সময়টা অযোধ্যা
রাজ্যের ঔপনিবেশিকতায় প্রবেশের মুহূর্ত। ১৭৬৪তে বক্সারে ব্রিটিশেরা অযোধ্যার নবাবকে
হারিয়ে দেয়। ১৭৭২ সালে সেনাপতি রবার্ট বার্কার জানান, কোম্পানি পাশের শক্তিশালী
মারাঠাদের থেকে অযোধ্যা আর পাঠান রোহিলখণ্ডের মধ্যে এটি চুক্তি সম্পাদিত করে
নবাবকে নিরাপত্তা দেবে। হেস্টিংস এসে বার্কারকে পদচ্যুত করেন, সেনাবাহিনীকে
অযোধ্যাহ বাহিনীর সঙ্গে মিলে পাঠান রোহিলাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আদেশ দেন।
উত্তরভারতের বিপুল অংশ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কবলে চলে আসে। ১৭৭৫ সালে নবাবের এন্তেকাল
ঘটলে তাফাজ্জুলের অলস পরিশ্রমবিমুখ কৃষ্টিবান ছাত্র আসফাদ্দৌলা সিংহাসনে বসে
রাজধানী লক্ষ্ণৌতে তুলে নিয়ে যান এবং কোম্পানির লুঠেরা চাহিদায় আত্মসমর্পন করেন।
রাজস্বের দিক দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিয়ে বিপুল কোম্পানি
সেনা ভর্তুকি দিয়ে পুষতে শুরু করেন। পরে হেস্টিংসের বিচারের সময় এই ঘটনাগুলি
উদাহরণ হিসেবে উঠে আসে। আবু তালিব অযোধ্যার বিশ্বাসঘাতকতা এবং রাজনৈতিক পতন বিষয়ে
অসাধারণ তিক্ত সাহিত্য তাফজিউল গাফিলাম(Tafzīhu’l Ghāfilīn, অবহেলার অমঙ্গল) লেখেন।
তাঁর বন্ধু তাফাজ্জুলের ভাগ্যও ঢালের দিকে গড়াতে থাকে। চরমতম দুর্নীতিগ্রস্ত
নবাবের বিরুদ্ধে হত্যা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে নবাবের শিক্ষক তাফাজ্জুলকে
লক্ষ্ণৌ থেকে পালিয়ে যেতে হয় এবং তাফিজ্জুলের ভাগ্য কোম্পানির সাম্রাজ্যের
উত্থানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে।
তাফাজ্জুল খুব তাড়াতাড়ি ওয়ারেন হেস্টিংসের মূল দলের
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, লক্ষ্ণৌএর রেসিডেন্ট উইলিয়াম পামার, এডিনবরোর আর্থিক
বিশেষজ্ঞ চতুর রাজদূত ডেভিড এন্ডারসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব পাতিয়ে নেন। মধ্যপ্রদেশের
বর্তমান ভিন্দ জেলার গোহাদের রাজার সঙ্গে পামারের দরকষাকষিতে তাফাজ্জুলকে নিয়োগ
করেন হেস্টিংস। গোয়ালিয়রের মারাঠা শাসক মাধোজী সিন্ধিয়াকে শক্তিশালী করতে তাঁর
শত্রুদের বিরুদ্ধে পথ ভাবার জন্যে এন্ডারসনের কথা চালাবার কাজেও তাকে নিযুক্ত করা
হয়। ১৭৮২ সালে সিন্ধিয়ার সঙ্গে কোম্পানির সফল চুক্তি, কলকাতায় এন্ডারসন, তাফাজ্জুল
দলের সম্মান বাড়িয়ে দেয়। গুরুত্বপূর্ণ হল সিন্ধিয়া শিবিরের সঙ্গে ব্রিটিশদের
আলোচনায় নানান কৃষ্টিগত পার্থক্য উঠে আসে, সেই পার্থক্য নিরসনে ব্রিটিশদের সহায়তা
করেন তিনি। এন্ডারসন তাফাজ্জুলের বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানের প্রশংসা করে বলেন - the different
laws, customs and manners of Europe and of Asia, on Persic, Arabic and Hindu literature, and
above all on the sciences of
mathematics and astronomy, in which [Tafazzul] had made a considerable proficiency।
ব্রিটিশ শিবিরে
তাফাজ্জুলের সঙ্গে কোম্পানি শল্যচিকিতসক উইলিয়াম ব্লেন, এবং সমীক্ষাবিদ,
জ্যোতির্বিদ এবং রাজনৈতিক আমলা ক্যাপ্টেন র্যালফ ব্রুমের নানান বৈজ্ঞানিক বিষয়ে
আলোচনা হয়। তাফাজ্জুল নানান গুরুত্বপূর্ণ পুথি বুঝতে, জোগাড় করতে হেস্টিংসকে সাহায্য
করেন। হেস্টিংস তাকে গ্রিক লেখকদের আরবি অনুবাদের বিশেষ করে যুদ্ধবিদ্যা এবং
অস্ত্রবিদ্যা বিষয়ে পুথি জোগাড় করতে নির্দেশ দেন। হেস্টিংস আইনিআকবরি অনুবাদে
সহায়তা দেন। সেই পুথিতে উল্লিখিত ছিল শাহেনশা আকবর বহু সংস্কৃত ধ্রুপদী জ্ঞান
পার্সি ভাষায় অনুবাদে বরাত দেন। হেস্টিংস তাফাজ্জুলকে সেগুলিও লখণৌ থেকে জোগাড়ের
নির্দেশ দেন। জ্ঞানী-রাজদূত তাফাজ্জুল এশিয় জ্ঞান ইওরোপিয়দের শেখানোর একটা বড়
সূত্র হয়ে ওঠেন।
No comments:
Post a Comment