উল্লেখ্য তখনও ইওরোপের কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই এতসব কিছুই পড়ানো হত না। এর আগে হেস্টিংস একবার আর্থিক লাভের টোপ দিয়ে কিছু বিষয় পড়াবার চেষ্টা করেছিলেন তা চরমতম ব্যর্থ হয়েছিল। এই প্রকল্পে কিছু উৎসাহী মানুষ তাদের মুন্সীর থেকে স্থানীয় গপ্পগাছা বা ভাষা জানার চেষ্টা করেছল মাত্র, যা তখন স্বভাবিক ছিল গবেষণা পদ্ধতি ছিল।
১৭৮৪তে মাটি থেকে বিচ্ছিন্ন হবার জন্যেই জন্ম হয়েছিল এশিয়াটিক সোসাইটির। উদ্দেশ্য ভারতের অতীত গৌরব কীর্তন এবং মহার্ঘ উপনিবেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ নির্নয়। সেই শতকে এই সংগঠনে কোন দেশিয়কে অংশ নেওয়ানো হয় নি, কিন্তু কিছু কিছু দেশিয় মানুষ যোগ দিয়েছিলেন কাজে। এশিয়াটিক রিসার্চেসে বহু প্রখ্যাত সমাজ, অর্থনীতি, ধ্রুপদী ভাষা, শিল্পকলা এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমাজকাঠামো নিয়ে লিখেছেন। তারা ভারতের দুটি চরিত্র বর্ণনা করেছে – হিন্দুতে একটা পুরনো একদেহী ধর্মকথা, অসাম্যের ভিত্তিতে তৈরি সমাজ ভারতকে ভাগ্যবান করে তৈরি করেছে।
এশিয়াটিকে সদস্যপদ পাওয়া ছিল ব্যক্তিগত জ্ঞানচর্চার আকাঙ্ক্ষার উচ্চাশা। একটি সামাজিক সংগঠনের মত এক সংঘ যেখানে বৌদ্ধিক আলোচনা হত। নিজেরা নিজেদের নির্বাচিত করে পরস্পর পিঠচাপড়ানি ক্লাব তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শতাব্দ শেষে সেই ভৌগোলিক এলাকার আইন এবং ভাষা জানা জরুরি হয়ে পড়ছিল এবং সেই দক্ষতা অর্জন কোম্পানি নিজের চাকুরের দয়ার ওপরে ছেড়ে দিলনা কোম্পানি। ১৯৮৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ওয়েলেসলি বলছেন no Civil Servant should be nominated to certain offices of trust and responsibility until it shall have been ascertained that he is sufficiently acquainted with the laws and regulations enacted by the Governor General in Council, and the several languages, the knowledge of which is requisite for the due discharge of the respective functions of such offices. [N]o servant will be deemed eligible to any . . . offices [of responsibility], until he shall have passed an examination (the nature of which will be hereafter determined) in the laws and regulations, and in the languages, a knowledge of which is hereby declared to be an indispensable qualification for such respective office.
ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওরয়েন্ট স্থাপনের প্রস্তাবে ওয়েলেসলি বাংলায় ইওরোপিয়দের তৈরি ওরিয়েন্ট তত্ত্বে যে সব খামতিগুলো ছিল, সেগুলি মিটিয়ে ওরিয়েন্ট বিষয়ে পড়াকে বাধ্যতামূলক করলেন এবং একইসঙ্গে ব্রিটিশ আর তাদের দেশিয় বন্ধুদের(কপিল intermediaries শব্দটা ব্যবহার করেছেন) এতদিনের বন্ধনহীন এই সম্পর্ককে প্রাতিষ্ঠানিকতায় বেঁধে ফেলতে চাইলেন। এখানে পড়াবার জন্যে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির ব্রিটিশ ওরিয়েন্টালবাদী সদস্য এবং সেখানকার দেশিয় জ্ঞানী সহযোগীদের বেছে নিলেন। পড়ানো ছাড়াও ছাত্রদের কোম্পানি শাসিত এলাকাগুলিতে মহাবিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের জন্যে নতুন ধরণের পুথি জোগাড়েও উতসাহ দিলেন ওয়েলেসলি। ১৮০৫ সালের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার ভাষার প্রমিতিকরণ এবং ব্যকরণের কেন্দ্রিকরণের কাজ সম্পন্ন হল। বিপুল এলাকায় পড়াবার জন্যে ভাষার প্রমিতিকরণ জরুরি ছিল।
প্রথম তিন বছরে ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার বিদ্যালয়ের জন্যে ব্যয় করলেন যা দুটি প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে বরাদ্দ মোট ব্যয়ের সঙ্গে তুলনীয়। প্রথম বছর খরচ হল ৭৮৭৫০ টাকা। ব্রিটিশ শিক্ষকেরা মাইনে পেতেন ৩২০ পাউন্ড/মাসে এবং দেশিয় সহযোগীরা পেতেন ইওরোপিয় শিক্ষকদের তুলনায় একদশমাংস থেকে এক পঞ্চাশাংস।
No comments:
Post a Comment