লক্ষ্ণৌতে নবাব আসাফুদ্দৌল্লার সঙ্গে মিটমাট হয়ে যায়
তাফাজ্জুলের। ১৭৮৮তে তাঁকে কলকাতায় ভকিল/উকিল হিসেবে অযোধ্যার স্বার্থ দেখার কাজে
পাঠানো হয়। কপিল রাজ লিখেছেন কিভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার ইতিহাসে স্বে সময় বিপুল
দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তাফাজ্জুল এই জটিল কর্মটি সমাধান করেছিলেন। ততদিনে
সিন্ধিয়ার সঙ্গে শালবাই চুক্তির প্রেক্ষিত পাল্টে গিয়েছে। ওয়েস্টমনিস্টারে এডমন্ড
বার্কের বিষবাক্য সামলাতে কোম্পানি হেস্টিংসের সঙ্গে ব্রুম আর এন্ডারসনের মত বেশ
কিছু তাফাজ্জুলের বন্ধুস্থানীয় মানুষ চলে গিয়েছেন লন্ডনে। হেস্টিংসের দেশ ছাড়ার এক
বছর আগে জ্ঞান লুঠকে সাংগঠনিক রূপ আর ঔপনিবেশিকতার নিগড় প্রাচ্যবাদেরর মধ্যে
মিলিয়ে মিশিয়ে দিতে তৈরি হয়ে গিয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি – যার ঘোষিত উদ্দেশ্য history and
antiquities, natural productions, arts, sciences and literature of Asia বিষয়ে বিতর্ক, আদতে জ্ঞানলুঠ।
ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার অভ্যেস করা তাফাজ্জুল ব্যস্তসমস্ত
কলকাতার ইন্দো-পার্সি ব্রিটিশ দালালদের সঙ্গে নতুন করে বন্ধুত্ব পাতালেন। তবে সে
সময়ে তাঁর মূল কাজ ছিল রাজসভায় অযোধ্যা রাজ্যের হয়ে দালালি করা, এবং কোম্পানি আর
অযোধ্যার প্রশাসনের মধ্যে নাজুক সম্পর্ককে চারিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি গঙ্গা বাহনে
অযোধ্যার উদ্দেশ্যে কামান এবং অস্ত্রশস্ত্র পাঠালেন আর কলকাতার খবর কাগজে
লক্ষ্ণৌএর শাসন সম্বন্ধে কুরুচিকর মন্ত্রব্যের প্রতিবাদ করতে থাকেন। এশিয়াটিক
সোসাইটির প্রধান উইলিয়াম জোনস এবং জোনসের উত্তরাধিকারী গভর্নর জেনারেল জন শোর তাকে
গোপনে সাম্রাজ্যের নানান খবরাখবর দিতেন। এছাড়াও উকিল হিসেবে তিনি দক্ষিণের
রসাপাগলা আর অন্যান্য অভিজাত সমাজের প্রখ্যাতদের, বিশেষ করে প্রাক্তন লক্ষ্ণৌএর
রেসিডেন্ট রিচার্ড জনসন এবং আঙ্কিক, শিক্ষক এবং জ্যোতির্বিদ রুবেন বারোর মত
মানুষের সঙ্গেও ওঠাবসা করতেন।
তাফাজ্জুল, সকালে উঠে নানান ইসলামি রীতিনীতি পালন করে
ইসলামি ঐতিহ্য, দর্শন এবং অঙ্ক শিক্ষা দিতেন, দুপুরে ব্রিটিশারদের সঙ্গে আহার
সারতেন, রাতে ইসলামি আইন নিয়ে গল্পগুজব করতেন এবং মাঝেমধ্যে ভাষণ দিতেন। ইংরেজিতে
সড়গড় হতে তিনি হিস্ট্রি অব ইংলন্ড পড়া সুরু করেন, কিন্তু অনতিবিলম্বে সে আশা ছেড়ে
দেন। ব্লেন, এন্ডারসনকে বলছেন তাফাজ্জুল, ‘generally spends an hour or two with me every other day in reading English
books … those on Astronomy he is
most fond of … you may send him a few books in that science or in the
higher branches of Mathematics’।
তিনি বারোর মাধ্যমে পাওয়া ১৭৬৯ সালে লেখা উইয়ারসাইডের
আঙ্কিক উইলিয়াম এমারসনের অঙ্ক বই মেকানিক্স নিজে কাজ শুরু করেন। টমাস সিম্পসনের
ট্রিটি অব এলজেব্রা নিয়েও পড়াশোনা করেন। এছাড়াও ১৭০৭এর ফরাসী অঙ্কবিদ গুলিয়াম দি ল’হস্পিটালের
শঙ্কু ব্যবচ্ছেদ নিয়েও গবেষণা করেন। সিম্পসন আর ল’হস্পিটালের তত্ত্ব তাকে এডমন্ড হ্যালি
অনুবাদে আজেকজান্দ্রিয়ার এপলোনিয়াসের দি সেকডন রেটিওনিসে প্রবেশ করতে সাহায্য করে,
যা আদতে দুটি তলে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে দুটি স্থির রেখা কাটার পদ্ধতি বর্ণনা। এই
আরবি পুঁথিটি সপ্তদশ শতে অক্সফোর্ডে পাওয়া যায়। হ্যালির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন নিউটন
নিজে। হ্যালির আরবি বিষয়ে দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল এবং অনেকেই এই অনুবাদের পিছনে
জোন্সের দক্ষতা দেখেছেন। সে সময় লন্ডন এবং কলকাতায় একসঙ্গে এই কাজ হচ্ছিল।
তাফাজ্জুল এটির অনুবাদ করেন, যেহেতু তাঁর বাল্যাবস্থায় লক্ষ্ণৌতে পড়ার সময়
নাসিরআলদিনতুসির লেখা আলেকজান্দ্রিয়া অঙ্ক বিষয়ে বীজগনিত, জ্যামিতি এবং
এপোলনিয়াসের শঙ্কু বিষয়ে পাঠ নেওয়া ছিল। এই অনুবাদ ভবিষ্যতের ইওরোপিয় অঙ্কবিদ্যায়
বিপুল প্রভাব ফেলবে। বারো, জন শোরকে তাফাজ্জুলের কাজ নিয়ে বলবেন, তাফাজ্জুল
এপোলোনিয়াসের কাজটি নিয়ে এখন ব্যস্ত। এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট - প্রথমে এটি গ্রিক থেকে
আরবিতে আনুদিত হয়, তারপরে মূল গ্রিকটির কোন খোজ পাওয়া যায় নি। এটি আরবি থেকে ল্যাটিকে
অনুদিত হয়, পাওয়া যায় বদলিয়ান লাইব্রেরিতে। এশিয়াতেও আরবি অনুবাদটা এখন আর নেই।
আমি ল্যাটিন থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে। তাফাজ্জুল এটিকে ইংরেজিতে অনুবাদ করছে -- He is now employed in translating Apollonius De sectione rationis: the fate of this
work is singular, it was translated from Greek into Arabic, and the Greek
original is lost; it was afterwards translated from Arabic into Latin,
from an old manuscript in the Bodleian library. The Arabic of it
is now lost in Asia. I translated the Latin version into English, and from
the English Toffuzel Hussein is now rendering it into Arabic again।
No comments:
Post a Comment