর পরেও বালী-উত্তরপাড়ার জমিদার জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি কিনে নিয়ে প্রত্যেক অঞ্চলে ‘লুকিয়ে রাখা’ জমির সত্ত্ব উদ্ধার করে প্রগতিশীল ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। তার এই কাজ বর্তমান যুগের ঐতিহাসিকদের বাহবাও পেয়েছে। ফলে ব্রিটিশদের বাংলা জানা আর লুঠকর্মের সহায়তার প্রাথমিক উদ্যম হল বাংলার জরিপ এবং ভূমানচিত্র তৈরি।

No comments: