Thursday, March 1, 2018

উপনিবেশ বিরোধী চর্চা - ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইতিহাস২ - ভারতে পশ্চিমি লুঠেরা ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানের ইতিহাস

পলাশীর পর বাংলার ব্যবসা দখল, শূদ্রদের বিশ্ব ব্যবসা কাঠামো থেকে বিচ্যুতি ঘটিয়ে সমৃদ্ধ বাংলার শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থা ধ্বংস করে কাঁচামাল লুণ্ঠনের ক্ষেত্র বানানোর পর্ব পা দিল বাঙালি-বিহারীদের গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালির চির অধমর্ণতায় - ব্রিটেনে লুঠেরা কর্পোরেট শিল্পবিপ্লবের সাফল্যে। গণহত্যার দুদশক পরে স্থায়ী এবং পরিকল্পিতভাবে কৃষি লুঠে মন দিল কর্পোরেট-সাম্রাজ্য চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে।
এবারে লুঠের নবব্যপ্তি বাংলা ছেড়ে ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়তে শুরু করল। এখন শিল্প বিপ্লবে নিত্য নতুন গবেষণাগারভিত্তিক শ্রম প্রতিস্থাপনীয় লুঠেরা খুনি অত্যাচারী প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রয়োজন আরও আরও আরও ভর্তুকি।
ততদিনে লুঠেরা ভূতত্ত্ব(কিভাবে জমির তলার সম্পদ আরও আরও বেশি করে চিহ্নিত করে, আরও আরও বেশি করে তুলে প্রায় অপ্রয়োজনীয় নানান পণ্য একটি দুটি বিশালকায় কারখানায় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া যায় যারা বিশ্বে), প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিবিদ্যার বিষয়ক জ্ঞানচর্চা তখনও অতটা বিকশিত হয় নি। তাই সব থেকে বেশি প্রয়োজন আরও আরও বেশি রাজস্ব উদ্ধার। তাই প্রয়োজন হল ভূসমীক্ষা। আমরা দেখিয়েছি কিভাবে জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় ব্রিটিশদের আরও রাজস্ব বাড়াতে জমি সমীক্ষায় উৎসাহিত করেছিলেন এবং নিজে লুকোনো জমি খুঁজে খুঁজে বার করতেন। তার প্রতিদান তিনি পেয়েছেন একবার দেউলিয়া হয়ে নতুন করে জমিদারি ফিরে পেয়ে।
বাংলায় জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়দের লুকোনো জমি উদ্ধারের আগেই মহীশূরে ক্ষমতা হাতে পেয়ে কলিন ম্যাকেঞ্জিকে দিয়ে ১৭৯৯ থেকে ১৮১০ পর্যন্ত সমীক্ষা করায়। ফ্রান্সিস বুকাননকে দিয়ে সমীক্ষা করায় মাদ্রাজ থেকে মহীশূর হয়ে কানাড়ায় ১৮০০-০১ সালে। আবার বুকাননকে দিয়েই ১৮০৭-১৪ পর্যন্ত বাংলা বিহারে।
যদিও রায় ডেসমন্ড বলছেন কোম্পানি কিভাবে তার লিডেনহল স্ট্রিটের সদরদপ্তরে লাভহীন লাইব্রেরি চালাতেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল বিজ্ঞানের প্রতি তাদের ভালবাসা। কিন্তু এটাও বলা দরকার কোম্পানি এতই বিজ্ঞান মনস্ক ছিল যে, তারা ডারুইনকে, জোসেফ ডালটনকে, চার্লস লায়েলকে, জোসেফ ব্যাঙ্কসকে জ্ঞানচর্চায় ভারতে আসতে দেয় নি।
ভারতজুড়ে ব্রিটিশ দখলদারি ছড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম পথিকৃৎ গভর্নর জেনারেল ডালহৌসি ১৮০৪ সালে বললেন, 'to facilitate and promote all enquiries which may be calculated to enlarge the boundaries of general science’w as a duty ‘imposed on the British Government in India by its present exalted situation'। প্রকৃতিদ বলে বিবেচিত ফ্রান্সিস বুকাননের জোবনী আলোচনা করতে গিয়ে Marika Vicziany বলছেন, তার সময়ে হওয়া ভারত সমীক্ষার আর্থনৈতিক গুরুত্ব ওয়েলেসলি জানতেন এবং বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি তাই serve more narrowly utilitarian ends।
১৭৮৭ সালে কোম্পানির পরামর্শ না নিয়েই লন্ডনের বোর্ড অব ট্রেড পোলিশ উদ্ভিদবিদ আন্তন হোভকে মারাঠা নিয়ন্ত্রিত গুজরাটের তুলো(ততদিনে বাংলায় তুলো চাষ চেষের পথে গিয়েছে, ভরসা গুজরাট) আর বস্ত্র শিল্প নিয়ে সমীক্ষা করতে পাঠায়। হোভ গোপনে সে অঞ্চলের কৃষি, অষুধ, অন্যান্য বৈজ্ঞানিক এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ে তথ্য এবং নানা গাছ গাছালি ইত্যাদিরনমুনা জোগাড় করে লন্ডনে নিয়ে যান এবং কিউএর মোটানিক বাগানেলাগানোর ব্যবস্থা করেন। এর পিছনে সাম্রাজ্যের জ্ঞানচুরুইর ধারাবাহিকতা, লুউঠের লোভ উভয়েউই স্পষ্ট।
(ক্রমশঃ)

No comments: