Saturday, March 17, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা১ - ঔপনিবেশিকতাবাদের জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক - সাম্রাজ্যের মন ও মান - বারনার্ড কোহন

আধুনিকপূর্ব রাষ্ট্রে, বিশেষ করে ইওরোপ বা অন্যান্য যায়গাতেই ক্ষমতার সঙ্গে জাঁকজমকের নাটক জড়িয়ে থাকত যেমন মিছিল, রাজাদের প্রবেশ, সিংহাসনে বসা, শ্মশানযাত্রা, ইত্যাদি যার মাধ্যমে শাসক মনে করিয়ে দিত যে প্রজারা শাসিত হচ্ছে। জাঁকজমকের নাটকগুলি মধ্যস্থতা করত পুরোহিত, ঐতিহাসিক, কলাকুশলী এবং কারিগরেরা এবং এরা এ বিষয়ের নানান ধরণের জ্ঞান বহন করতেন।
অষ্টাদশ শতের পর ইওরোপিয় রাষ্ট্রগুলি থেকে জাঁকজমকের নাটক ছাড়াও অন্যান্য বিষয়েও তাদের ক্ষমতার প্রদর্শন করতে থাকল যেমন মান্যতা দেওয়া(অফিসিয়েটিং) মধ্যেও তারা তাদের ক্ষমতা এবং এলাকা বাড়াতে শুরু করল। তারা ক্ষেত্রের সংজ্ঞা এবং চরিত্র নির্ধারণ করে তাদের ক্ষমতার পরিসর(স্পেস) বাড়াল, পরিসরকে ভাগ করল ব্যক্তিগত এবং জন এই দুই ভাগে; সম্পত্তি বিক্রির চরিত্র নির্ধারণ করে; জনগনের শ্রেণী ও চরিত্র নির্ধারণ করে; শিশু জন্মের নথিকরণের অধিকার, বিবাহ, মৃত্যু নথিকরণের অধিকার ধর্মীয় সংগঠনের থেকে রাষ্ট্রের আওতায় নিয়ে এসে; ভাষা আর অক্ষরের প্রমিতিকরণের মধ্যে দিয়ে। রাষ্ট্র কিছু কাজকর্মকে আইনি-বেআইনিতে ভাগ করে দিয়ে কারোর পৃষ্ঠপোষণা করল, কাউকে অসামাজিক দাগিয়ে দিল। জনশিক্ষা আর তার সঙ্গে যুক্ত নানান আচার আচরণের পরিসর যত বৃদ্ধির পেতে থাকলে, সরকারিভাবে কোনটা করা দরকার, কোনটা অবাঞ্ছনীয় তাও বলে দেওয়া হল। বিদ্যালয় হয়ে উঠল সভ্য করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার যার মাধ্যমে নৈতিক এবং উৎপাদনশীল নাগরিক উৎপাদিত হতে শুরু করে। শেষমেশ ইতিহাস এলাকা এবং সমাজের প্রতিমূর্তি হল জাতি রাষ্ট্র।
জাতি রাষ্ট্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নির্ধারিত হল অতীত বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ এবং উপস্থাপনের মাধ্যমে। নথিকরণের ফলে যে বিপুল বিস্তৃত পরিমান সংখ্যা পাওয়াগেল তাকে বিশ্লেষণ করে শাসনের পদ্ধতি নির্ধারণ করা হল। বিভিন্ন কমিশনের সমীক্ষা এবং তদন্ত, আর্থ, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা, অপকর্ম, শিক্ষা, যানবাহন, কৃষি এবং শিল্পের সন্মগে জুড়ে থাকা সংখ্যাতত্ত্ব সংকলন, সংরক্ষণ, এবং প্রকাশ – এই বিপুল তথ্য ব্যাখ্যা(এক্সিজেটিক্যাল) এবং হার্মিনিউটিক্যাল দক্ষতা ব্যবহার করা হল যেমন করে প্রাচ্যি সংস্কৃত মূলপাঠগুলি পড়া হল।
গ্রেট ব্রিটেনে রাষ্ট্রের উদ্ভবকে একটি কৃষ্টি প্রকল্প হিসেবে দ্যাখা হল, এবং একে সাম্রাজ্য ক্ষমতার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া গেল এবং ভারতকে গুরুত্বপূর্ণতম উপনিবেশ হিসেবে দেখার চেষ্টা হল। ভারতীয় শাসকেরা যে শুধুই ব্রিটিশই ছিল না, দুদেশেই রাষ্ট্র বিকাশের প্রকল্প নথিকরণ, স্বীকারীকরণ ব্যখ্যাকরণ নিয়ন্ত্রণ এবং তার জন্যে যে সব সংগঠন, অভিজ্ঞতা এবং প্রথা সমূহ তৈরি হল ভারতে এবং সেগুলি লন্ডনে প্রতিস্থাপিত হল এবং উল্টোটাও ঘটল। আমরা দেখব মেট্রোপলিটনের বহু নথি ভারত উপনিবেশেই বিকশিত হয়েছে(দিন দুয়েক আগে ভারতে ভূসমীক্ষা সংক্রান্ত কপিল রাজের প্রবন্ধ অনুবাদ দৃষ্টব্য)।



(বার্নাড কোহনএর, কলোনিয়ালিজম এন্ড ইটস ফর্মস অব নলেজ, দ্য ব্রিটিশ ইন ইন্ডিয়া থেকে)

No comments: