ইতিমধ্যে এডওয়ার্ড জেনার ১৭৭০ সালে গোবসন্ত হওয়া একজন গোপালিকার মাধ্যমে বুঝলেন যে যার গোবসন্ত হয়েছে তাঁর কোন দিন গুটি বসন্ত হবে না। এই টিকাকরণকর্মটি তুর্কি আর গ্রামীন ইওরোপ বহু আগেই করে ফেলেছিল। ১৭৯৬ সালে তিনি আট বছরের জেমস ফিপসকে গোবসন্তের টিকা দেন। ফিপস ৮০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, এবং তাঁকে কুড়িবার টিকা দেওয়া হয় সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করতে। টিকাকরণ লন্ডনে শুরু হয় ১৭৯৯ সালে। ভ্যারিওলেশন ১৮৪০ সালে আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাংলা তথা উত্তর ভারতে গুটি বসন্তের টিকা সহজে এলেও, সেটি দক্ষিণ ভারতে সহজে পৌঁছতে পারে নি। ১৭৮৭ সালে ত্রিচিনাপল্লিতে ২০ ইওরোপিয় সেনাকে শল্যবিদ নিকোল মেইন ডিমসডেল পদ্ধতি মেনে টিকা দেন। তাঁর পরে এই পদ্ধতিটি সেনা বাহিনীতে চালু করা হয়। তারপরে দোআঁশলা আর ইওরোপিয় বালকদের দেওয়া হতে থাকে। ১৮০০র পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবিত করে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়া্র চেষ্টা করে উপনিবেশ প্রশাসন। প্রথম দিকে উত্তরভারতীয় ব্রাহ্মণদের দেওয়া হতে থাকে তারপরে অন্যান্যদের। ১৮০২ সালেই স্থলপথে গোবসন্তের টিকা ভিয়েনা, কন্সটান্টিনোপল বাগদাদ হয়ে বসরায় এসে জাহাজে চেপে বম্বেয় পৌঁছয়। বাদদাদের পরে এটি নিয়ে আসেন টিকাকৃত ব্যক্তিই। ১৮০২ সালে বম্বেতে প্রথম সফল টিকা দেওয়া হয় এক দোয়াঁশলা চাকরের সাড়ে তিন বছরের কন্যাকে। ডাক্তার ছিলেন হেলেনাস স্কট, যিনি লন্ডনে দক্ষিণ ভারতের উজের নমুনা নিয়ে যান। পরের ১৯টি টিকা বিফল হয়। এরপরে ব্রিটিশ ভারতে মূলত ইওরোপিয় শিশুদের টিকা দেওয়া হতে থাকে। ১৮০৩ সালে শুধু মাত্র কয়েকজন টিকাকার উতসাহীর ওপর নির্ভরতা দূর করতে একটি টিকাকরণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করা হয়।
উপনিবেশ সরকার এর পর থেকে দেশিয় চিকিতসকদের ভ্যারিওলেশন কর্মকে উড়িয়ে দিয়ে ব্রিটিশ টিকা করণের পদ্ধতি প্রচার করতে থাকে। লন্ডনে কাজটা সহজ হয় নি, ভারতে আরও জটিল হয়ে দাঁড়াল। কারণ ভ্যারিওলেশন মানুষের মনে ঢুকে বসে ছিল বহুকালের প্রথা হিসেবে। এবং বিদেশি প্রশাসকের আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যকে জনগণ বিশ্বাসও করত না, তবু সরকার চাইত ব্রিটিশ মহানুভবতায় যে সুন্দর টিকাটি আবিষ্কার হয়েছে সেই ফল যেন ভারতীয় জনগণ পায়। প্রথমের দিকে প্রত্যেক গ্রামে প্রত্যেককেই ভ্যারিওলেট করা হত। বাইরের জগতে তাদের গতায়াত কম ছিল। পরে যখন কলকাতার মত বড় শহরে টিকা করণ শুরু হল তখন যাদের টিকা দেওয়া হল না তাদের রোগ হওয়ার আশংকা বেড়ে গেল বহুগুণ।
১৮০৫ সালে সরকারিভাবে স্বীকার করা হয় যে ব্রাহ্মণ টিকাকারেরা এই পশ্চিমি টিকাকরণের বিরোধিতা করে। স্বীকার করা হল হলওয়েলের সময়ে তারা যতটা বিনীত ছিল এখন তাদের গলা বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে কলকাতার আশেপাশের অঞ্চলের। সরকার বলল দেশি চিকিৎসকেরা প্রত্যেক বছর কয়েকশ মানুষকে বসন্তের টিকা দিত, এবং তাদের থেকে কাঞ্চনমূল্য নিত। কিন্তু তার বাইরে বিপুল সংখ্যক মানুষ পড়ে থাকত, যাদের টিকা হত না। তার ফলে কৃত্রিমভাবে খুব তাড়াতাড়ি বিপুল এলাকায় বসন্ত রোগ ছড়াতে থাকল। এই রোগ মহামারীর আকার ধরল দশ পনের বছর অন্তর অন্তর যদিও হলওয়েল দাবি করেছেন এটা ছড়াচ্ছে সাত বছর অন্তর - ‘thus artificially produce an epidemic, which by its frequent recurrence, proves much more destructive to the community than if inoculation had been entirely abolished, and the casual disease, left to the chance of appearing at the distant periods above mentioned।
RAJESH KOCHHAR এর Smallpox in the modern scientific and colonial contexts 1721–1840
এবং
আশিস নন্দী সম্পাদিত SCIENCE, HEGEMONY & VIOLENCE A REQUIEM FOR MODERNITY থেকে
No comments:
Post a Comment